Thursday, November 15, 2012

চূড়ান্ত সময়ের রিভিশন কৌশল for PEC Exam

রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার্থীদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা। চিরাচরিত বার্ষিক ও বৃত্তি পরীক্ষার পরিবর্তে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং বৃদ্ধি করেছে প্রতিযোগিতার মনোভাব। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কমন পড়বে এবং পুরো উত্তর করতে পারব।  এ বছর প্রথমবারের মতো ১০ নম্বরের একটি যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন সংযোজন করা হবে। তাই শিক্ষার্থীদের অবশ্যই এ প্রশ্নের উত্তরে মুখস্থবিদ্যা পরিহার করে অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে চিন্তা, অনুধাবন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর উত্তর দিতে হবে। কেননা উত্তরপত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভালো উপস্থাপনাই একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অধিক নম্বর প্রাপ্তির জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সময়ের প্রতি সচেতন হতে হবে। একটি প্রশ্নোত্তর খুব বেশি লিখতে গিয়ে অন্য প্রশ্নোত্তরের মান খারাপ করা যাবে না। সব উত্তরের মান একই ধরনের হলে ভালো ফল করা যাবে।

সারাবছরের অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের বিনিময়ে তোমরা যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ, তার সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় গাইডলাইন যুক্ত হলে তোমরা নিঃসন্দেহে পরীক্ষায় ভালো করবে। কারণ এত কষ্টের পর পরীক্ষার আগে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তো সবই শেষ হয়ে গেল। এ জন্য অভিভাবকরা সচেতন থাকবেন।  সন্তানদের মানসিক চাপমুক্ত রাখবেন। তোমরা কোন বিষয়ের কতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং সেগুলোর মানবণ্টন কত, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত আছ। মনে রাখবে পূর্বপ্রস্তুতির ওপরই পরীক্ষায় সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। সময়ের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত পড়াশোনা করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করবে। ছাত্রজীবনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সময়ের সদ্ব্যবহারের ওপর। সিলেবাসভুক্ত সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে একটু বেশি পরিশ্রম করলে অন্যদের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া যাবে।

সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক বৃত্তি নির্ধারণ করা হবে। কাজেই প্রতিটি বিষয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দেবে। জেনে নাও পরীক্ষার আগের বাকি দিনগুলোতে এবং পরীক্ষার সময় কী করণীয়।
বেশি রাত জেগে পড়বে না। অকারণে দৌড়ঝাঁপ করবে না। সময়মতো বিশ্রাম নেবে। যে ধরনের কলম দিয়ে লিখে তুমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করো, সে ধরনের বেশ কয়েকটি কলম কিনে এখন থেকে শুধু সেই কলম ব্যবহার করবে। কলমগুলো গতিশীল করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখবে। কারণ নতুন কলমে লেখা ভালো হয় না। লেখার গতিও কমে যায়। পরীক্ষক তোমাকে নয়, বরং তোমার উত্তরপত্র দেখে মূল্যায়ন করবেন। তাই হাতের লেখা স্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন হতে হবে। বানান ভুলের জন্য নম্বর কমে যায়। তাই জটিল ও কঠিন বানানগুলো বারবার অনুশীলন করবে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ করবে না। বাংলা বিষয়ে সব প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেয়ার চেষ্টা করবে। অযথা অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে উত্তর বড় করে লিখতে গিয়ে কোনো প্রশ্ন বাদ দেয়া ঠিক হবে না।
গণিত মুখস্থ করার বিষয় নয়। তাই গণিতের সমস্যাগুলো বুঝে যথাযথ নিয়ম বজায় রেখে নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।
জ্যামিতির চিত্র, বিজ্ঞানের প্রাসঙ্গিক চিত্র, সমাজের মানচিত্র পেনসিল দিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করবে। উত্তরপত্রের মার্জিন টানতেও পেনসিল ব্যবহার করবে। পরিবেশ পরিচিতি সমাজ, পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক অংশের জন্য পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনীতে প্রদত্ত নৈর্ব্যক্তিক ছাড়াও পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের তথ্যবহুল বাক্যগুলো আত্মস্থ করতে হবে।
পরীক্ষার আগের দিন বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল, স্কেল, কম্পাস ও রাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ গুছিয়ে রাখবে। পরীক্ষা শুরুর অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে পৌঁছার চেষ্টা করবে। পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশের আগে প্রয়োজনে টয়লেট সেরে নেবে।উত্তর লেখার আগে অবশ্যই প্রশ্নপত্রটি ভালোভাবে পড়বে। সব প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে জানা থাকলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই ভালো।
যে প্রশ্নের উত্তর ভালো জানা রয়েছে, সেগুলোই আগে লিখবে। লক্ষ্য রাখবে, সংক্ষেপে উত্তরের মধ্যে যেন রচনামূলক প্রশ্ন কিংবা রচনামূলক উত্তরে সংক্ষেপে উত্তর লেখা না হয়। উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য ৫ মিনিট এবং পরীক্ষা শেষে রিভিশনের জন্য ১০ মিনিট অর্থাৎ (৫+১০)=১৫ মিনিট সময় বাদ দিয়ে ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে সব উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। অতিরিক্ত লুজশিট নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃষ্ঠা নম্বর দেবে। উত্তরপত্র জমা দেয়ার আগে লুজশিটের নম্বর অনুযায়ী সাজিয়ে মূল খাতার সঙ্গে স্টাপলার পিন দিয়ে আটকে দেবে বা সুই ও সুতা দিয়ে সেলাই করে দেবে।

পরীক্ষার ঠিক আগে বাবা-মায়ের করার মতো কিছু প্র্যাকটিক্যাল কাজ রয়েছে। পরীক্ষার টাইম-টেবিলটা বাবা-মা’রা যেন ভালো করে দেখে নেন। কোন পরীক্ষা কবে, ক’টায়, সে সম্পর্কে একেবারে ঠিকঠাক জানতে হবে। পরীক্ষার দিন সকাল বেলা যেন তাড়াহুড়ো না করতে হয়, সেজন্য আগের দিন থেকে কলম, অ্যাডমিট কার্ড, ক্যালকুলেটর, যা যা দরকার সব রাখতে হবে গুছিয়ে। পরীক্ষার কেন্দ্র কোথায়, চেনা না থাকলে আগে দেখে রাখতে হবে, যাতে পরীক্ষার প্রথম দিন খুঁজতে না হয়।
পরীক্ষার আগের দিনেগুলোতে এমন কিছু করা ঠিক নয়, যাতে পরীক্ষার্থী উত্তেজিত হয়, তার ভাবনা-চিন্তার স্বাভাবিক ছন্দটা বিঘিœত হয়। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠান বা পার্টি, কিংবা কোনো দুর্ঘটনা বা খারাপ সংবাদ নিয়ে পরিবারে আলোচনা, হইচই, এ বিষয়গুলো আপনার সন্তানের মনকে বিক্ষিপ্ত করবে। মনকে শান্ত, স্থির রাখা দরকার।

পরীক্ষার এই শেষ সময়ে সব বিষয়ের একটা করে ভালো রিভিশন দেয়া খুবই জরুরি। কিন্তু বিষয় অনুসারে সময় এত কম যে ভাবছ কীভাবে সব বিষয়ের রিভিশনটা শেষ করবে? যেভাবে শেষ মুহূর্তের রিভিশনটা করে নিতে পার তার কিছু কৌশল
১. বারবার পড় এবং বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরগুলো লেখ। এতে করে পাঠটি ভালোভাবে তোমার স্মৃতিতে গেঁথে যাবে।
২. সাজেশন অনুযায়ী পড়ার নোটগুলোর একটা করে ছোট নোট নিয়ে নাও।
৩. বিষয়ভিত্তিক একইভাবে না পড়ে একটি বিষয় নিয়ে একেকভাবে পড়।  না বোঝা কোনো ব্যাপার থাকলে তা দ্রুত সমাধান করে নাও।
৪. প্রতিটি বিষয়ের মূল অধ্যায়গুলোর একটা নোট করে নাও। সে অনুপাতে বিভিন্ন টপিককে আলাদা করে নিয়ে পড়।
৫. সুযোগ থাকলে সহপাঠীর সঙ্গে বসে রিভাইজ করো। এতে  দুজনের ভুল-ভ্রান্তি খুব সহজে নিজেরাই খুঁজে পাবে। পড়াটা ভালোভাবে আয়ত্ত  করতে অনেক সুবিধাও পাবে পরস্পর।
৬. প্রতিদিনের রিভাইজের একটা আপডেট রাখ। পরবর্তী দিন নতুন পাঠে যাওয়ার আগে পুরনো পাঠগুলোর একটা ছোট নোট করে একবার চোখ বুলিয়ে নাও। এভাবে প্রতিদিন চালিয়ে গেলে কোনো অংশই বাদ পড়বে না। এতে অনেক আয়ত্ত হবে।
৭. পরিবারের কারো সঙ্গে বা কোনো সহপাঠী কিংবা শিক্ষকের সঙ্গে বসে প্রশ্ন-উত্তরের একটা খেলা খেলা যেতে পারে। একজন তোমাকে শুধু প্রশ্ন করবে আর তুমি উত্তরগুলোর একটা সামারি করে তাকে বলবে। এভাবে খেলাটি কয়েকদিন নিয়মিত খেলে গেলে শেষ মুহূর্তের এই কঠোর পরিশ্রমের সময়টাতে আনন্দের ভেতর থেকেও পড়াটা চালিয়ে যেতে ভালোই লাগবে।
 

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...