সাদেক সাহেব একটি প্রতিষ্ঠানের
স্টোরকিপার। বড় মনের একজন লোক। অফিসের পিয়ন হতে শুরু করে একদম বড় সাহেব
পর্যন্ত সবার সাথে প্রচণ্ড খাতির। এ বাড়তি খাতিরের কারণে সাদেক সাহেবকে
অনেক সময় নানা কিছু খেসারত দিতে হয়। যেমন কেউ ছুটিতে গেলে দায়িত্ব তাকেই
নিতে হয়। প্রতিবারেই এমনটি ঘটে। সাদেক সাহেব এটিকে তেমন বেশি একটা কষ্টের
মনে করেন না। কিন্তু সব দিন তো আর সমান হয় না। সেদিন তিনি দায়িত্বে ছিলেন
অফিসের পাবলিক রিলেশন অফিসারের। ছুটির ঠিক ওইদিনই ঢাকায় একটা প্রাইভেট
ভার্সিটির এমবিএর ছাত্ররা এসেছে প্রতিষ্ঠানটি সফরে, তাদের প্রতিষ্ঠানের
কর্মকাণ্ড বোঝাতে হবে। পনেরো জন ছাত্রের সামনে বক্তৃতা দিতে হবে। এমনটি তো
তিনি ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তার তো বক্তৃতাদানের অতীত কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
তাহলে কী হবে? শরীর খারাপের অজুহাতে তিনি কোনো রকমে সে যাত্রা রেহাই পেলেন।
লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া কি আসলেই ভয়ের? সবার দ্বারা কি তা সম্ভব হয়ে ওঠে
না? এ ক্ষমতা কি জন্মগত? কেউ কি চেষ্টা আর সাধনা করে এ ক্ষমতা অর্জন করে
নিতে পারে? যারা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে থাকেন তাদের একদম
সাদামাটা জবাব-একটু উদ্যোগী হলেই আপনিও ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারেন। অনেক
লোকের সামনে একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার ক্ষমতা আপনিও
রপ্ত করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়তি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিষয়বস্তুআপনি যদি শিক্ষানবিশ বক্তা হয়ে থাকেন তাতে সাবলীল বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রথম শর্ত হলো বক্তব্যের বিষয়বস্তু হতে হবে একদম সহজ-সরল। যে কোনো বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হলো শ্রোতাদের তথ্য দেয়া। তাতে বড়জোর দুই বা একটা নতুন তথ্য থাকাই যথেষ্ট। ভারী বক্তৃতা কেবল শ্রোতাদের মনাকর্ষণ হারায় না, বক্তা এতে সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে। বক্তাকে দুটো দিক অবশ্যই জানা থাকা চাই। প্রথমে আপনাকে পরীক্ষা করে নিতে হবে এক বা দুটি বাক্য দিয়ে পুরো প্রসঙ্গ উপস্থাপন করতে পারেন কি না, মানে মন্তব্য প্রসঙ্গটা একদম স্বচ্ছ তথ্যনির্ভর আর লক্ষ্য অভীষ্ট হওয়া চাই। আপনি যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে যদি আপনার একদম স্বচ্ছ পরিষকার ধারণা না থাকে সে ক্ষেত্রে বক্তৃতা দেয়ার চেষ্টাই করা উচিত নয়। এতে আপনি শ্রোতাদের কাছে হাস্যাসপদ পাত্র হয়ে দাঁড়াবেন। সুতরাং বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বিষয়বস্তু একবার পরখ করে নিন, তা হতে হবে সরল, অনেক বেশি তথ্য সম্ভার করে তা যেন ভারি হয়ে না যায়, অল্প কথায় বোঝানো যায় আর শ্রোতাদের শোনানোর আগে বক্তা যেন এ আত্মবিশ্বাস রাখেন, যা বলতে যাচ্ছেন সে সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অবহিত।
সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা
আপনার বক্তব্য নাতিদীর্ঘ বা অনেক বড় যেমনই হোক আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কোন পয়েন্টের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন। সামনে পুরো লিখিত বক্তব্য রেখে বক্তৃতা দেয়ার চেয়ে মঞ্চে না যাওয়াটাই শ্রেয়। বক্তব্য দেয়াকালে আপনার দৃষ্টি থাকবে দর্শকের দিকে। সাথে ছোট কাগজ বা চিরকুট থাকবে। তাতে শুধু পয়েন্টগুলো সাজানো থাকবে। এতে করে বিষয়বস্তু উপস্থাপনার বিন্যাস আর সাবলীলতা অক্ষুণ্ন থাকবে।
পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট সাইকোলজিস্টরা এ শিরোনামে একটা অদ্ভুত উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাদের উপদেশ, বক্তব্যের একদম শেষ কথা ছোট কাগজের ওপরে লিখে রাখা। এর কারণ বহুবিধ। বক্তব্যের একদম শেষ কথা শ্রোতারা সবচেয়ে বেশি স্মরণে রাখে। এ মন্তব্যই শ্রোতাদের সর্বাধিক প্রতিক্রিয়ান্বিত করে। কোনোভাবেই তা যেন বাদ পড়ে না যায় বা তাড়াহুড়োর কারণে খণ্ডিত হয়ে না যায়। চিরকুটের একদম মাথায় লিখে রাখার কারণে পয়েন্ট ভিত্তি করে বক্তা যেটাই বলুক কিন্তু বক্তব্য সম্ভাব্যমুখী থাকে, এটি সব সময় স্মরণে থাকে। এটি বক্তার আত্মবিশ্বাস অনেক মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
বক্তব্য সংক্ষিপ্ত রাখুন
সাবলীল বক্তৃতা দেয়ার তৃতীয় শর্ত হলো তা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ শ্রোতারা দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, এমনকি বক্তৃতার বিষয়বস্তু যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন। কারণ দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতার ক্ষেত্রে শ্রোতাদের মাঝে বিরক্তির প্রকাশ শুরু হয়ে যায়। তা আপনার বক্তব্যদানের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে আপনার নার্ভাসনেস ভাব আরো প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।
গবেষকদের উপদেশ, ভালো বক্তা হতে চাইলে যে কোনো বক্তব্য বারো মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা কোনোভাবেই উচিত নয়। সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশভেদে এতেও বাড়তি কাটছাঁটের দরকার হতে পারে। সিডিউল বক্তব্য, হলঘরে এয়ারকন্ডিশনার নষ্ট, শ্রোতারা গরমে অস্থির- এ ক্ষেত্রে বক্তব্য যত ছোট করবেন, ততই লাভ আপনার। দর্শকদের করতালি আপনাকে আশ্বস্ত করে তুলবে, পাশাপাশি মঞ্চে আপনি অনেক বেশি সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন।
কৃত্রিমতা পরিহার করুন
বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের কৃত্রিমতা একদম সচেতনভাবে পরিহার করা চাই। তবেই আপনি স্বচ্ছন্দ্য থাকতে পারবেন। অভিনয় করতে গেলে এ বানানো কৃত্রিমতা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে আপনার কাছে। আপনি হতাশ হবেন, আত্মবিশ্বাস কমে আসবে। যে গল্প আপনি নিজ অন্তর হতে হাসির মনে করেন না, কখনোই আশা করতে যাবেন না শ্রোতাদের কাছে তা হাসির হবে। বক্তব্যে পরিবেশিত তথ্য যদি আপনার কাছে চমকপ্রদ মনে না হয়, দর্শকদের কাছে তা চমকপ্রদ হবে কখনোই এমনটি ভেবে বসবেন না।
লেখক রবার্ট ফ্রস্ট একটা সুন্দর কথা বলেছিলেন ‘যে হৃদয়বিদারক কাহিনী লেখকের চোখের জল ঝরায় না, পাঠকদের বেলায়ও তেমনটি ঘটে।’ ঠিক এ প্রসঙ্গ চলে পাবলিক সিপকিং-এর বেলাতে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু যদি আপনাকে সত্যি সত্যিই কান্নাতুর করে, শ্রোতারাও তাতে আপনার অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেবে। আসলে বক্তার মনে বিশেষ অনুভূতি সঞ্চারের দরকার। আপনি বক্তা, সামনে একরাশ শ্রোতা, আপনি মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন শ্রোতাদের এমন কোনো অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য যেটি আপনি জানেন কিন্তু শ্রোতারা অজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে শ্রোতাদের তথ্য জানালেই চলবে না, আপনার পুরো অনুভূতি ভাগাভাগি করে নেয়া চাই। এ ক্ষেত্রে ‘আমি’ ব্যবহার করুন, প্রকাশ করুন, এ অভিজ্ঞতার অনুভূতি থ্রিল, ভয়, অনুশোচনা।
সূচনার পর্ব
বক্তব্যের শেষের মন্তব্যের মতো সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হলো সূচনা অংশ। কারণ বক্তার সাথে শ্রোতার যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে তা নির্ধারিত হয় এর দ্বারা। তারা আপনার সম্পর্কে একটা ইমপ্রেশন গড়ে নেয়। এটি অনেকমাত্রায় প্রভাবিত করবে বক্তার প্রতি শ্রোতার মিথস্ক্রিয়তার ধরন। এ ক্ষেত্রে কয়েক দিক নজর রাখতে পারেন।
মঞ্চে উঠে অবশ্যই দর্শকদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসবেন। মনে রাখবেন হাসিমুখে তাকালে আশপাশের লোকজন এমন অভিব্যক্তিই উপহার দেবে। যদি আপনি মুখ গোমড়া, ভারি করে রাখেন সে ক্ষেত্রে শ্রোতারা আপনার বক্তব্য শুরু হওয়ার আগ হতেই একটা নেতিবাচক ধারণা গড়ে নেবে মনের মাঝে।
উপস্থাপকের পরিচিতিকালে মাথা হেলিয়ে তাকে সম্বোধন করবেন। ধন্যবাদ দিতে যেন ভুল না হয়। হতে পারে এগুলো একদম মামুলি ব্যাপার কিন্তু শ্রোতারা সূচনাপর্বের এসব সূক্ষ্ম দিক গভীরভাবে দেখে থাকে।
অতঃপর বক্তৃতা দেয়ার পালা। যতই তাড়া থাকুক একটু বিলম্ব দিন। অন্তত ত্রিশ সেকেন্ডের নীরবতা, এর লক্ষ্য একটাই শ্রোতারা যেন আপনার ওপর পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারে। সামান্যক্ষণ বিরতি দেয়া হলে ক্ষণিককালের জন্য শ্রোতার মনে অনুভূতি খেলে যায়- ‘বক্তা কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কানে এসে পৌঁছবে।’ বক্তার মনের কথাও এটিই। ক্ষণিকের নীরবতাকালীন আপনার জন্য করণীয়তা হলো শ্রোতাদের সাথে চোখে চোখ রাখা। এক্ষেত্রে সামনের শ্রোতাদের মধ্য হতে গুটিকতক ঠিক করে নিন-একজন ডান দিকে, একজন বাম দিকে, একজন ঠিক মাঝখানের। এ চোখ মেলানো হবে ক্ষণিকের। অতঃপর আপনার দৃষ্টি হাজার শ্রোতার চোখের মাঝে হারিয়ে যাবে।
বক্তৃতা মানে পাঠদান নয়
বক্তাকে প্রথমে বক্তা আর সংবাদ পাঠক এই দুটোর মধ্যকার ফারাক বুঝতে হবে। লিখিত বক্তব্য পড়া হলে বক্তার সাবলীলতা, অনুভূতি চাপা পড়ে যায়, শ্রোতার সাথে চোখে চোখ মেলানো হয় না বলে বক্তব্য কেমন যেন নীরস বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। সার্থক বক্তারা কখনোই লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না। তার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চিরকুট লিখে নেয়াকে শ্রোতারাও কামনা করে। কারণ এতে কোনো প্রসঙ্গ বাদ যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না, বক্তব্য অনেক বেশি সুবিন্যস্ত আর গোছালো হয়ে থাকে।
রিলাক্স থাকা চাই
বক্তৃতা দেয়ার সময় যতই কাছে চলে আসে, নতুন বক্তার মনের শিহরণ, ভয় ক্রমেই বেড়ে যায়। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। শরীর, হাত-পা ঘামতে শুরু করে। মনের অজান্তে কোনো সময়ে হাতের নখ আমাদের দাঁতের মাঝে চলে যায়। অনেক লোকের সামনে দাঁড়ানো অনেকটা মানসিক চাপের, বিশেষ করে আপনি যদি এতে অভ্যস্ত না থাকেন। এ ক্ষেত্রে একদম রিলাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার একদম জোরে জোরে লম্বা দম নেয়ার দরকার নেই। হাল্কা সুস্থমাত্রার দম নিন, তবে তা হতে হবে নিয়মিত ছান্দিক। দেখবেন আপনি অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এটি নিশ্চিত করতে পারলে কে আর আপনাকে ঠেকায়? তবে মনে রাখবেন- লোকের সামনে বক্তৃতা দেয়া, যেটিকে সহজ ইংরেজিতে বলা হয় ‘পাবলিক সিপকিং’-এটি অবশ্যই একটা স্কিল বা বিশেষ গুণ। কিন্তু মিউজিক্যাল ক্ষমতা বা অঙ্কন উৎকর্ষতার মতো এটি কোনো জন্মনির্ভর ট্যালেন্ট নয়। চর্চা আর উদ্যোগ আপনার মাঝেও এ স্কিল গড়ে দিতে পারে। শর্ত একটাই যেখানেই সুযোগ পান দু’চারটি কথা বলতে পিছপা হবেন না। তা হোক বিজনেস মিটিং, লাঞ্চ পার্টি বা খেলার মাঠ।
জন মে বলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাড়াজাগানো সাইকোলজিস্ট হলেন জন মে। তার সারাজীবনের গবেষণার মূল বিষয়বস্তু হলো ‘পাবলিক সিপকিং’। তার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে তিনি মূলত এটি শিখিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে তার উপদেশ-শ্রোতার সামনে একদম বন্ধুর ভূমিকা নিন। হাসুন। অনুভূতি, অভিব্যক্তি প্রকাশ করুন। এমনভাবে নিন যেন সামনের শ্রোতামহল আপনার অনেক দিনের চেনা।
মঞ্চে দাঁড়ালে কমবেশি নার্ভাসনেস সবারই আসে। আপনার করণীয়তা হলো এ নার্ভাসনেস সামাল দেয়া। লৌহ মানবী বলে পরিচিত ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার মার্গারেট থ্যাচার প্রায়ই বলতেন, ‘যখন কোনো জায়গাতে আমাকে বক্তৃতা দিতে হবে এমন অবস্থার সমমুখীন হলে আমার মাঝে কমবেশি মাত্রার নার্ভাসনেস দেখা দেয়।’
যারা বক্তৃতা দিতে গিয়ে খুব বেশি নার্ভাস হয়ে যান তাদের প্রতিকার হতে পারে-আপনি ধরে নিন আপনি নন অন্য কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে। মনে মনে ভাবতে পারেন-এমনি একজন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে, যাকে আপনি তার বক্তৃতার জন্য প্রশংসা করে থাকেন। শ্রোতাদের ওপর আপনার কর্তৃত্ব বজায় রাখা চাই। শুরুতে ক্ষণিক বিরতি দিয়ে বক্তব্য শুরু করুন যেন শ্রোতারা আপনার ওপর মনোনিবেশ করতে পারে, মাঝে মাঝে শ্রোতাদের মধ্যকার কয়েকজনের সাথে একদম সোজাসুজি চোখে চোখ মেলান। আপনাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি বক্তব্য নিয়ে এসেছেন শ্রোতাদের জন্য, যাদের কাজ হলো তা মন দিয়ে শোনা। আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ চাই। মঞ্চে আপনার দাঁড়ানোর ভঙ্গিমাতে যেন এর প্রকাশ ঘটে। যখন শ্রোতা পুরোমাত্রায় দেখা যায় সে ক্ষেত্রে শ্রোতাদের অংশগ্রহণেও বাড়তি সক্রিয়তা চাই। এর সুযোগ নিতে আপনি উঁচু ডেস্কের পেছনে না থেকে সিপকার হাতে একদম খালি মঞ্চে চলে আসুন।
বক্তৃতায় কোন প্রসঙ্গের পর কোন প্রসঙ্গ আনবেন সে ব্যাপারে আগাম পরিকল্পনা নিন। ভালো হয় যদি পয়েন্টগুলো একটা ছোট কাগজে লিখে নেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত, সরল ও বোধগম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। আপনার বক্তৃতার মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততার প্রকাশ থাকা চাই। এতে অনুভূতির প্রকাশ প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে ও বক্তৃতা হয়ে ওঠে প্রাণময়। গলার স্বরের দিকেও লক্ষ রাখা চাই। মাঝারি মাত্রাই সর্বোত্তম। তবে ঠোঁট, জিহ্বা, দাঁত আর গলবিলের সর্বোচ্চ ব্যবহার চাই যেন বাচনভঙ্গি প্রাণময়তা পায়। যতক্ষণ বক্তব্য রাখবেন, ততক্ষণই দর্শকের দিকে দৃষ্টি দেবেন। কেউ যেন দৃষ্টির বাইরে না যায়, এমনকি মঞ্চের বিপরীতে কেউ থাকলেও অন্তত একবারের জন্য হলেও তার দিকে তাকাবেন।
সময়ের দিক ভুলে গেলে চলবে না। বিজনেস কনফারেন্সে বড়জোর সর্বোচ্চ একঘণ্টাকাল বক্তৃতা রাখা যায়। সামাজিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা যেন কোনোভাবেই দশ মিনিটের বেশি দীর্ঘায়িত করা না হয়। সব কথার শেষ কথা এর চর্চা আর অনুশীলন। এর কোনো বিকল্প নেই, সুতরাং আর বিলম্ব কেন।
No comments:
Post a Comment