ধরো কলেজের রঙিন দিনগুলোতে তোমার একটি
মেয়েকে ভালো লেগে গেল। তারপর শুরু হলো তাকে নিয়ে রঙিন সব স্বপ্ন দেখা। বলি,
একটু দাঁড়াও। কারণ তোমার মনের সঙ্গে পছন্দের মানুষের মনটা তো নাও মিলতে
পারে। তখন নিশ্চয়ই খুব বিশ্রী ব্যাপার হবে। তাই প্রথম থেকেই তার
মন-মানসিকতা সম্পর্কে একটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করো। ভাবছ উপায় কী? কথা
বলাতে যে অনেক ঝামেলা! ভয় নেই, কারণ এমন একটা উপায় আছে যাতে করে শুধু
মানুষের মুখ এবং শরীরের বিভিন্ন বাহ্যিক অঙ্গ দেখেও তার মানসিকতা সম্পর্কে
আন্দাজ করা যায়! আশ্চর্য লাগছে তো? কিন্তু এ রকম একটা বিদ্যা সত্যিই আছে
এবং সেটা রীতিমতো জনপ্রিয়ও, নাম ফিজিওনমি।
ফিজিওনমির চেহারাফিজিওনমির ব্যাপারটার প্রাচীনকাল থেকেই চল ছিল এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। প্রথম এটির চর্চা শুরু হয় ভারতে, তারপর সেটা ছড়িয়ে পড়ে ইরান, মস্কো আর ফ্রান্সে। তখন অবশ্য সেভাবে এটা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। কিন্তু ফিজিওনমির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় বিভিন্ন দেশের আগ্রহী মানুষেরা এটা নিয়ে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়ে চেহারা দেখে মানুষ চেনার এই কায়দা।
মুখের মায়ায়
ফিজিওনমি যদিও মানুষের বাইরের সম্পূর্ণ অবয়ব দেখে তাকে বিশ্লেষণ করার বিদ্যা, তবে এর মধ্যে মুখমণ্ডলের গড়ন একটা প্রধান ভূমিকা পালন করে। ফিজিওনমিতে বলে, যাদের মুখ লম্বা হয় তারা সাধারণত উচ্চতাতেও বেশ বড় হয়। তাদের মুখে মেদের চেয়ে হাড়ই বেশি থাকে। এই লম্বা মুখের লোকজন বাস্তববাদী, ধীরস্থির এবং কর্মঠ হয়। তবে এই বিদ্যামতে এরা নাকি স্বার্থপর টাইপের হয়। অর্থাৎ কর্মঠ হয়ে উপার্জিত সব অর্থ কেবল নিজের কাজেই লাগায়। এ ধরনের মুখের অধিকারীরা বেশ আবেগপ্রবণও হয়। কখনো পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হলে খুবই হতাশায় ভুগতে থাকে। তবে তাদের খাবার ব্যাপারে বেশ উৎসাহ থাকে। সামনে যা পায় তাই গপাগপ! আর সবচেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হয় গোলমুখো মানুষজন ।
বাড়ির অশান্তি, বন্ধুর বিপদ কিংবা পাড়ার রাস্তা মেরামত আন্দোলন-সবখানেই এরা থাকে সোচ্চার। তাই বন্ধুমহলে এদের জনপ্রিয়তাও থাকে আকাশছোঁয়া। এসব মানুষের প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের নিয়ে বেশ সুখে থাকে। এদের সমস্যা হলো কোথাও সামান্য সমস্যা দেখলেই এরা বিচলিত হয়ে পড়ে আর এসব মানুষ নিজেদের একদমই সময় দেয় না। তাই গোল মুখের বন্ধুরা, একটু সচেতন হয়ে যাও। এরপর বলা যায় চৌকো মুখের মানুষদের কথা। আদতে এরা খেলোয়াড়ি মনোভাবের। চেহারাতেও সেই পেশিবহুল ভাবটা উপস্থিত। এরা কাজেকর্মে খুব চটপটে আর কথাবার্তায় খুব সোজাসাপ্টা। তাই মাঝেমধ্যেই এর-ওর সঙ্গে ঝগড়াঝাটি বাধিয়ে বসে। তাছাড়া এদের মধ্যে লাজুক ভাবটা একদমই নেই। তাই প্রেমের ব্যাপারটা বেশ তাড়াতাড়িই শুরু করতে পারে। সবশেষে বলা যাক ত্রিকোণ মুখের মানুষগুলোর কথা। এরা দেখতে রোগা রোগা হলেও ভেতরে রয়েছে যথেষ্ট বুদ্ধি আর চিন্তা-ভাবনার সামঞ্জস্য। এদের শরীরে শক্তি কম থাকলেও গলার স্বর বেশ উঁচুই হয়। সুতরাং তারা জোরে কথা বলে!
কাণ্ড যত উচ্চতা, চুল নিয়ে
উচ্চতা আর চুল নিয়ে ছেলেমেয়ে কারোরই চিন্তার শেষ নেই। এই দুটোর পার্থক্য দেখে ফিজিওনমি অনুসারে অনেক কিছু বলে দেয়া সম্ভব। আর এসব ব্যাপারে ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকায় ব্যাপারটা হয়ে ওঠে বেশ মজারও। যেমন লম্বা ছেলেদের সবাই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আর আকর্ষণীয় ভাবলেও মেয়েদের ব্যাপারটা হয় একেবারে উল্টো। খুব লম্বা মেয়েদের ঠ্যাঙ্গা বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। তবে উচ্চতায় খাটো মেয়েরা জীবনে খুব আশাবাদী টাইপের হয়, আর এরা ভীষণ গানভক্ত হয়। মাঝামাঝি উচ্চতার মেয়েরা সবার কাছে লক্ষ্মী বলে পরিচিতি পায়। উচ্চতার পর আর একটা চোখে পড়ার জিনিস হলো চুল। যেসব মেয়ের প্রকৃতিগতভাবে চুল ঘাড় পর্যন্ত লম্বা হয় তারা নাকি হিংসুটে আর অহঙ্কারী স্বভাবের হয়। লালচুলোরা হয় রগচটা এবং কুচক্রী মনোভাবের। তবে কালো আর কোঁকড়া চুলের অধিকারিণীরা সৌভাগ্যবতী আর সম্পদশালিনী হয়ে থাকে। এর ঠিক উল্টোটা হয় যাদের চুল থাকে রুক্ষ, পাতলা এবং খাটো। কিন্তু জয়জয়কার নরম, সিল্কি, ঘন কালো এবং লম্বা চুলের মেয়েদের। পৃথিবীতে এরা সৌন্দর্য আর সৌভাগ্যের প্রতীক হয়ে আসে! ছেলেদের মধ্যেও যাদের চুল ঘন কালো এবং পাতলা তারা মহৎ গুণাবলীর অধিকারী হয়! যাদের চুলের রঙ হালকা লালচে থাকে তারা মোটুমটি সুখী জীবন-যাপন করে। তবে যাদের চুলের রঙ পুরোপুরি লাল তাদের অনেকেই কর্মজীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পায়। আবার ফিজিওনমি মতে, পাতলা, রুক্ষ চুল সবসময় মানুষের দরিদ্রতা এবং অসুস্থতাকে প্রমাণ করে।
কপালের নাম গোপাল
লম্বা আর চওড়া কপাল যেসব মেয়ের থাকে তাদের জীবনে বারবার দুর্ভাগা এসে ভর করে। কিন্তু যাদের কপালের গড়ন হয় অর্ধচন্দ্রাকৃতির আর মাথার চুলগুলো থাকে আনুভূমিক তাদের সৌভাগ্যবতী বলে ধরে নেয়া হয়। যাদের মাথার সমমুখভাগ থাকে সোজা তারাও এই দলের অন্তর্ভুক্ত। আর মাথা যদি একটু উঁচু-নিচু মানে বাঁকা টাইপ হয় তবে তাদের জীবন সুখের হয়! কিন্তু যাদের মাথা বৃত্তের মতো গোলাকার তাদের অনেক দুঃখ পোহাতে হয়। কিন্তু কোনো ছেলের যদি গোলাকার মোটা মাথা থাকে তবে সে কর্মক্ষেত্রে ভালো প্রশাসক হয়। ছেলেদের মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল মানেই বুদ্ধি আর নানা গুণের সমন্বয়। আর যদি মাথা লম্বার চেয়ে চওড়ায় বেশি হয় কিংবা মাথা ছোট হয় তবে তাদের জীবনে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। যাদের কপাল চওড়া থাকে তারা পরবর্তী জীবনে হয় বুদ্ধিমান এবং শিক্ষিত। আর ছোট কপালের অধিকারীরা বেশ গরিব হয় এবং তারা নাকি বেশিদিন বাঁচে না।
নানা রকম ব্যাপার-স্যাপার
যে মেয়ের চোখ বড়, চওড়া এবং লাল বহিরাবরণের মধ্যে কালো মণি সে সৌভাগ্যবতী এবং সমাজে নেতৃত্ব দেয়। আর এর উল্টো বৈশিষ্ট্যের চোখের অধিকারিণীরা জীবন কাটায় নানা যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। কালো এবং গোল চোখের মেয়েরা ছেলেদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়। কিন্তু এদিকে আবার লাল চোখের ছেলেরা সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয় হয়। যাদের চোখটা কোটরের বেশ গভীরে থাকে তারা খুবই দুষ্টু হয়। যেসব ছেলের ভ্রূ ধনুকের মতো বাঁকা হয় তারা সম্পদশালী হয় এবং তাদের জীবন বেশ আরামে কাটে। আর যাদের ভ্রূ মাছের মতো দেখতে হয় তাদের মধ্যে চুরির প্রবণতা দেখা যায়! যদি ভ্রূতে চুল কম থাকে তবে সে হয় গরিব আর দুর্ভাগা। আর মেয়েদের ক্ষেত্রেও ধনুকের মতো বাঁকা যাদের ভ্রূ তারা অনেক গুণে গুণান্বিত থাকে। আর সৌন্দর্য তো আছেই। এবার আসা যাক নাক প্রসঙ্গে। যে মেয়ের নাক তোতাপাখির মতো ঝোলানো সে চালাক-চতুর আর পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়। ছেলেদের নাকের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি। তবে যে ছেলের নাক খুব বেশি লম্বা সে নাকি নির্লজ্জ হয়! আর নাক ছোট হলে হয় ধর্মপরায়ণ, মহৎপ্রাণ, নিপাট ভালো মানুষ। আর কানের ব্যাপার বললে নরম, লম্বা কানের মেয়েরা জীবনকে ভালোভাবে উপভোগ করে। কিন্তু লম্বা কানওয়ালা ছেলেরা খুব কমই বুদ্ধিমান হয়। তবে ছোট কানওয়ালা ছেলেরা বোকা হয়। যেসব ছেলের কান পাতলা গড়নের হয় তারা নেতা হয়।
মিষ্টি হাসির রহস্য
ফিজিওনমিতে চিবুক, ঠোঁট, দাঁত, জিহ্বা আর গলার স্বর নিয়েও আছে মজার মজার সব তথ্য। যেসব মেয়ের চিবুকের রঙ লাল হয় তাদের সবাই খুব পছন্দ করে। আর উঁচু চিবুকের ছেলেরা হয় স্বার্থপর। চিবুকের পরে আসুক ঠোঁটের কথা। আর মেয়েদের ঠোঁট নিয়ে যে কত কথা প্রচলিত তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যদি কোনো মেয়ের ঠোঁট হয় রক্তিম, পাতলা, নরম এবং দুই ভাগ সমান্তরাল গড়নের তবে সে খুব আকর্ষণীয় হয় ছেলেদের কাছে। আর বিয়ের পর তারা স্বামীর অনেক ভালোবাসা পায়। পাতলা ঠোঁটের ছেলেরাও বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু ঠোঁট লম্বা হলে ছেলেদের দুর্ভাগা থাকে পদে পদে। দুর্ভাগা সেসব মেয়েরও যাদের দাঁতের মধ্যে ফাঁক থাকে। তবে তার জিহ্বার রঙ যদি লাল হয় তাহলে কিন্তু সৌভাগ্য ফেরার সম্ভাবনা আছে।
আপাদমস্তক
যেসব মেয়ের বাহু সোজাসুজি, নরম, চুলহীন এবং সুগঠিত থাকে তারা প্রায় সব কাজেই ভালো করে। কিন্তু যাদের হাত খুব বেশি লম্বা তাদের অবশ্য চিন্তার কারণ আছে। তবে হাতের আঙুল যদি হয় লম্বা, পাতলা আর নরম তাহলে সৌভাগ্য তাকে হাতছানিতে ডাকছে। একথা তাদের জন্যও প্রযোজ্য যাদের পায়ের পাতা হাঁটার সময় মাটি সপর্শ করে। কিন্তু হাঁটু যদি লম্বা আর শক্ত হয় তবে ধরে নিতে হবে সে দরিদ্র! তবে ফিজিওনমি ঘেঁটে ছেলেদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষণের আগে
ফিজিওনমি ব্যাপারটা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরো অনেক বিষয় নিয়েই বিশ্লেষণ চলে এ বিদ্যায়। ফিজিওনমির জন্য তো মেয়েদের শরীরকেই ভাগ করা হয় ৩২ ভাগে! কাজেই বুঝতেই পারছো আরো কত কী বাকি থেকে গেল। তবে একটা কথা বলে দেয়া দরকার, ফিজিওনমি ব্যাপারটা যে সবসময় পুরোপুরি মিলে যাবে তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো একটু এদিক-সেদিক তো হতেই পারে। জেনে তো নিলে ফিজিওনমির মজার মজার তথ্য। সুতরাং এসব কিছুই মিলিয়ে নাও তোমাদের পরিচিত-অপরিচিত মানুষগুলোর সঙ্গে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার নিজের সঙ্গেও।
No comments:
Post a Comment