Sunday, August 5, 2012

বুদ্ধি বাড়াবেন কী করে



বুদ্ধি নিতান্ত কম ছিল বলেই না কালিদাস যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন! কিংবা আইনস্টাইন কলেজের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন! অথবা রবীন্দ্রনাথ স্কুলের গণ্ডিই পেরোতে পারলেন না! এরা সবাই মনীষী বলে এখন দিব্যি লুটছেন, কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের বেলায় এরকম ঘটলে যে আমরা কী করতাম ভেবে দেখেছেন? হয় বলব তারা বোকা কিংবা তাদের বোধবুদ্ধি এক্কেবারেই নেই, তাই তো? ঠিক তাই! তবে মন্তব্যটা হবে আংশিক সত্যি। কারণ বুদ্ধি কোনো একটা নিদিষ্ট বিষয় নয় যা কিনা কয়েকটি বিশেষ আচরণে গণ্ডিবদ্ধ করা যায়। যেমন কালিদাসের বাস্তব বুদ্ধি ছিল না বলেই তিনি যে ডালে বসেছিলেন সেই ডালই কাটছিলেন! কে জানে তখন হয়তো তিনি গাছের ওপর বসে মেঘের কাছাকাছি গিয়ে সে দিকে তাকিয়ে তার আগামী কাব্যের ভাবনা কুড়োচ্ছিলেন।
যে মানুষটা থিওরি অব রেলেটিভিটি আবিষকার করেছিলেন, তার মগজ হয়তো প্রাত্যহিক পড়াশোনার জন্য তৈরি ছিল না! অন্যদিকে বেঙ্গল রেনেসাঁসের ফার্স্ট ফ্যামিলি ঠাকুর পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলেও তার মনীষার স্ফূরণ বিচ্ছুরিত হতে শুরু করেছিল নেহাতই ছোটবেলা থেকে নানা সৃষ্টিতেই। এরা প্রচলিত পথে এগোননি বলেই এদের বুদ্ধি কম তা অবশ্যই বলা যাবে না। আসলে বুদ্ধি মগজের কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নিহিত থাকলেও তার প্রকাশ ঘটে নানা স্তরে, নানাভাবে।
বুদ্ধির মানে
বুদ্ধি কেবল জন্মসূত্রে পাওয়া যায়-এই ধারণাটা ঠিক নয়। বুদ্ধির একটা অংশ পরিবেশ, শেখার মাধ্যমে এবং ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।

বুদ্ধি কোথায় থাকে
বুদ্ধির আধার হলো মস্তিষক বা মগজ। আরো সঠিকভাবে বলতে গেলে মগজের ওপর ছড়ানো পাঁচ মিলিমিটার পুরু আর দেড় বর্গমিটার বিস্তৃত ধূসর এক টুপি যার নাম সেরিব্রাল কর্টেক্স। সেরিব্রাল কর্টেক্সের নানা অংশ আর প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সের সমন্বয়ই বোধ-বুদ্ধি- মেধা-স্মৃতি-চেতনার মূলকথা।

বুদ্ধি তৈরির কারখানা
পরিণত মানবমগজের যা ওজন তার প্রায় ৮০% তৈরি হয়ে যায় জীবনের প্রথম ৩ বছরে। মায়ের পেটে বা জন্মানোর পর প্রথম বছরগুলোতে পুষ্টির, বিশেষ করে খাবারে প্রোটিনের অভাব ঘটলে বুদ্ধির স্বাভাবিক বিকাশ যায় আটকে। জন্মগত কিছু সমস্যায় বা জন্মের সময় অথবা পরে মাথায় বড় কোনো আঘাত পেলেও বিপর্যয় হতে পারে মানসিক বিকাশ। একই ঘটনা ঘটে বাচ্চার বেড়ে ওঠার পরিবেশ প্রতিকূল হলেও।

বুদ্ধির সবটাই জন্মগত, কোনোভাবেই বুদ্ধি বাড়ানো যায় না শিখিয়ে-পড়িয়ে-এরকম ধারণা একশভাগ ভুল। বুদ্ধি কিছুটা জেনেটিক, বাকিটা গড়ে ওঠে শেখার মাধ্যমে। জিনবাহিত বুদ্ধিও অনেক অংশে প্রভাবিত হয় পরিবেশ দিয়ে। বুদ্ধি নির্ভর করে শেখার পরিবেশ, শেখার পদ্ধতি আর শেখার আবেগ (Emotion)-এর ওপর। বুদ্ধির একই বিকাশ অনেকাংশেই নির্ভর করে চর্চার ওপরে। যেমন এর জন্য চাই যথাযথ খাবার, প্রয়োজনে ঠিকমতো আসন বা ব্যায়ামের এবং উপযুক্ত, স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলও।
বুদ্ধি বাড়ানোর মূলকথা
বুদ্ধিতে সর্বদাই শান দিয়ে যেতে হবে, তবেই তা প্রতি পলে বাড়তে থাকবে! কারণ আমাদের মগজের যা ক্ষমতা তার অতি কিঞ্চিৎ পরিমাণই আমরা কাজে লাগাই।

ছেলেবেলা থেকে শেখার ক্ষমতা বাড়তে বাড়তে ২০-২৫-এ সবচেয়ে বেশি হয়, তারপর স্থির থাকে বা কমতে থাকে। মানুষে মানুষে শেখার ক্ষমতায় কিছু তারতম্য থাকবেই। শেখার ক্ষমতা বাড়ে শরীর-মন সুস্থ-সবল হলে, কমে শরীরের শক্তির অভাব, মনে ফুর্তির অভাব থাকলে। অনুপ্রেরণা পেলে শেখা বাড়ে, বাড়ে শেখার পরিবেশ আর পদ্ধতি আনন্দময় হলে। ভয় দেখানো, চাপ তৈরি করা পরিবেশ শেখার গুণগত মান কমায়। পরিবেশে অশান্তি, উদ্বেগ বা ভয়ভীতি থাকলে কমে শেখার মান ও পরিমাণ দুটোই। আনন্দবোধ, উৎসাহ, প্রেরণা, প্রশংসা বা পুরস্কার শেখার আগ্রহ শুধু বাড়ায় না, এতে শেখার মাত্রা ও গুণমান বাড়ে।
বুদ্ধির বেড়ে ওঠা
আজকের স্কুল-কলেজে পড়ার বোঝা, অতিরিক্ত চাপ, দমবন্ধ করা পরিবেশ- এসবই কঠোর বাস্তব। মনোবিদরা নানা গবেষণার সূত্র ধরে শেখার যে আদর্শ পদ্ধতি পরিবেশের কথা বলছেন তা এই ইঁদুর-দৌড় বা র‌্যাট রেসের যুগে করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, অনেক ছাত্র খুব ছোটবেলায় স্কুল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তেমন সাফল্য দেখাতে পারে না, কিন্তু উঁচু ক্লাসে বা কিছু সময় পর থেকে তারা ভালো করতে শুরু করে। এদের বলে লেট অ্যারাইভাল। সে ক্ষেত্রে বলা যায় এই গোত্রের মানুষরা তাদের বুদ্ধিতে শান দিয়ে তা কাজে লাগাতে শুরু করে। জেনে নিন তা কীভাবে সম্ভব। আদর্শ লেখাপড়ার ও শেখার পরিবেশ আর পদ্ধতি কেমন হওয়া দরকার-

  • তীব্র আবেগের সঙ্গে শেখার ব্যবস্থা, একটানা বেশিক্ষণ না শিখিয়ে মধ্যে বিনোদনের ব্যবস্থা।
  • শেখানোর ব্যবস্থা যেন যথেষ্ট উদ্দীপনা জোগা
  • শেখা তথ্য বা পদ্ধতিকে যেন বারবার ঝালিয়ে নেয়া হয়।
  • শেখার ওপর নজর থাকে, তবে খবরদারি বা বেশি নাক গলানো নয়। খবরদারি না থাকা স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশে শেখার মান ও পরিমাণ বাড়বে।
  • একশ ভাগ ছাঁচে-ঢালা পদ্ধতি বা পরিবেশ নয়, সুচিন্তিত, বেশ খানিকটা স্বতঃস্ফূর্ত শেখার ব্যবস্থা শেখার গভীরতা ও বিস্তার বাড়ায়।
  • শেখানোর পদ্ধতি হওয়া চাই সহজ সরল, জটিল বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর দক্ষতা শিক্ষকের থাকা চাই।
  • জোর করে গেলানো পদ্ধতি নয়, শেখার গুণমান ও পরিধি বাড়ে শেখার সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীর মগজ কাজে লাগানোর ব্যবস্থা থাকলে।
পড়াশোনার যে পদ্ধতিতে মগজকে যত বেশি খাটাতে হয়, মানসিক উর্বরতা বাড়ে তত বেশি। এক কথায় আনন্দে, নিজের মতো করে, মাথা ঘামিয়ে, ছাঁচে-ঢালা নয় এমন পদ্ধতিতে প্রথাগত ও স্বাধীন লেখাপড়া ছাত্রজীবনে বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। বুদ্ধি বাড়ে ভালো শিক্ষকের শেখানোর মৌলিক দক্ষতার গুণে, বাড়ে একই বিষয় বারবার ঝালানোয়, আবেগযুক্ত শেখার ব্যবস্থায়।
ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট (আইকিউ) কী
আইকিউ বুদ্ধি মাপার পুরনো, সাবেকি পদ্ধতি। মনের বয়স বাস্তব বয়সের সমান হলে আইকিউ হবে ১০০। আইকিউ-এর মান ৮০ থেকে ১০৯-এর মধ্যে হলে তাকে স্বাভাবিক বুদ্ধি ভাবা হয়। ৭০-এর নিচে হলে তা মানসিক অপর্যাপ্ত বিকাশের লক্ষণ। অন্যদিকে ১১০ বা তার বেশি আইকিউ তীব্র মেধার আভাস দেয়। আইকিউ মাপার লিখিত পরীক্ষা ছাড়াও মুখোমুখি প্রশ্নোত্তরে নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য।

আইকিউ কতটা সঠিকভাবে বুদ্ধি মাপে এ নিয়ে এখন সন্দেহের শেষ নেই। আইকিউ মাপতে গিয়ে সমবয়স্ক সব বাচ্চা মুখোমুখি হয় এক ধরনের প্রশ্নের। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষার মান বা পরিবেশ, বাচ্চার মানসিক অবস্থা, সংস্কৃতিগত-ধর্মগত-জাতিগত ফারাক, বাচ্চার আবেগের মাত্রাকে মাথায় রাখার ব্যবস্থা নেই। আইকিউ মাপতে গিয়ে বাচ্চাকে এমন অনেক ধাঁধা বা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় যা তার পক্ষে উপযোগী নয়। এই পদ্ধতি বুদ্ধির মানের একটা (একমাত্র নয়) সূচক। তবে বুদ্ধি সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণায় আইকিউয়ের গুরুত্ব দিন দিন কমছে।
ইমোশন কোশেন্ট (ইকিউ)
ছেলেবেলায় আনন্দের পাঠ মনে থাকে অনেক বেশি বয়সেও। বাবার আকস্মিক মৃত্যু খুব তাড়াতাড়ি বড় করে দেয় ছেলেমেয়েদের। বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে আবেগের গভীর সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে মনোচিকিৎসার জগতে এখন এসেছে বুদ্ধির সঙ্গে আবেগ ও সমাজকে জুড়ে দেয়ার ব্যবস্থা। বুদ্ধিকে এখন ‘সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স’ বা ‘সোসিওমেন্টাল ইন্টেলিজেন্স’ পর্যায়ে ভাবা হচ্ছে। এর অন্য নাম ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ বা আবেগ-বুদ্ধি। এই মাপকাঠিতে মানসিক সক্রিয়তার মাপ হলো ‘ইমোশন কোশেন্ট’ (ইকিউ)। আইকিউ-এর চেয়ে সার্বিক বোধবুদ্ধি মাপতে ইকিউ অনেক বেশি কার্যকর। দেখা গেছে, যে কোনো বয়সে সামাজিক দায়দায়িত্ববোধ একজন মানুষের যে কোনো কাজের মান বাড়ায়। যে বাচ্চার মনে সুকুমার বৃত্তিগুলো বেঁচে থাকে, যে বাচ্চা অন্য বাচ্চাদের দুঃখকষ্টের ভাগ নিতে জানে, তার মানসিক সক্রিয়তা আত্মকেন্দ্রিক বাচ্চার চেয়ে বেশি। পশ্চিমের দেশগুলোতে তাই প্রথাগত শিক্ষার বদলে আবেগঘন শেখার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে ১৯৯০-এর পর থেকে। দেখা গেছে কম বয়সে নানা ধরনের আবেগকে কাজে লাগাতে শিখলে বুদ্ধি বাড়ে দ্রুতলয়ে, যথেষ্ট মাত্রায়।

আইকিউ মাপার কোনো সর্বসমমত পদ্ধতি এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নেই। এরকম পদ্ধতি চলে আসবে যে কোনো সময়। ভুলে যাবেন না আত্মকেন্দ্রিক মানুষের, গোমড়ামুখো মানুষের, ঘরকুনো মানুষের ইকিউ কম। ইকিউ বেশি সামাজিক, দিলদরিয়া, প্রাণখোলা মানুষের। মাথায় রাখুন, বাচ্চার ইকিউ বাড়ানো যায় ছেলেবেলা থেকে বাচ্চার জানাবোঝাকে নির্দিষ্টভাবে সাহায্য করতে শেখে নিলে। স্বার্থপরতার বদলে অন্যকে সাহায্য করতে শিখলে আর শেখালে।
বাচ্চাদের বুদ্ধি বাড়াতে হলে
  • বাচ্চাকে যথাসম্ভব প্রকৃতির সান্নিধ্যে রাখুন। ঘাস, ফড়িং, ফুল, ফল, পাখি, গাছ, পাতা বা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বাচ্চা শেখে অনেক।
  • চাপ না দিয়ে লেখাপড়া শেখান হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে।
  • শুধু পড়াশোনায় নয়, বাচ্চা যেন রোজ খেলার সুযোগও পায়।
  • বাচ্চার পুষ্টির দিকে নজর রাখুন, তার মানে এই নয় জোর করে বেশি খাওয়াবেন।
  • বাচ্চার বড় হওয়ার পথে নজর রাখুন, সাহায্য করুন তবে কোনো কিছু জোর করে শেখাতে বা চাপাতে যাবেন না।
  • স্কুলে শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতির খোঁজখবর নিন, প্রয়োজনে সক্রিয় হোন।
  • বাচ্চাকে বাড়তে দিন ওর প্রবণতা অনুযায়ী।
  • পড়া, শেখার ফাঁকে ফাঁকে বাচ্চা তার পছন্দ অনুযায়ী ছবি আঁকুক, নাচুক, গান বা নাটক করুক। কিন্তু বাচ্চাকে ভুলেও সর্ববিদ্যার বিশারদ বানাতে যাবেন না।
  •   অন্যের সঙ্গে বাচ্চাকে তুলনা করবেন না বা কথায় কথায় বকবেন না, শাস্তি দেবেন না।
  •   ভালো শেখার জন্য যথেষ্ট প্রেরণা দিন বাচ্চাকে, দিন পুরস্কার।
  • বাচ্চার মগজের ব্যায়াম বাড়ান। নানা বিষয়ে বই পড়ায় উৎসাহ দিন, বাইরের পড়া ছাড়া বুদ্ধি বাড়ে না।
  • বাচ্চাকে শিখতে সাহায্য করার দক্ষতা অর্জন করা যায় অনুশীলনে। আপনার বাচ্চার সবচেয়ে ভালো শিক্ষক হতে পারেন আপনি।
  •   বাচ্চাকে সময়ের সদ্ব্যবহার শেখান, একটু বড় হলে শেখান পড়াশোনার টাইম ম্যানেজমেন্ট।
  •   নিজে না শিখে বাচ্চাকে শেখাতে যাবেন না।
  • ভয় দেখিয়ে, মারধর করে ভুলেও শেখাতে যাবেন না বাচ্চাকে।
  •  বাচ্চার মধ্যে অবসাদ, ভয়ভীতি, মাত্রাছাড়া উদ্বেগ বা উত্তেজনা লক্ষ্য করলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
  •  গল্প শুনতে শুনতে বাচ্চাদের মন বাড়ে তাড়াতাড়ি, বাড়ে কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগালে। বাচ্চাকে পড়ান নানা রকম কল্পনা সহায়ক বই।
  •  টিভি দেখার থেকে হয়তো বিরত করা যাবে না, তবে বাচ্চাকে বেশি টিভি দেখতে দেবেন না। কী অনুষ্ঠান কতক্ষণ দেখছে অভিভাবকরা সে দিকে অবশ্যই নজর দেবেন। তবে খবরদারি নয়, ওদের বুঝতে না দিয়েই নজর রাখার চেষ্টা করুন।
  • দূরে পড়তে গেলে হয়তো মোবাইল ফোন দিতে হতে পারে, সে ক্ষেত্রে হাইটেক ফোন দেবেন না। সাধারণ মোবাইল ফোনই যথেষ্ট। কম্পিউটারও আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় জরুরি। তবে চট করে ইন্টারনেট কানেকশন না দেয়াই ভালো। দিলেও বাচ্চা যেন আপনার উপস্থিতিতেই কেবল তা ব্যবহার করে এমন ব্যবস্থা করুন।
  • বড় ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন মাত্রাছাড়া না হয় সে দিকে নজর রাখুন।
  • সমস্যা এড়িয়ে যেতে নয়, সমস্যার মুখোমুখি হতে শেখান।
  • স্বার্থপর হতে নয়, অন্যের আবেগকে জেনে-বুঝে কাজ করতে শেখান, বাচ্চার সুকুমার বৃত্তিগুলোকে ইঁদুর-দৌড়ে না নামিয়ে ওদের মতো করে ওদের বাড়তে দিন, পাশে থাকুন। বন্ধুর মতো।
  • মানুষের পাশে থাকুন, শিখুন হাত বাড়াতে, আপনাকে দেখে বাচ্চাও শিখবে, সামাজিক মানুষ হবে।
প্রযুক্তির চাপ আর বুদ্ধি
উন্নত প্রযুক্তির হাত ধরে আসছে নানা ধরনের পেশাগত রোগ। কম্পিউটারের সামনে বসে একটানা বহুমুখী কাজ করতে করতে মনোসংযোগ কমে, অল্পেই বিরক্ত লাগে, কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে, কমে কাজের মান ও পরিমাণ। অবিরাম সেলফোন বা কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকা কর্মীরা এখন শিকার হতে শুরু করেছেন এমন মানসিক সমস্যার যা কাজের গুণমান ও পরিমাণ কমায়, কমায় মানসিক দক্ষতা।
প্রযুক্তির চাপজনিত সমস্যা কমাতে হলে
বহুকাল আগেই চার্লি চ্যাপলিন তার মডার্ন টাইমস-এ দেখিয়েছিলেন আধুনিক প্রযুক্তিপ্রসূত সামাজিক সমস্যার করুণ পরিণতি। ঠিকই, তবে প্রযুক্তি তো উন্নত থেকে উন্নততর হবেই। আমাদের প্রস্তুত হতে হবে প্রযুক্তি সমস্যা যেন মানসিক সক্রিয়তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে কাজের মান না কমায়।

যা করা উচিত
  • কম্পিউটার আর সেলফোনের পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে মেশা।
  • মাঝেমধ্যে এরকম প্রযুক্তির সুইচ অফ করে মনকে আরাম দেয়া।
  • দিনে অন্তত কয়েক ঘণ্টা এসব বন্ধ রেখে ভাবা, হাঁটা, ধ্যান করা, ব্যায়াম করা।
  • বেশি বই পড়া, টিভি কম দেখা।
  • নিয়মিত যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান করা।
যা করা উচিত নয়
  • সারাদিন টিভির পরদায় চোখ না রাখা।
  • খুব বেশি তথ্য মাথায় ঢোকাতে না যাওয়া।
  • এক সঙ্গে একাধিক কাজ করতে না যাওয়া।
  • অহেতুক টিভি, কম্পিউটারের সামনে বসে না থাকা।
  • অকারণে মোবাইল ব্যবহার না করা।
  • কাজের সময় মোবাইল না ধরা।
  • বেশি ক্যালকিউলেটর বা কম্পিউটার অথবা মোবাইলে রিমাইন্ডার ব্যবহার না করে মগজটাকে নিয়মিত খাটাতে না ভোলা।
  • মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে, প্রযুক্তিকে ম্যানিয়া না বানিয়ে এর যথাযথ ব্যবহার শিখতে হবে। শিখে নেয়া দরকার মোবাইল এটিকেট। খুব প্রয়োজন হলে তবেই মোবাইল ফোনে কথা বলা উচিত, অন্যকে বা অন্যদের বিরক্ত না করে ইন্টারনেটে একটানা বসাকে বাতিক বানানো উচিত নয়।
বয়স বাড়লে বুদ্ধি পাকে
আগে ভাবা হতো বেশি বয়স মানেই মানসিক সক্রিয়তা কমে আসা। আধুনিক মনোবিজ্ঞানের গবেষণা প্রমাণ করেছে, এ ধারণা ভুল। ৩৫-৬৫ বছর বয়সকে এখন বলা হচ্ছে মধ্যবয়স। এই বয়সেই পেকে উঠতে পারে বুদ্ধিবিবেচনা, যদি আপনি নিজেকে ইচ্ছা করে বুড়ো বানাতে না চান। তবে চল্লিশের পর থেকে রোজ কিছু কিছু করে মৃত্যু ঘটে মগজের স্নায়ুকোষ বা নিউরোনগুলোর। বেশি বয়সে তাই শেখার, তথ্য ধারণের আর স্মৃতির সমস্যা দেখা দেয়া অসম্ভব নয়। বেশি বয়সে মাথার নিউরোন সংখ্যায় কমলেও মানসিক সক্রিয়তা অটুট থাকতে পারে।
৫০-৬০ বা তার পরের মানসিক সক্রিয়তা নির্ভর করে কম বয়সের প্রস্তুতির ওপর। কম বয়সে মানসিক চর্চা বাড়লে কমে বেশি বয়সের বুদ্ধিবিভ্রাট, স্মৃতিবিভ্রাট। চল্লিশের আগে-পরে মগজকে যত সক্রিয় রাখা যায়, যতবেশি বিষয়ে খাটানো যায় মাথা, মগজের আলস্যকে এড়িয়ে চলা যায় যতদূর, বুদ্ধিবিবেচনার ক্ষমতা তত অটুট থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে বাড়েও। নিজেকে বুড়িয়ে ফেলতে না চাইলে বেশি বয়সে বোধবুদ্ধি তো কমবে না, হয়তোবা বাড়বে।
মধ্যবয়সে বুদ্ধি ধরে রাখতে হলে
  • টিভি কম দেখুন, বাড়ান নানা বিষয়ে বই পড়া। নানা বিষয়ে উৎসাহ বজায় রাখুন, বাড়ান মগজের চর্চা। মগজকে অলস বসিয়ে রাখবেন না, যতক্ষণ পারুন কাজে লাগান মগজকে। নিয়ম করে নানা বিষয়ে সময় দিন।
  • টেনশন এড়িয়ে চলুন, না পারলে মনোবিদের সাহায্য নিন।
  • মানুষের সঙ্গে মিশুন, অন্যের কথা ভাবুন। যথাসম্ভব সামাজিক থাকুন। অন্যের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে কাজ করুন।
  • নিয়মিত হাঁটুন, শরীরকে সাধ্য অনুযায়ী খাটান।
  • পড়া নতুন বিষয় অন্যকে বোঝান, বুদ্ধির ও স্মৃতির ব্যবহার বাড়ান। দাবা খেলুন, করুন শব্দজব্দের সমাধান, বাচ্চাদের পড়ান, নিজে পড়ুন।
  • মনের ব্যায়াম বাড়ান। যোগাভ্যাস বা প্রাণায়াম, সম্ভব হলে ধ্যান করুন। টিভির চ্যানেল দেখে নয়, যোগ্য প্রশিক্ষকের কাছে শিখে।
  • সমস্যা না এড়িয়ে সমস্যা সমাধানে মাথা খাটান। বজায় রাখুন জানা-বোঝার অভ্যাস।
  • প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ আর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে সঠিক সমন্বয় গড়ে তুলুন।
  • কাজের সময় মনোসংযোগ বিঘ্ন ঘটায় এমন মানুষ বা প্রযুক্তি এড়িয়ে চলুন। মানুষ যন্ত্র নয়, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনের বিনোদন, হাসি, খোশগল্পও জরুরি। এতে কাজের মান বাড়ে। বাড়ে মগজের ক্ষমতা।
কর্মজীবনে বুদ্ধি কাজে   লাগাতে হলে
  • কাজের পরিবেশ কোলাহলমুক্ত রাখুন। একবারে একটাই কাজ করুন। একটা শেষ করে তবেই আরেকটা নিয়ে মাথা ঘামান।
  • আনন্দে কাজ করুন, টেনশন এড়িয়ে চলুন।
  • জরুরি কাজের সময় মোবাইল বা ইন্টারনেট বন্ধ রাখুন।
  • তথ্য জানুন তবে অতিরিক্ত তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত হবেন না।
  • রোজ অন্তত এক ঘণ্টা শুধু নিজের জন্য রাখুন। শরীর-মনের ব্যায়াম করুন, গান শুনুন, ভাবুন এই সময়টায়।
  • ক্যালকিউলেটর বা কম্পিউটারের ব্যবহার কমিয়ে বাড়ান মাথার ব্যবহার।
  • টাইম ম্যানেজমেন্ট অনুযায়ী চলুন। বেশি দরকারি কাজ আগে করুন, তারপর অন্যটা।
  • অন্যের আবেগকে যথেষ্ট মর্যাদা দিন, কাজ করুন অন্যের আবেগকে মূল্য দিয়ে।
  • অন্যের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিতে শিখুন, প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্য করুন যথাসম্ভব।
বুদ্ধি বাড়াতে ডায়েট
বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য জন্মের আগে থেকেই করা উচিত নানা আয়োজন অর্থাৎ গর্ভাবস্থায়ও।
জন্মের আগে মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় আর জন্মানোর পর প্রথম কয়েক মাস সময় বাচ্চার মস্তিষকসহ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক গঠন আর বিকাশের পক্ষে জরুরি। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র পুরোপুরি তৈরি হয়ে যায় মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়। এই সময় পুষ্টির অভাব ঘটলে বিপর্যস্ত হতে পারে মগজের সুস্থ, স্বাভাবিক গড়ে ওঠা। গর্ভবতীর খাদ্য হওয়া চাই সুষম, খাদ্যে থাকা চাই পর্যাপ্ত DHA (কোসাহেক্সানয়িক এসিড-এক ধরনের পলি আনস্যাচিউরেটেড ফ্যাটি এসিড) গর্ভবতীর খাবারদাবারে DHA-র অভাব ঘটলে ভ্রূণের মগজ যথাযথভাবে তৈরি হতে পারে না। সামুদ্রিক মাছ, মেথি, রাজমা, শাকপাতা, মুগডাল ছাড়াও নানা মাত্রায় DHA থাকে  খয়রা, ইলিশ ও বাম মাছে। DHA-র অভাবে বাচ্চা জন্মাতে পারে অপরিণত অবস্থাতেও। জন্মের পর মায়ের খাবারে থাকা অতিরিক্ত DHA মায়ের দুধের ভেতর দিয়ে বাচ্চার শরীরে যায় ও বাচ্চার স্বাভাবিক বিকাশে সাহায্য করে। অপরিণত অবস্থায় জন্মানো বাচ্চাদের জন্ম পরবর্তী বিকাশে মায়ের দুধে থাকা DHA সাহায্য করে বিশেষভাবে। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানের সময় ডাল, ভাত, শাকসবজি, মাছ ইত্যাদি বাঙালি খাদ্যে।
DHA-র অভাব সচরাচর ঘটে না। গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পরে কৃত্রিম DHA ওষুধ হিসেবে খাওয়া তাই অপ্রয়োজনীয়। সঠিক পুষ্টির পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় আনন্দে থাকা, গান শোনা ইত্যাদি ভ্রূণের মগজের স্বাভাবিক গঠন বিশেষভাবে সাহায্য করে। ভ্রূণের মগজ স্বাভাবিকভাবে তৈরি হলে আর জন্মের পর সঠিকভাবে বেড়ে উঠলে বাচ্চার জন্মগত বোধবুদ্ধি নিয়ে চিন্তার কারণ থাকে না। শিশুর মস্তিষেকর বিকাশে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো থাইরক্সিন হরমোন। থাইরক্সিন হরমোন নিঃসরণ কম হলে মায়ের হাইপোথাইরডিজম রোগ দেখা যায়, যার ফলে শিশুর মস্তিষেকর বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। এই কারণে গর্ভবতী মায়ের খাবারে আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, আয়োডাইজড সল্ট থাকা দরকার। আয়োডিনযুক্ত খাবার ক্রেটিনিজম রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
জন্মের পরে
শিশুর জন্য মায়ের দুধই প্রধান ও প্রাথমিক খাদ্য। নবজাতকদের জন্য প্রকৃতি তার মধ্যেই সব প্রয়োজনীয় পুষ্টির ব্যবস্থা করে রেখেছে। কিন্তু এর পরে বাচ্চা একটু বড় হলে মায়ের দুধের সঙ্গে শিশুর প্রয়োজন সাপ্লিমেন্টারি ফিডিংয়ের। এর মধ্যে যেন প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন অর্থাৎ যার মধ্যে অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড আছে সে রকম খাবারের প্রয়োজন। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম। নিরামিষাশী হলে দুধের সঙ্গে খাওয়ানো যেতে পারে ভাত বা রুটি এবং ডাল, ছোলা জাতীয় খাদ্য। ভালো হয় যদি সবজি দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ানো যায়। সাপ্লিমেন্টারি ফুড ঠিকমতো না হলে বাচ্চার প্রোটিনজনিত অপুষ্টি দেখা যায়, ফলে মস্তিষেকর বিকাশ ঠিকমতা হয় না। সেই জন্য মা ও বাচ্চার খাবারে বিশেষ নজর দেয়া দরকার। একজন স্বাভাবিক পরিশ্রমের গর্ভবতী রমণীর (ওজন ৫০ কিলো) শক্তি চাহিদা ২৫২৫ কিলো ক্যালোরি, প্রোটিন ৬৫ গ্রাম। দেহের প্রতি কেজি ওজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ৬ মাসের শিশুর দরকার ২.০৫ গ্রাম প্রোটিন, ৬-১২ মাসের শিশুর দরকার ১১.৬ গ্রাম প্রোটিন, ১-৩ বছরের শিশুর দরকার ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন।

বড় শিশুর
আড়াই বছর বয়সে মস্তিষেকর বিকাশ সম্পূর্ণ হওয়ার পর মস্তিষেকর স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ সক্রিয় রাখার জন্য প্রয়োজন নর্মাল ব্যালান্সড ডায়েট বা সুষম খাদ্যের। সুষম খাদ্য মানে যে খাবার খেলে শক্তি চাহিদা মেটে, তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তৈরি হয় এবং বৃদ্ধি সহায়ক হয়। একজনের উচ্চতা ওজন বয়স কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করে সুষম খাদ্য কী রকম হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে-

  • কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেন ডায়েটে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। কারণ দেহে যথাযথ পরিমাণে গ্লুকোজের সরবরাহ না হলে মস্তিষেকর ওপর নেগেটিভ প্রভাব পড়ে। স্নায়ু সংবেদন প্রবাহ ব্যাহত হয়। কার্বোহাইড্রেট পাবেন ভাত, রুটি, সাবু, বার্লি, আলু ইত্যাদিতে।
  • বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের খাবারে ভিটামিন বি গ্রুপের থায়ামিন থাকলে এই সময়ে যে অ্যাগ্রেসিভনেসটা দেখা যায় তা কমানো যায়। থায়ামিন ভালো পাওয়া যায় ইস্ট, খোসা সমেত বা গোটাদানাশস্য যেমন তিল, শুঁটি, বাদাম, চাল। ফাস্টফুডের বদলে তাই ডায়েটে শাকসব্জি, ফলমূল থাকা দরকার, কারণ এগুলোয় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে।
  • মস্তিষেকর স্বাভাবিক কার্যকলাপ বজায় রাখার জন্য ভিটামিন বি-র প্রয়োজন। স্নায়ুতন্ত্রে নার্ভ ইমপালস সংবাহিত হয় নিউরোট্রান্সমিটারের মাধ্যমে। ভিটামিন বি গ্রুপের ট্রিপটোফেন এমিনো এসিড এই ট্রান্সমিটার তৈরিতে সাহায্য করে। ট্রিপটোফেন নায়াসিন তৈরি করে। নায়াসিন স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ সক্রিয় রাখে। কোলাইনও এ ক্ষেত্রে সাহায্য করে। সায়ানোকোবালামিন প্রাণিজ উৎসের মধ্যে পাওয়া যায়, তাই খাবারে একটা প্রাণিজ প্রোটিন থাকা দরকার, অন্তত দুধটা। ভিটামিন বি পাবেন নানা বাদাম, শুঁটি, চাল ইত্যাদিতে।
  • ডায়েটে সূর্যমুখী তেল, তিসি তেল, তিল তেল থাকলে ভালো; কারণ এগুলোর মধ্যে থাকে অত্যাবশ্যক ফ্যাটি এসিড। এই ফ্যাটি এসিড স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মায়োলিনের আবরণ তৈরি করতে সাহায্য করে, যার মাধ্যমে নার্ভ ইমপালস সংবাহিত হয়।
  • ডাল, সয়াবিন, মাছ, মাংস, ডিম, মাশরুম, অঙ্কুরিত ছোলা এগুলোতে অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড থাকে। দেহ এই এমিনো এসিড নিজে তৈরি করতে পারে না। তাই খাবারের মধ্য দিয়ে এর চাহিদা মেটাতে হয়।
  • খাবারে একটা টকজাতীয় ফল রাখা যেতে পারে। কারণ ভিটামিন সি নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সাহায্য করে। মস্তিষেকর এক্সিডেটিভ ড্যামেজ প্রতিরোধের জন্য আবার ভিটামিন ই দরকার। তেল, বাদাম, আস্ত দানাশস্যে ভিটামিন ই থাকে। হলুদ কমলা রঙের সবজি, ফল ভিটামিন-এ-র জন্য দরকার।
খাবারে ফলিক এসিড থাকা দরকার। ফলিক এসিডের অভাব হলে সপাইনাল কর্ডের গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে অনেক সময় ভুল কথা বলা, কনফিউশন হওয়া শুরু হয়। লবণ দেয়া খাবার তাই দরকার। প্রয়োজনে কাঁচা লবণও খাবেন।
এই সমস্ত দিক লক্ষ রেখে ডায়েটে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন-
১) দানাশস্য ও প্রস্তুত খাবার অর্থাৎ গম, চাল, আলু, ভুট্টা, বার্লি, পাউরুটি।

২) ফল ও সবজি- আপেল, নটেশাক, গাজর, আঙুর, পালংশাক, কমলালেবু, ক্যাপসিকাম, পেয়ারা, লেবু, মেথিশাক, কলা, ঢেঁড়স।
৩) ডাল ও শুঁটি- ছোলা, রাজমা, মাষকলাই, মুগ, সয়াবিন।
৪) দুধ, মাংস ও মাংসজাত খাবার- পনির, দুধ, মেটে ডিম।
৫) ফ্যাট ও শর্করা- তেল, ঘি, চিনি, মাখন। ঠিক কোন খাবার খেলে মস্তিষেকর কার্যকলাপ সক্রিয় হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। বেশি করে খেলেই যে বুদ্ধির বিকাশ হবে এমন নয়। দেহের চাহিদা অনুযায়ী, বয়সের প্রয়োজন অনুযায়ী পরিমিতভাবে খাবার খেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেই খাবারে যেন শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সব কটা খাদ্য উপাদান উপস্থিত থাকে।
ভুলে যাওয়া যখন দৈনন্দিন সমস্যা
১৫ বছর এক সঙ্গে কাজ করা সত্ত্বেও কিছুতেই ভদ্রলোকের নাম মনে করতে পারেন না সৌরভ কিংবা কয়েকদিন আগে দেখা সিনেমার নামটা মহুয়া মনে করে বলতেই পারল না ওর ননদকে। নাম ভুলে যাওয়া, আলমারির চাবি খুঁজে না পাওয়া, অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করা এমন হাজারও ভুলে যাওয়ার ঘটনা আপনার আমার জীবনে নিত্য ঘটে। নিজের ওপর বিরক্তি হয়, অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এই ভুলে যাওয়ার সঙ্গে বয়সের যে সব সময় সম্পর্ক আছে তা কিন্তু নয়। ৮০ বছর বয়সেও ঝকঝকে স্মৃতিশক্তি হতে পারে যদি সময় এবং এনার্জি খরচের ইচ্ছা আপনার থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মনে রাখার ক্ষমতা তখনই কমতে থাকে যখন তার যথাযথ ব্যবহার না হয়। মানে অলস মস্তিষক শুধু শয়তানের কারখানাই নয়, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার অতি উত্তম ক্ষেত্রও বটে। মাথা যত খাটাবেন, স্মৃতিশক্তি তত প্রখর হবে এবং সারাজীবন ধরে মাথা খাটানোর অভ্যাস করে গেলে ভুলে যাওয়াটাই আপনি ভুলে যাবেন। কোয়ালিটি অব লাইফ যদি ঠিক রাখা যায় নানারকম সামাজিক ইন্টারঅ্যাকশনে নিজেকে যুক্ত রাখা যায়, তা হলে বেশি বয়সেও মস্তিষেকর তারুণ্য বজায় রাখা কোনো ব্যাপারই নয়। বই পড়া, নাচ, গান, বাজনার সঙ্গে যুক্ত থাকা, কোনো বিষয় নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা করা ব্রেনের কর্মক্ষমতা সজীব রাখে।

ভুলে যাওয়া যখন অসুখ
যে কোনো ধরনের ভুলে যাওয়ার ডাক্তারি নাম অ্যামনেশিয়া। প্রবল জ্বরে ভুলভ্রান্তি হতে পরে, মাথায় আঘাত লেগে বিস্মৃতি হয়, আবার অ্যালকোহল, দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ খেলেও মানুষ অনেক কিছু ভুলে যায়। এসবই অ্যামনেশিয়া।

বুদ্ধি ও সৃষ্টিশীলতা
আধুনিক মস্তিষক বিজ্ঞানের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সপষ্ট দেখেছেন যে, সৃষ্টিশীল   চিন্তা নির্ভর করে মস্তিষেকর কিছু বিশেষ বিশেষ স্নায়ুতন্ত্রের কাজকর্মের ওপর। সৃষ্টিশীলতার মূলকথা হলো noveltyappropriateness। সেই গবেষণা, ছবি বা কবিতাই সৃষ্টিশীল যা বাঁধা গতের বাইরে আমাদের ‘নতুন’ কিছুর আভাস দেয়। কিন্তু শুধু নতুনত্ব বা নিজস্বতা থাকলেই হবে না, এই নতুন সৃষ্টি যেন মানুষের কাজে লাগে। সৃষ্টিশীল বৈজ্ঞানিক আবিষকার কোনো না কোনোভাবে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে। সাহিত্য বা সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তা একসঙ্গে অনেক মানুষ, বিশেষ করে সমঝদার মানুষের মনকে সপর্শ করতে পারে। তা না হলে নতুনত্বই সার, তা নিয়ে বাকি পৃথিবীর কোনো প্রয়োজন বা উৎসাহ থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনার পেছনে থাকে বহু বছরের অধ্যবসায় ও একটি কোনো বিষয় নিয়ে অনেক দিনের চর্চা। আবার কখনো কখনো বিদ্যুচ্চমকের মতো মানুষের মনে দেখা দেয় নতুন আইডিয়া। গানের কলি কিংবা ছন্দের রেশ। বিজ্ঞানীরা কিন্তু মনে করেন এই ধরনের সৃষ্টিশীলতার আড়ালে আসলে থাকে অনেক ভাবনা, যত্ন ও পরিশ্রমের ইতিহাস।

সৃষ্টিশীলতা কীভাবে বাড়ানো যায়
  • তাই বই পড়ুন, গান শুনুন, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।
  • শুধু থিওরি জ্ঞান যথেষ্ট নয়-হাতে-কলমে করে দেখানোর চেষ্টা করুন। না হলে পণ্ডিতমূর্খের তকমা জুটবে।
  • মুখস্থ করার প্রবণতা চিন্তার স্বাতন্ত্র্য বা Originality-র পরিপন্থী। যা পড়বেন বুঝে পড়ুন, অকারণে মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না।
  • কোনো একটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবা অভ্যাস করুন। মনোসংযোগ করা সহজ ব্যাপার নয়, রীতিমতো অভ্যাস করতে হয়।
  • মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য মেডিটেশনের সাহায্য নিতে পারেন।
  • কাজের ফাঁকে অবসর খুঁজে নিন।
  • সঙ্গে একটি ছোট নোটবুক রাখুন। নতুন কোনো আইডিয়া মনে এলে ভুলে যাবেন না। প্রথম সুযোগেই লিখে রাখুন। সপ্তাহে অন্তত একবার নোটবই খুলে দেখুন।
  • খুব বেশি Passive activity, যেমন টেলিভিশন দেখা-যাতে নিজের কিছু করার থাকে না-করবেন না।
  • তর্ক করা ভালো, চারপাশের বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে নিজের মত প্রকাশ করুন-অন্যদের মতও জানুন। তর্ক করা আর ঝগড়া করা এক জিনিস নয় কিন্তু।
  • সমালোচনায় ভয় পাবেন না। সমালোচনার সদর্থক দিকটা বুঝে দরকারে নিজেকে সংশোধন করে নিন।
  • যুক্তিবাদের বিকল্প নেই। অন্ধ আবেগ বা বিশ্বাস আঁকড়ে না থেকে নিজের মনকে সব রকম মতামতের জন্য মুক্ত রাখুন। দরকারে নিজের মত পালটানো-মতামতের নমনীয়তা নতুন চিন্তার দিগন্ত খুলে দেয়।
স্মৃতিশক্তি ভালো রাখার ৫টি উপায়
লিভ ওয়েল
ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলুন। নিউট্রিশনের দিকে নজর দিন।
ম্যারি স্মার্ট
বিয়ে করুন আপনার চেয়ে ইন্টেলিজেন্ট মানুষকে। তা হলে আপনার বুদ্ধির ক্ষুরধার বজায় থাকবে, আপনার বুদ্ধি উদ্দীপিত হবে।

কিপ ফিট
নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। এর ফলে ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস তো এড়াতে পারবেনই, সেই সঙ্গে অজান্তে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট স্ট্রোক, যা ব্রেনে রক্তসঞ্চালনের বাধা সৃষ্টি করে তাও রুখতে পারবেন। ফলে ডিমেনসিয়া আটকাতে পারবেন।

অ্যাডাপ্টাবিলিটি
পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেন। সহজেই যারা মিশতে পারেন, বন্ধুত্ব করতে পারেন, বৃহত্তর সামাজিক জীবন-যাপন করেন, তাদের বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি সতেজ থাকে।

কাম ডাউন
আধুনিক জীবনের স্ট্রেস স্মৃতিশক্তির সমূহ ক্ষতি করে। উত্তেজিত না হয়ে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। অবসর সময়ে শুধুই টিভি না দেখে গান গাওয়া বা কোনো বাজনার অভ্যাস করা, বই পড়া খুব ভালো।

নাম মনে রাখার কয়েকটি সহজ উপায়
নিশ্চিত হোন যে আপনি নাম মনে রাখতে চাইছেন। নামটা মন দিয়ে শুনুন, ব্যক্তির মুখ ভালো করে নজর করুন, নামটা ব্যবহার করুন। ব্যক্তির চেহারার বিশেষত্ব নজর করুন। নামের সঙ্গে ছন্দের মিল আছে এমন শব্দ দিয়ে নাম মনে রাখতে পারেন। যেমন ন্যান্সি ফ্যান্সি।

নেমনিক্স
মনে রাখার জাদুকাঠি কী? কোথায় লুকিয়ে আছে এই মগজাস্ত্রের তুরুপের তাস? এক কথায় নেমনিক্স (mnemonics)। নাম, ফর্দ, সন, তারিখ সব কিছু মনে রাখার এ এক অসাধারণ পদ্ধতি। আর এর জন্য আপনার তুখোড় বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই চোখে চশমা এঁটে মোটা বই মুখস্থ করে ফেলার। একবার নেমনিক্সের প্রাথমিক ব্যাপারটা বুঝতে পারলে আর নিয়মিত এর ব্যবহার করলে আপনার ভাবনার গতির চেয়েও দ্রুত আপনি মনে রাখতে পারবেন নানা বিষয়। বহুরকম নেমনিক্স পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কল্পনা এবং অনুষঙ্গ, imagination and association. নাম, সংখ্যা এসব বিমূর্ত ধারণা মনে রাখার জন্য চোখের সামনে ছবি তৈরি করুন।

যেমন ধরুন আপনার রেস্তরাঁর একজন নিয়মিত ক্লায়েন্টের নাম দেব। কিন্তু আপনি কিছুতেই মনে রাখতে পারেন না। যখনই তিনি আপনার রেস্তরাঁতে ঢুকবেন আপনি ওর মাথার ওপর কল্পনা করুন বিন. ওর মাথার ওপর একবার এই কল্পনার জাল বুনে ফেলতে পারলে জীবনেও আর ওর নাম ভুলবেন না।
আরেকটি জনপ্রিয় নেমনিক্স হলো রোমান রুম পদ্ধতি। ‘নাম’ এবং ‘সংখ্যা’র পর আমরা অনেক সময় ভুলে যাই জিনিসের নাম। এই পদ্ধতি অনুযায়ী আপনার বাড়ির কোনো ঘর কিংবা বিশেষ কোনো স্থান ওই বস্তুর প্রেক্ষাপট হিসেবে জুড়ে দিন, দেখবেন ঠিক মনে রাখতে পারছেন। যেমন ধরুন আপনি দোকানে গিয়েছেন দুধ, ময়দা আর পাউরুটি কিনতে। ভাবুন না আপনার তিন বছরের দস্যি ছেলের ময়দা মাখা মুখ, ময়দাকে পাউডার বানিয়ে মনের সাধে খেলছে। বসার ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই আঁতকে উঠলেন, আপনার দামি কার্পেটে দুধের স্রোত বইছে, পাউরুটির টুকরো নিয়ে বাড়িময় ছুটে বেড়াচ্ছে আপনার আদরের ককার্স সপ্যানিয়েল। যত মজার ছবি ভাবতে পারবেন তত ভালো মনে রাখতে পারবেন।
বুদ্ধি বাড়াতে মগজের ব্যায়াম
১০-১২ বছরের একটি ছেলে বোর্ডে বড় বড় গুণের অংক দ্রুত তালে করে যাচ্ছে। তার পাশেই অন্য একটি বোর্ডে ব্যাংকের এক কর্মী। হাতে ক্যালকুলেটর। তিনিও একই গুণের অংক করে যাচ্ছেন। কিন্তু ওই বাচ্চা ছেলেটির সঙ্গে সমানতালে নয়, অনেক পিছিয়ে। অংক শেষ হওয়ার পর ভদ্রলোক যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। মুখ দিয়ে একটি কথা বেরিয়ে এলো অবিশ্বাস্য। শুধু গুণ নয়, বড় বড় অংকের সমাধানও কয়েক মুহূর্তে। একেবারে নির্ভুলভাবে। এরকম আশ্চর্য দ্রুতগতিতে অংক কষার পদ্ধতি দেখা গেল অংক প্রতিযোগিতার এক অনুষ্ঠানে।

শিশুদের সার্বিক মানসিক বিকাশের মাধ্যমে অংকসহ সমস্ত পাঠ্য বিষয়ে পটু করে তুলতে নানা ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের ভূমিকা অনন্য। এর ফলে মনঃসংযোগ তৈরি, স্মৃতিশক্তি বাড়ে, দ্রুত পড়তে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অংক ভীতি দূর করে।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...