Thursday, November 22, 2012

বাংলা ২য় পত্র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা

দ্মা নদীর মাঝি
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য আজ রয়েছে বাংলা ২য় পত্রের সহপাঠ থেকে একটি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর।
মানিকগঞ্জের মধুপুর এলাকার অধিবাসী আমজাদ। এলাকার অধিকাংশ লোক মৃৎশিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অভাব-অনটনের কারণে ছেলেমেয়েকে ভালোভাবে খেতে দিতে পারে না সে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্কুলে পাঠাতে পারে না। তবে আধুনিকতার প্রভাবে মৃৎশিল্পের কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় আমজাদের পরিবারেও পরিবর্তন এসেছে। আজ তারা দুবেলা-দুমুঠো খেতে পায়। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
ক. ‘মিছা কথা কইলাম নাকিরে কুবের?’—এ উক্তিটি কার?
খ. ‘ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে— এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।
গ. আমজাদের পরিবারের স্বস্তির নিঃশ্বাসের কারণে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের জেলেদের জীবনে কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে, ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সময়ের পটভূমিতে মৃৎশিল্পীদের পরিবর্তন আসলেও “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসে জেলেজীবনে পরিবর্তন দেখা যায় না।’ উক্তিটির তাৎপর্য বিচার করো।
উত্তর: ক. ‘মিছা কইলাম নাকিরে, কুবের?’—উক্তিটি ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের জেলে ধনঞ্জয়ের।
উত্তর: খ. ঔপন্যাসিক ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান, সামাজিক অন্যায়-অবিচার ও অসংগতির প্রতি ইঙ্গিত করে আলোচ্য এ উক্তিটি করেছেন।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী কেতুপুর গ্রামের জেলেপাড়ায় বসবাসকারী জেলেরা খুবই অসহায় ও হতদরিদ্র। পাড়ার সবাই জেলে হলেও তাদের অধিকাংশই মাছ শিকারের জন্য জাল কিংবা নৌকা, কোনোটাই নেই। যে কারণে তারা প্রভাবশালী মহলের শোষণের শিকার। শীতল বাবুর মতো প্রতারকের ছলচাতুরীর মাধ্যমে বিনা পয়সায় তাদের মাছ হাতিয়ে নেয়। সময়-সুযোগমতো চালান বাবুরাও তাদের ঠকায়।
নৌকা ও জালের মালিকেরাও তাদের নানা কৌশলে ঠকায়, শোষণ আর বঞ্চনাই যেন তাদের নিয়তি। অপর দিকে, প্রকৃতিও তাদের অনুকূলে নয়। বর্ষার জল ভাসিয়ে নেয় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। নড়বড়ে ঘরগুলো সামান্য ঝড়েই বিধ্বস্ত হয়। রোগ-শোক, জ্বরা-মৃত্যু এখানকার জেলেদের নিত্যসঙ্গী। তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে মনে হয়, তাদের প্রতি ঈশ্বরও যেন মুখ তুলে তাকান না। শুধু ধনীদের দিকেই তার নজর। জেলেদের এতটাই মানবেতর জীবনযাপনে ঔপন্যাসিকের মনে গভীর দাগ কেটেছে। তাই ব্যথিত চিত্তে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ এ উক্তিটি করেছেন।
উত্তর: গ. আমজাদের পরিবারের স্বস্তির নিঃশ্বাসের কারণ ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের জেলেদের জীবনে বিন্দুমাত্রও প্রতিফলিত হয়নি।
উদ্দীপকের আমজাদের পরিবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পায় আধুনিক মৃৎশিল্প কিছুটা পরিবর্তন আসায়। এ কারণে তাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আলোচ্য উপন্যাসে জেলেদের জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। এখানে অবাধে চলতে থাকে গুটিকয়েক প্রভাবশালী শোষকের শোষণ। তাদের প্রতি যেন ঈশ্বরের কোনো দৃষ্টি নেই।
পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে বর্ণিত জেলেপাড়ায় সমতল ভূমিজুড়ে সামন্ত প্রভুর অধিকার বিস্তৃত। ভূমি ভোগের ক্ষেত্রে জেলেদের নেই কোনো ব্যক্তিস্বাধীনতা। যে কারণে একটি কুঁড়ের আনাচকানাচে ভূস্বামী কর্তৃক নির্ধারিত স্বল্প খাজনার জমিটুকুতে অন্য একটি কুঁড়েঘর উঠতে থেকে। এ যেন তাদের অনাবশ্যক সংকীর্ণ, উন্মুক্ত উদার বিশ্বে এ ছোট জাতের লোকগুলোতে শিশুর কান্না কোনো দিন বন্ধ হয় না। ক্ষুধা তৃষ্ণার দেবতা, হাসি-কান্নার দেবতা, অন্ধকার আত্মার দেবতা, তাদের পূজা কোনো দিন শেষ হয় না। জন্মের অভ্যর্থনা এখানে গম্ভীর নিরুৎসব, বিষণ্ন। জীবনের স্বাদ এখানে শুধু ক্ষুধা ও পিপাসায়, কাম ও মমতায় স্বার্থ ও সংকীর্ণতায়। গ্রামের ব্রাহ্মণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কখনো এসব হতদরিদ্রের উন্নতি লাভ বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দেয় না। অপর দিকে উদ্দীপকের আমজাদের পরিবার পেশাগত সাফল্যে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পেরেছিল এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ জেলেপাড়ার হতদরিদ্র জেলেদের নেই।
উত্তর: ঘ. ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে জেলেদের জীবনে সমাজ বাস্তবতার কারণেই কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না।
উদ্দীপকের আমজাদ একজন মৃৎশিল্পী। আধুনিকতার প্রভাবে এ শিল্পে আজ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। যে কারণে আমজাদের পরিবারের কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি হলো আয়-উপার্জন বৃদ্ধি। কিন্তু আলোচ্য উপন্যাসের জেলেদের আয়-উপার্জন বৃদ্ধির কোনো উপায় না থাকার কারণেই তাদের জীবনে পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।
আমাদের গ্রাম বাংলায় জেলে ও মৃৎশিল্পীদের অবস্থান প্রাচীনকাল থেকেই। তাদের পেশায় অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নতির সম্ভাবনা কখনোই কেউ ভাবেনি। তবে সাম্প্রতিককালে মৃৎশিল্পে আধুনিকতার প্রভাব বলতে বিপণন অলংকরণকেই বোঝানো হয়। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় এ যুগে মৃৎশিল্পীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য নানা রকমের কারুকাজ ও অলংকরণ করার কারণে এসবের চাহিদা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চাহিদা বৃদ্ধি মানেই বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি হলে লভ্যাংশও বৃদ্ধি পায়। লভ্যাংশ বৃদ্ধির ফলে সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। কিন্তু ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসের জেলেদের এ ধরনের পরিবর্তনের কোনোই সুযোগ ছিল না। এসব জেলের অধিকাংশই ছিল সহায়-সম্বলহীন হতদরিদ্র। ইলিশ মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় জাল, নৌকা বলতে কিছু ছিল না। পাড়ার হাতেগোনা কয়েকজনের জাল ও নৌকা থাকার সুবাদে তারা নিরীহদের শোষণ করত। পরের অধীনে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে কিংবা মাঝিগিরি করে কারও পক্ষেই জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না।
‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে প্রকৃতির প্রতিকূলতা এবং দরিদ্রতার নির্মম কশাঘাতে জেলেপাড়ার জেলেরা জর্জরিত থাকার কারণেই তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। মৃৎশিল্পীরা নিজেদের স্বাধীন পেশায় ইচ্ছানুযায়ী মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিক কিছু করার সুযোগ পায়। যে কারণে কিছুটা হলেও আধুনিকতার প্রভাবে নিজেদের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগাতে পারে। কিন্তু মাছ ধরা কিংবা মাঝিগিরিতে এমন কোনো সুযোগ-সম্ভাবনা নেই। তবে প্রযুক্তিগত সুবিধার মাধ্যমে জাল ও নৌকার মালিকেরা কিছু উপকৃত হতে পারে। যে কারণে সমষ্টিগতভাবে জেলেদের জীবনে পরিবর্তন দেখা যায় না।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...