Sunday, November 18, 2012

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী : বাংলা প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্ন
বাংলাদেশ
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
সীমান্তবর্তী ছোট্ট গ্রাম পানবাড়ি। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সংকীর্ণ নদী। গ্রামের মানুষগুলো প্রকৃতির মতোই বড় সহজ-সরল। কয়েক ঘর উপজাতি আর হিন্দু ছাড়া গ্রামের সবাই মুসলমান। উপজাতিরাও ভালো বাংলা বলে। না বললে বোঝার উপায় নেই কে হিন্দু, উপজাতি, কেই বা মুসলমান। গ্রামের বর্ষীয়ান লোক মুক্তিযোদ্ধা শুকান মিঞাকে সবাই সমাদর করে। গ্রামসুদ্ধ সবারই সে শুকান চাচা। মাঝেমধ্যে চাঁদের আলোয় গল্পের আসর বসে। শুকান চাচার মুখে '৭১-এর বীরত্বগাথা শুনে ছেলেমেয়েরা খলখলিয়ে হেসে ওঠে, মুহূর্তেই সে হাসি থেমে যায়- চাচা তখন রক্তঝরা মুক্তিসেনার কষ্ট শোনায়। শেষ রাতে চাঁদের আলো ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে। গভীর নিস্তব্ধতার মাঝে শিশুদের অসহায় দৃষ্টি গিয়ে পড়ে মা-বাবার সজল চোখে। নিঃশব্দ পৃথিবীতে দুঃখিনী মায়ের কাতর কণ্ঠে ভেসে আসে- আহা রে! আহা রে!
ক. 'বাংলাদেশ' কবিতাটির উৎস কী?
খ. 'বাংলাদেশ' কবিতায় 'কোটি মানুষের সমবায়ী সভ্যতার ভাষা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের পানবাড়ি গ্রামের জীবনযাত্রার সঙ্গে 'বাংলাদেশ' কবিতার কোন বিষয়টির মিল/সাদৃশ্য রয়েছে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. 'উদ্দীপকটিতে 'বাংলাদেশ' কবিতার ভাববস্তু প্রতিফলিত হয়েছে'- মন্তব্যটির ক্ষেত্রে তোমার মতামত উপস্থাপন করো।
উত্তর : ক) 'বাংলাদেশ কবিতাটি কবির 'অনিঃশেষ' কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
উত্তর : খ) 'বাংলাদেশ' কবিতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের এক নিখুঁত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
বাঙালির বাঙালিত্বের প্রথম পরিচয় তার মাতৃভাষা। ভাষার ঐক্যই সব বাঙালিকে প্রধানত অভিন্ন আপন সত্তায় আবদ্ধ করে রেখেছে। হাজার বছরের বাংলা ভাষার মাধুরী, বাঙালি সংস্কৃতি, জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতিই এখানকার বীর সন্তানদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। কবি 'বাংলাদেশ' কবিতায় আপামর বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ বাংলা ভাষাকেই 'কোটি মানুষের সমবায়ী সভ্যতার ভাষা' কথাটির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন।
উত্তর : গ) সমাজসচেতন আধুনিক কবি অমিয় চক্রবর্তীর 'বাংলাদেশ' কবিতাটিতে কবির স্বদেশের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগ, বাঙালি সংস্কৃতি ও গণমানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে।
কবিতাটির প্রথম স্তবকেই কবি আবহমান বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, রূপময় প্রকৃতি, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জনজীবনের রূপচিত্র এঁকেছেন। আবহমান বাংলার এই শাশ্বত রূপটিই উদ্দীপকে সুন্দরভাবে ফুঠে উঠেছে।
'বাংলাদেশ' কবিতাটিতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও সহজ-সরল জনজীবন চিত্রিত হয়েছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। বস্তুত বিচিত্র জনজীবনে ঐক্য, সংহতি আর সম্প্রীতির চিত্রটিই এখানকার সমাজজীবনে সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দিক। বাংলার ঘরে ঘরে নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। আবার এ জনসমষ্টির উদ্ভবও বিচিত্র নৃগোষ্ঠীর বংশধারায়। কিন্তু এখানে অভিন্ন এক সংস্কৃতির বন্ধনে তারা সবাই এক আত্মা, একে অপরের পরম আত্মীয়। তাই কবি বলছেন, 'কল্যাণীর ধারাবাহী যে মাধুরী বাংলা ভাষায়/গড়েছে আত্মীয় পল্লী যমুনা-পদ্মার তীরে তীরে।' উদ্দীপকে বর্ণিত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম পানবাড়ি যেন তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। শুধু যমুনা-পদ্মার তীরেই নয়; বরং বাংলাদেশের সংকীর্ণ এক নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক আত্মীয় পল্লীর নাম হলো পানবাড়ি। এ গ্রামের মানুষগুলো যেমন সহজ-সরল, তেমনি হিন্দু-মুসলমান-উপজাতি সবাই মিলে যেন 'বহু মিশ্র প্রাণের সংসার' গড়ে তুলেছে। উপজাতিদের কণ্ঠে বাংলা ভাষার যে মাধুরী, তাতে কেউ বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই যে কে হিন্দু, কে মুসলমান আর কেই বা উপজাতি। আবহমান গ্রাম-বাংলার এ চিরায়ত বৈশিষ্ট্যই দ্যুতিময় হয়ে উঠেছে কবিতার পঙ্ক্তিতে- 'সেই বাংলাদেশে ছিল সহস্রের একটি কাহিনী।' বস্তুত বাংলার জনগণের অন্তরের সঙ্গে একাত্মভাবে মিশে যাওয়া চিরকালের মর্মবাণী হচ্ছে- সম্প্রীতি ও শুভবোধ। বাঙালির এই আত্মিক পরিচয়ের অনুসন্ধান মেলে তাদের আচরিত জীবন ও কর্মের মাঝে। স্বাভাবিক জীবনে, উৎসবে-আনন্দে, বিপদে-আপদে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে, দাঙ্গায়, যুদ্ধে কিংবা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই বাঙালি একে অপরের পাশে দাঁড়ায় একাত্ম হয়ে। ঠিক যেন শুকান চাচার মতো। বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে চেতনা শুকান চাচা যেন তারই প্রতিরূপ। প্রকৃত প্রস্তাবে 'বাংলাদেশ' কবিতায় ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির এই সম্প্রীতি ও শুভবোধের জাগরণটিই কাব্যিক ব্যঞ্জনায় প্রস্ফুটিত। উদ্দীপকটিও সমবৈশিষ্ট্যে দীপ্তোজ্জ্বল।
উত্তর : ঘ) রবীন্দ্র যুগের অন্যতম কবি অমিয় চক্রবর্তীর 'বাংলাদেশ' কবিতায় চিত্রিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র।
কবিতাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিষয় হিসেবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গকে ধারণ করা হয়েছে। মূলত একদিকে আবহমান বাংলাদেশের পরিচয় অন্যদিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়- এটাই কবিতার ভাববস্তু বা আখ্যান। আর তারই সারসংগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে আলোচ্য উদ্দীপকে।
কবিতার প্রথম স্তবকেই কবি এ দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, রূপময় প্রকৃতি, অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জনজীবনের রূপচিত্র এঁকেছেন। নানা সম্প্রদায়ের বসতিসম্পন্ন সেসব গ্রামকে অভিন্ন আত্মিক বন্ধনে বেঁধেছে বাংলা ভাষা। অভিন্ন সংস্কৃতির বন্ধনে তারা সবাই এক আত্মা, পরমাত্মীয়। তাদের অন্তরের সঙ্গে একাত্মভাবে মিশে যাওয়া চিরকালের মর্মবাণী হচ্ছে সম্প্রীতি ও শুভবোধ। এই শুভবোধের পরিচয়টি দীপ্যমান হয়ে ফুটে উঠেছে উদ্দীপকের পানবাড়ি গ্রামের জনজীবনে। সেখানে নানা জাতির বসবাস থাকলেও অভিন্ন ভাষা ও সম্প্রীতির কারণে তাদের আলাদা করার কোনো উপায় নেই। প্রকৃতপক্ষে সমাজসচেতন কবি কবিতার ভিন্ন ভিন্ন পঙ্ক্তিস্রোতে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাংলার সমাজজীবনের টুকরো টুকরো ছবি এঁকে এক গভীর সত্য ও বাস্তব চিত্রের পূর্ণাঙ্গ রূপ এঁকেছেন, বলেছেন, 'মাঠে-ঘাটে শ্রমসঙ্গী নানা জাতি-ধর্মের বসতি/চিরদিন বাংলাদেশ।'
কবিতার দ্বিতীয় স্তবক শুরু হয় নাটকীয় আকস্মিকতায়- 'ওরা কারা বুনো দল ঢোকে।'- এ পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে। একদিকে বাংলার শান্ত সংহত প্রকৃতির সাধারণ রূপচিত্র অঙ্কন অন্যদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের উচ্চারণ কবিতাটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রক্তপিপাসু হানাদার বাহিনীর বর্বরতার নিখুঁত চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে কবিতার দ্বিতীয়-তৃতীয় স্তবকে। হানাদারদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের এ ধরনের কোনো চিত্র উদ্দীপকে না থাকলেও তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। গল্পের আসরে শুকান চাচা যখন গভীর রাতে 'রক্তঝরা মুক্তিসেনার কষ্ট শোনায়' তখন ছোট ছেলেমেয়েদের হাসি হঠাৎ থেমে গিয়ে গভীর নিস্তবব্ধতা নেমে আসে। বস্তুত ১৯৭১ সালের কোনো এক গভীর রাতেই পাকিস্তানি মরু-পশুরা কাপুরুষ ও উল্লুকের মতো অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই বাংলার মাটি ও মানুষের ওপর। তারা অগি্নসংযোগ, লুণ্ঠন, হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন চালিয়ে গ্রামবাংলার শান্ত-সংহত জীবনকে তছনছ করে দেয়। সে শোকের ছায়াই উদ্দীপকের বাবা-মায়ের সজল দৃষ্টিতে ভেসে উঠেছে। লাখ লাখ মানুষের উদ্বাস্তু জীবন, মৃত্যুর আর্তনাদ ও নির্যাতনের যন্ত্রণার যে হাহাকার সে হাহাকারই 'নিঃশব্দ পৃথিবীতে দুঃখিনী মায়ের কাতর-কণ্ঠে ভেসে আসে- আহা রে! আহা রে!' যদিও এত অত্যাচার করেও হানাদাররা এ দেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি; বরং জন্ম-মৃত্যুর অকৃত্রিম বন্ধনে এ দেশের কোটি কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল ভাষা, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার জন্য। অবশেষে বাঙালি জাতির প্রবল প্রতিরোধের মুখে শত্রুরাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং 'বাংলাদেশ অনন্ত অক্ষত মূর্তি জাগে'।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...