একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী : ইসলাম শিক্ষারচনামূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন : ইসলামী সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ? ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো।
উত্তর : ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য একটি কল্যাণকর জীবনদর্শন। মানবজীবনের সকল স্তরে ইসলামের ব্যাপ্তি অনেক। ইসলামের অনুসারীগণ এর বিধি-বিধান অনুশীলনের দ্বারা একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মুসলিম মিল্লাতের ইসলাম সমর্থিত ও নির্দেশিত জীবনপদ্ধতিই হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি।
ইসলামী সংস্কৃতির সংজ্ঞা : ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনার আগে আমরা সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারি।
সংস্কৃতির পরিচয় : ইংরেজি culture অর্থ হচ্ছে কর্ষণ করা। cultured বা মার্জিত, আকর্ষণীয় মানুষকে মুসাক্কাফ বলা হয়। মি. বেকনের মতে : An attribute of a spirit of a man.
নৃবিজ্ঞানী Taylo-এর মতে, Culture is the complex whole which includes knowledge, belief, art, moral law, custom and any other capabilities and habits acquired by men as a member of society.
ইসলামী সংস্কৃতি : ইসলামী জীবনদর্শন ও জীবনবিধান অনুশীলনের ফলে মানুষের ব্যবহারিক জীবন ও পরিবেশে যে সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়, তা-ই ইসলামী সংস্কৃতি। দার্শনিক আবুল হাশিমের মতে, ইসলামী সংস্কৃতি হলো ইসলামী নীতি-আদর্শ ও শিক্ষানুযায়ী মানুষের দৈহিক ও মানসিক বৃত্তিসমূহের উৎকর্ষ সাধন এবং ব্যবহারিক জীবন ও প্রত্যক্ষ জড় পরিবেশে তার বাসস্থান। মোট কথা, যে সংস্কৃতি শিক্ষা-সাধনায়, সাহিত্য-স্থাপত্যে, চিত্র-ভাস্কর্যে, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইসলামী নীতি-আদর্শ ও মননশীলতার লালন করে, ব্যাপকার্থে তাই ইসলামী সংস্কৃতি।
ইসলামী সংস্কৃতির স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য : ইসলামী সংস্কৃতি বিপুল কল্যাণকামী এক অনন্য সাধারণ ঐশী সংস্কৃতি। এর স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষিত হলো_
কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি কোরআন ও হাদিসের ভিত্তি থেকে উৎসারিত। এটা মানব রচিত নয়। আর রাসুল (সা.) তা বাস্তবে রূপায়িত করে দেখিয়েছেন। এটা দেশ, কাল, জাতিভেদে সকল মানবতার সংস্কৃতি।
আদর্শভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি আদর্শভিত্তিক। ইসলাম বিশ্বমানবতার জীবনাদর্শ। তাওহিদবাদ ও একত্ববাদ এ আদর্শের ভিত্তিমূল। ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।'
ইমানভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি মুসলিম উম্মাহর মণিকোঠায় লালিত ইমান ও বিশ্বাসের ভিত্তি থেকে উৎসারিত। তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত_এ তিনটি বিশ্বাসের সমন্বয়ে ইসলামী সংস্কৃতির গোটা প্রাসাদটি গঠিত। 'যারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী, তাদের নিকট আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে।'
বিশ্বজনীন : দেশ, কাল, জাতি, বর্ণ, ধনী, নির্ধন, নির্বিশেষে ইসলামী সংস্কৃতি বিশ্বের সকল মানুষের জন্য অবারিত। এতে কারো একচ্ছত্র অধিকার নেই।
ইহকালীন ও পরকালীন অভিন্ন জীবন : ইসলামী সংস্কৃতিতে ইহ ও পরকালীন জীবন একই সূত্রে গাঁথা। তাই দুনিয়ার জীবন ও ধর্মীয় জীবন বলতে আলাদা কিছু নেই। হাদিসে এসেছে : 'দুনিয়া হলো আখিরাতের ক্ষেত্রস্বরূপ।'
সাম্যের পতাকাবাহী : ইসলামী সংস্কৃতি সাম্যের পতাকাবাহী। এতে সকল মানুষ সমান। মানুষে মানুষে বৈষম্যের নানা রকম কৃত্রিমতার স্থান এতে নেই। বর্ণবাদ, শ্রেণীসংগ্রাম, অস্পৃশ্যবাদের মূল্যে কুঠারাঘাত হেনেছে ইসলাম। মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেছেন, 'তোমরা এক আদমের সন্তান, আর আদম মাটির তৈরি।'
ভারসাম্যপূর্ণ : ইসলামী সংস্কৃতি ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়াবলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। ইসলাম ইহকালীন ভোগবিলাসের অতিরঞ্জনকে যেমন নিষেধ করে তেমনি ইবাদতের নামে বৈরাগ্যকে সমর্থন করে না। ইসলামের সালাত আদায়ের পর পরই জীবিকান্বষণে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উন্নত মার্জিত ও রুচিসম্মত : ইসলামী সংস্কৃতি মার্জিত, পরিশীলিত ও উন্নত রুচিসম্মত। এতে কলুষতা ও অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই।
বাহুল্য বর্জিত : ইসলামী সংস্কৃতি কোনো কাজেই বাহুল্য পছন্দ করে না। নিরর্থক কাজ ও বিলাস ব্যসনের স্থান নেই। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির ইসলামী জীবনের সৌন্দর্য হচ্ছে যা তার অপ্রয়োজনীয়তা পরিত্যাগ করে।
কর্মমুখী : ইসলামী সংস্কৃতিতে কর্মের সাথে ব্যাপক ও বাস্তব সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। কেননা আমল বা কাজ ছাড়া ইমান অর্থবহ হয় না।
সত্য-সুন্দরের আহ্বায়ক : এ সংস্কৃতি সত্য-সুন্দরের চিরন্তন আহ্বান বহন করে। আল্লাহ বলেন, 'তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ করো।'
মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তা : ইসলামী সংস্কৃতি মহান স্রষ্টা আল্লাহর পরেই বিশ্ব সৃষ্টির মাঝে মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তা। কোরআনে এসেছে, 'আমি মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।'
ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর : ইসলামী সংস্কৃতি ভোগবাদিতা পছন্দ করে না। অপরের জন্য ত্যাগ করার জন্য বলে। ইসলামে কোরবানি, আকিকা, ঈদ, শবেকদর, শবেবরাত প্রভৃতি অনুষ্ঠান ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জীবন্ত পদ্ধতি। আর ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য শাশ্বত সুন্দর আদর্শ জীবনপদ্ধতি। তাই এর অনুসারীদেরও রয়েছে একটি আদর্শ সংস্কৃতি। সুতরাং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে যে সংস্কৃতি উৎসারিত ও লালিত, তা-ই ইসলামী সংস্কৃতি।
উত্তর : ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য একটি কল্যাণকর জীবনদর্শন। মানবজীবনের সকল স্তরে ইসলামের ব্যাপ্তি অনেক। ইসলামের অনুসারীগণ এর বিধি-বিধান অনুশীলনের দ্বারা একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে নিজেদের পরিচয়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। মুসলিম মিল্লাতের ইসলাম সমর্থিত ও নির্দেশিত জীবনপদ্ধতিই হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি।
ইসলামী সংস্কৃতির সংজ্ঞা : ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনার আগে আমরা সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারি।
সংস্কৃতির পরিচয় : ইংরেজি culture অর্থ হচ্ছে কর্ষণ করা। cultured বা মার্জিত, আকর্ষণীয় মানুষকে মুসাক্কাফ বলা হয়। মি. বেকনের মতে : An attribute of a spirit of a man.
নৃবিজ্ঞানী Taylo-এর মতে, Culture is the complex whole which includes knowledge, belief, art, moral law, custom and any other capabilities and habits acquired by men as a member of society.
ইসলামী সংস্কৃতি : ইসলামী জীবনদর্শন ও জীবনবিধান অনুশীলনের ফলে মানুষের ব্যবহারিক জীবন ও পরিবেশে যে সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়, তা-ই ইসলামী সংস্কৃতি। দার্শনিক আবুল হাশিমের মতে, ইসলামী সংস্কৃতি হলো ইসলামী নীতি-আদর্শ ও শিক্ষানুযায়ী মানুষের দৈহিক ও মানসিক বৃত্তিসমূহের উৎকর্ষ সাধন এবং ব্যবহারিক জীবন ও প্রত্যক্ষ জড় পরিবেশে তার বাসস্থান। মোট কথা, যে সংস্কৃতি শিক্ষা-সাধনায়, সাহিত্য-স্থাপত্যে, চিত্র-ভাস্কর্যে, আধ্যাত্মিক, নৈতিক, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ইসলামী নীতি-আদর্শ ও মননশীলতার লালন করে, ব্যাপকার্থে তাই ইসলামী সংস্কৃতি।
ইসলামী সংস্কৃতির স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য : ইসলামী সংস্কৃতি বিপুল কল্যাণকামী এক অনন্য সাধারণ ঐশী সংস্কৃতি। এর স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষিত হলো_
কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি কোরআন ও হাদিসের ভিত্তি থেকে উৎসারিত। এটা মানব রচিত নয়। আর রাসুল (সা.) তা বাস্তবে রূপায়িত করে দেখিয়েছেন। এটা দেশ, কাল, জাতিভেদে সকল মানবতার সংস্কৃতি।
আদর্শভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি আদর্শভিত্তিক। ইসলাম বিশ্বমানবতার জীবনাদর্শ। তাওহিদবাদ ও একত্ববাদ এ আদর্শের ভিত্তিমূল। ইরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।'
ইমানভিত্তিক : ইসলামী সংস্কৃতি মুসলিম উম্মাহর মণিকোঠায় লালিত ইমান ও বিশ্বাসের ভিত্তি থেকে উৎসারিত। তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত_এ তিনটি বিশ্বাসের সমন্বয়ে ইসলামী সংস্কৃতির গোটা প্রাসাদটি গঠিত। 'যারা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী, তাদের নিকট আল্লাহর চেয়ে উত্তম বিধানদাতা আর কে হতে পারে।'
বিশ্বজনীন : দেশ, কাল, জাতি, বর্ণ, ধনী, নির্ধন, নির্বিশেষে ইসলামী সংস্কৃতি বিশ্বের সকল মানুষের জন্য অবারিত। এতে কারো একচ্ছত্র অধিকার নেই।
ইহকালীন ও পরকালীন অভিন্ন জীবন : ইসলামী সংস্কৃতিতে ইহ ও পরকালীন জীবন একই সূত্রে গাঁথা। তাই দুনিয়ার জীবন ও ধর্মীয় জীবন বলতে আলাদা কিছু নেই। হাদিসে এসেছে : 'দুনিয়া হলো আখিরাতের ক্ষেত্রস্বরূপ।'
সাম্যের পতাকাবাহী : ইসলামী সংস্কৃতি সাম্যের পতাকাবাহী। এতে সকল মানুষ সমান। মানুষে মানুষে বৈষম্যের নানা রকম কৃত্রিমতার স্থান এতে নেই। বর্ণবাদ, শ্রেণীসংগ্রাম, অস্পৃশ্যবাদের মূল্যে কুঠারাঘাত হেনেছে ইসলাম। মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেছেন, 'তোমরা এক আদমের সন্তান, আর আদম মাটির তৈরি।'
ভারসাম্যপূর্ণ : ইসলামী সংস্কৃতি ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়াবলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। ইসলাম ইহকালীন ভোগবিলাসের অতিরঞ্জনকে যেমন নিষেধ করে তেমনি ইবাদতের নামে বৈরাগ্যকে সমর্থন করে না। ইসলামের সালাত আদায়ের পর পরই জীবিকান্বষণে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উন্নত মার্জিত ও রুচিসম্মত : ইসলামী সংস্কৃতি মার্জিত, পরিশীলিত ও উন্নত রুচিসম্মত। এতে কলুষতা ও অশ্লীলতার কোনো স্থান নেই।
বাহুল্য বর্জিত : ইসলামী সংস্কৃতি কোনো কাজেই বাহুল্য পছন্দ করে না। নিরর্থক কাজ ও বিলাস ব্যসনের স্থান নেই। মুহাম্মদ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির ইসলামী জীবনের সৌন্দর্য হচ্ছে যা তার অপ্রয়োজনীয়তা পরিত্যাগ করে।
কর্মমুখী : ইসলামী সংস্কৃতিতে কর্মের সাথে ব্যাপক ও বাস্তব সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। কেননা আমল বা কাজ ছাড়া ইমান অর্থবহ হয় না।
সত্য-সুন্দরের আহ্বায়ক : এ সংস্কৃতি সত্য-সুন্দরের চিরন্তন আহ্বান বহন করে। আল্লাহ বলেন, 'তোমরা সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ করো।'
মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তা : ইসলামী সংস্কৃতি মহান স্রষ্টা আল্লাহর পরেই বিশ্ব সৃষ্টির মাঝে মানবতার শ্রেষ্ঠত্বের প্রবক্তা। কোরআনে এসেছে, 'আমি মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।'
ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর : ইসলামী সংস্কৃতি ভোগবাদিতা পছন্দ করে না। অপরের জন্য ত্যাগ করার জন্য বলে। ইসলামে কোরবানি, আকিকা, ঈদ, শবেকদর, শবেবরাত প্রভৃতি অনুষ্ঠান ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জীবন্ত পদ্ধতি। আর ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য শাশ্বত সুন্দর আদর্শ জীবনপদ্ধতি। তাই এর অনুসারীদেরও রয়েছে একটি আদর্শ সংস্কৃতি। সুতরাং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে যে সংস্কৃতি উৎসারিত ও লালিত, তা-ই ইসলামী সংস্কৃতি।
No comments:
Post a Comment