সৃজনশীলতা বিষয়টি কোনো একটি মাত্র নির্দিষ্ট রূপের মধ্যে আবদ্ধ নয়।
ব্যক্তির নিজের কাজকর্ম এবং তা থেকে সৃষ্ট বা উদ্ভাবিত কোনো দ্রব্য বা সেবা
যদি ভোক্তার অভাব পূরণ করতে পারে, তবে এটা যেমন সৃজনশীলতার একটি নমুনা।
আবার ওই একই অভাব পূরণে অন্য কেউ যদি নতুন স্বাদ যুক্ত করে আরেকটি দ্রব্য
বাজারে হাজির করে, তবে সেটাও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ।
আরও বলা যায়, সৃজনশীলতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটা আকাশের দিগন্তরেখার মতো। খুব কাছে মনে হলেও ধরতে গেলে এটা দূরে সরে যায়। সে জন্য এ সৃজনশীল কাজের শুরু সেই আদিকাল থেকে, আজও তা বজায় রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন, সৃজনশীল প্রশ্নের কোনো উপাংশের জন্য উত্তর কতটা দীর্ঘ হবে? একজন শিক্ষার্থীর লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অন্য একজন শিক্ষার্থীর লিখিত উত্তর কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন ক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী যেভাবে উত্তর লিখেছে, অন্যরা অনুরূপভাবে উত্তর লিখবে এবং এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নম্বর কম বা বেশি পাবে। এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা উত্তর লেখার মধ্য দিয়ে পাবো।
সৃজনশীল প্রশ্ন: ১
রূপম চাকমা খাগড়াছড়ি জেলায় জন্মগ্রহণ করে। সে শ্রাবণী খীসাকে বিবাহ করে পরিবার গড়ে তোলে। তার পরিবারের বসবাসের গৃহনির্মাণ এবং আয়-রোজগারের জন্য সে ৬ হেক্টর পাহাড়ি জমি ক্রয় করে। ওই জমিতে সে ফলের বাগান এবং একটি নার্সারি করে। বাগান থেকে ফল এবং নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে সে প্রচুর আয় করে। এ আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়।
ক. নাগরিকত্ব কী? ১
খ. নাগরিকতা লাভের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করো। ২
গ. রূপম চাকমা নাগরিকের কোন ধরনের অধিকার ভোগ করছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. রূপম চাকমা অধিকার ভোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি যে কর্তব্য পালন করেছে তা মূল্যায়ন করো। ৪
# ওপরের সৃজনশীল প্রশ্নের ‘ক’ উপ-অংশের নমুনা উত্তর হলো—
নাগরিকেরা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের প্রদত্ত যে মর্যাদা লাভ করে, পৌরনীতিতে তাকেই নাগরিকত্ব বলে।
এ উত্তরটি পাঠ্যবই থেকে সরাসরি দেওয়া যায়। এ প্রশ্নে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রদত্ত উত্তরে বিশেষ কোনো পার্থক্য হবে না। পার্থক্য হতে পারে বাক্য গঠনে। যেমন নাগরিকত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের বিশেষ অধিকার। এ দুই উত্তরের ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা পূর্ণ নম্বর পাবে।
# ‘খ’ উপ-অংশে শিক্ষার্থীরা নাগরিকতা লাভের দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটি পদ্ধতি এবং ওই পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবে। তাতে প্রধানত দুই ধরনের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। যেকোনো একটি পদ্ধতির নাম ও বিবরণ লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উত্তরের মধ্যে পরিবেশিত তথ্যের মিল থাকবে। কিন্তু বাক্য গঠন ও বিন্যাসে বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন রীতি অনুসরণ করবে।
# ‘গ’ উপ-অংশে একটি নতুন পরিস্থিতিতে পাঠ্য বইয়ের একটি বিশেষ ধারণা (নাগরিকের সামাজিক অধিকার) প্রয়োগে শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়নের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নের শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত উত্তরের মধ্যে মিল বা সাদৃশ্য হবে—যে ধারণা/নীতি/পদ্ধতি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে তা লেখার মধ্যে। যেমন: রূপম চাকমা নাগরিকের সামাজিক অধিকার ভোগ করছে। এরপর এ সামাজিক অধিকার কী এবং কীভাবে রূপম চাকমার ভোগ করা সুবিধাগুলো সামাজিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মেধা ও মননকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে পাঠ্য বিষয়কে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার ভাষার দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা সর্বোপরি সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায়। এ প্রশ্নের উত্তর দেখে একজন শিক্ষক খুব সহজেই উচ্চ মেধাসম্পন্ন, মেধাসম্পন্ন এবং নিম্ন মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সফলভাবে বিভাজন করতে পারেন।
# ‘ঘ’ উপ-অংশে নাগরিক হিসেবে রূপম চাকমার একটি বিশেষ আচরণের কথা বলে নাগরিকের অধিকার ভোগের সঙ্গে কর্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাইয়ের প্রয়াস গৃহীত হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নের এ অংশের উত্তরে শিক্ষার্থীরা রূপম চাকমার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমাদানের কাজটি নাগরিকের কী ধরনের কর্তব্য পালন, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ কর্তব্যকে অধিকার ভোগের সঙ্গে সম্পর্ক করে সামগ্রিক আলোচনা করবে। ফলে এ অংশে শিক্ষার্থীরা একটি বাস্তব ঘটনা পাঠ্যবইয়ের আলোকে যাচাই-বাছাই করে এর ধরন চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর সঙ্গে অধিকারের যোগসূত্র স্থাপন করে নিজের মতামত প্রদান করবে। নিজস্ব মতামত কিংবা যুক্তি উপস্থাপনকালে শিক্ষার্থীরা পাঠ-সহায়ক বই-পুস্তকের তথ্যাদি সংযুক্ত করে প্রশ্নের উত্তর সমৃদ্ধ করতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীদের উত্তরের মধ্যে নিজ নিজ চিন্তা-ভাবনা, সিদ্ধান্ত নির্মাণ ও সূক্ষ্ম চিন্তন তথা বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ ও মূল্যায়নের সক্ষমতা প্রকাশ পাবে। এ প্রশ্নের উত্তর দেখে শিক্ষক খুব সহজে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করতে সক্ষম হবেন।
শেষে বলা যায়, শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা হবে বহুমাত্রিক। কেবল সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সৃজনশীলতার পরিমাপক নয়। আবার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার কোনো সীমা টানাও কঠিন। তবে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে বাহুল্য বাদ দিয়ে একটা পরিমিত বোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সৃজনশীল প্রশ্নের বিভিন্ন উপাংশের জন্য প্রশ্নোত্তরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অবশ্য সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির পাশাপাশি শ্রেণীতে পাঠদানকালে এবং শ্রেণীর পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের সম্পাদিত কাজে কতটা সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটে তা মূল্যায়ন আবশ্যক। সেই লক্ষ্যে আরও পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন এবং ব্যবহার আবশ্যক।
সৃজনশীলতা বিষয়টি কোনো একটি মাত্র নির্দিষ্ট রূপের মধ্যে আবদ্ধ নয়। ব্যক্তির নিজের কর্মসাধনা এবং তা থেকে সৃষ্ট বা উদ্ভাবিত কোনো দ্রব্য বা সেবা যদি ভোক্তার অভাব পূরণ করতে পারে, তবে এটা যেমন সৃজনশীলতার একটি নমুনা। আবার ওই একই অভাব পূরণে অন্য কেউ যদি নতুন স্বাদ যুক্ত করে আরেকটি দ্রব্য বাজারে হাজির করে, তবে সেটাও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। আরও বলা যায়, সৃজনশীলতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটা দিগন্তরেখার মতো। আপনি খুব কাছে দেখে তা ধরতে গেলে এটা দূরে সরে যায়। সে জন্য এ সৃজনশীল কাজের শুরু সেই আদিকাল থেকে, আজও তা বজায় রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন, সৃজনশীল প্রশ্নের কোনো উপাংশের জন্য উত্তর কতটা দীর্ঘ হবে? একজন শিক্ষার্থীর লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অন্য একজন শিক্ষার্থীর লিখিত উত্তর কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন ক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী যেভাবে উত্তর লিখেছে, অন্যরা অনুরূপভাবে উত্তর লিখবে এবং এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নম্বর কম বা বেশি পাবে। এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা উত্তর লেখার মধ্য দিয়ে পাবো।
সৃজনশীল প্রশ্ন: ২
আর্থিক লাভের আশায় দরিদ্র কবির হোসেন রত্নাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর রত্নার বাবা জামাতাকে খুশি করার জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদান করে। এতে সে খুশি হতে পারেনি। আরও টাকা পাওয়ার জন্য সে রত্নাকে বাপের বাড়ি পাঠায়। তাতে কাজ হয়নি দেখে সে রত্নাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। এ খবর শুনে রত্নার বাবা ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করে। তাতে সুবিচার পাননি। শেষে বাধ্য হয়ে রত্নার বাবা মেয়েকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে এনে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন।
(উদ্দীপক সূত্র: প্রথম আলো ২৪.০৩.২০০৭)
ক. অপরাধ কাকে বলে? ১
খ. বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কারণে অপরাধকর্ম সংঘটিত হয়—বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. কবির হোসেনের অর্থ দাবির ঘটনাটি পাঠ্য বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. রত্নার বাবার পদক্ষেপটি তোমার কাছে কতটা সমর্থনযোগ্য? মতামত দাও। ৪
নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অধ্যায়ের পঞ্চম পরিচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাকে উপজীব্য ধরে ওপরের দৃশ্যকল্পটি রচনা করা হয়েছে। দৃশ্যকল্পে বাস্তব একটা পরিস্থিতি/নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাশাপাশি বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ সমর্থন করে কিংবা সমর্থন না করে শিক্ষার্থীদের নিজের মতামত/যুক্তি উপস্থাপনের অবকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
# সৃজনশীল প্রশ্নের—ক এবং খ অংশ দৃশ্যকল্পনির্ভর নয় সত্য, তবে দৃশ্যকল্পের সঙ্গে এর অন্ত্যমিল আছে। যেমন—যৌতুক এক ধরনের সামাজিক অপরাধ। আবার অপরাধ সংঘটনের পেছনে দারিদ্র্যই মূল কারণ। এমন বিবেচনায় ক এবং খ অংশ সজ্জিত করা হয়েছে।
# ‘ক’ অংশের উত্তর শিক্ষার্থী পাঠ্যবই থেকে লিখতে পারবে। যেমন—
অপরাধ হলো এক ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ, যা সমাজ ও প্রচলিত আইন কর্তৃক স্বীকৃত নয়।
শিক্ষার্থীরা কোনো সমাজবিজ্ঞানীর প্রদত্ত অপরাধের সংজ্ঞা উল্লেখ করেও এ প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে। যেমন—‘সমাজ বা গোষ্ঠী দ্বারা দৃঢ়ভাবে অসমর্থিত বা নিষিদ্ধ মানব আচরণই হলো অপরাধ।’ (সমাজবিজ্ঞানী কোনিগ)
# ‘খ’ অংশে দারিদ্র্যের কারণে যে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তা বুঝিয়ে লিখতে হবে।
# ‘গ’ অংশে কবির হোসেনের অর্থ দাবি যে যৌতুক চাওয়ার সমতুল্য তা পাঠ্যবইয়ে প্রদত্ত যৌতুকের সংজ্ঞা উল্লেখ করে চিহ্নিত করতে হবে।
‘ঘ’ অংশের উত্তর একজন শিক্ষার্থী এভাবে লিখতে পারে—
# ‘ঘ’ অংশে রত্নার বাবার পদক্ষেপটির যৌক্তিকতা বিচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পরস্পরের উত্তরের মধ্যে ভিন্নতা থাকবে। অর্থাৎ কেউ কেউ রত্নার বাবার পদক্ষেপটি সমর্থন করে এভাবে মতামত দিতে পারে যে রত্নার বাবা তাঁর মেয়ের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বিচারপ্রার্থী হন। সেখানে সুবিচার পাননি। এমতাবস্থায় মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে রাখাটা নিরাপদ নয়। কেননা বিচারপ্রার্থী হওয়ার কারণে রত্নার স্বামী এবং তার পরিবারের লোকজন রত্নার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে থাকবে। সুতরাং রত্নাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনা ছাড়া রত্নার বাবার অন্য কোনো উপায় ছিল না। রত্নার বাবা মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে এসে ক্ষান্ত হননি। তিনি মেয়ের কর্মসংস্থানের একটা পথ খুঁজে দিয়েছেন। এখন এ সেলাই মেশিন চালানোর কাজের দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার বিষয়টি নির্ভর করবে রত্নার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলের ওপর। অতএব বলা যায়, রত্নার বাবার গৃহীত পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য।
# আবার কোনো শিক্ষার্থী রত্নার বাবার পদক্ষেপটি সঠিক হয়নি মনে করলে তা নিচে উল্লিখিত যুক্তি দিয়েও লিখতে পারে....তাই ‘ঘ’ অংশের উত্তর অন্য একজন শিক্ষার্থী এভাবেও লিখতে পারে—
রত্নার বাবা ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করে সুবিচার পাননি সত্য। তাঁর এরপর পারিবারিক আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা না করে অপরাধীকে ছেড়ে দিলেন এবং অপরাধের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজের মেয়েকে নিজের ঘরে ফিরে আনলেন। এর পরও তিনি মেয়ের কর্মসংস্থানে যে পদক্ষেপটি গ্রহণ করেছেন তা কতটা কাজে আসবে সেটা অনেক অনুমানের ওপর নির্ভর করে। রত্না যদি আগে থেকে সেলাইয়ের কাজ শিখে থাকে এবং নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে যদি সে তার কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে তাহলে হয়তো তার একটা নির্ভরযোগ্য কর্মসংস্থান হবে।
এখানেও কিছু অনিশ্চয়তা আছে। রত্না অন্যের জামা-কাপড় সেলাইয়ের কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে ক্রেতা বা খদ্দের থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় পুঁজি তার হাতে থাকতে হবে।
এতগুলো সম্ভাবনা একসঙ্গে কাজ করলে রত্না আত্মকর্মসংস্থান করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং সমাজে নারী হিসেবে আপন মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে।
# এ ধরনের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এক এবং অভিন্ন নাও হতে পারে। একটি প্রশ্ন এমনও হতে পারে যা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উত্তর লেখার দিকে ধাবিত করবে। শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ গ্রহণ করে নানা রকম বিচিত্র কিছু তথ্য ভরপুর করে এবং আপন আপন চিন্তা-চেতনা খাটিয়ে নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তর লিখবে। এতে করে একজন শিক্ষক বা পরীক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতা ধরা পড়বে। শিক্ষক তা খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হবেন, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।
আরও বলা যায়, সৃজনশীলতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটা আকাশের দিগন্তরেখার মতো। খুব কাছে মনে হলেও ধরতে গেলে এটা দূরে সরে যায়। সে জন্য এ সৃজনশীল কাজের শুরু সেই আদিকাল থেকে, আজও তা বজায় রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন, সৃজনশীল প্রশ্নের কোনো উপাংশের জন্য উত্তর কতটা দীর্ঘ হবে? একজন শিক্ষার্থীর লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অন্য একজন শিক্ষার্থীর লিখিত উত্তর কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন ক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী যেভাবে উত্তর লিখেছে, অন্যরা অনুরূপভাবে উত্তর লিখবে এবং এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নম্বর কম বা বেশি পাবে। এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা উত্তর লেখার মধ্য দিয়ে পাবো।
সৃজনশীল প্রশ্ন: ১
রূপম চাকমা খাগড়াছড়ি জেলায় জন্মগ্রহণ করে। সে শ্রাবণী খীসাকে বিবাহ করে পরিবার গড়ে তোলে। তার পরিবারের বসবাসের গৃহনির্মাণ এবং আয়-রোজগারের জন্য সে ৬ হেক্টর পাহাড়ি জমি ক্রয় করে। ওই জমিতে সে ফলের বাগান এবং একটি নার্সারি করে। বাগান থেকে ফল এবং নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে সে প্রচুর আয় করে। এ আয়ের একটা নির্দিষ্ট অংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়।
ক. নাগরিকত্ব কী? ১
খ. নাগরিকতা লাভের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করো। ২
গ. রূপম চাকমা নাগরিকের কোন ধরনের অধিকার ভোগ করছে? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. রূপম চাকমা অধিকার ভোগের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি যে কর্তব্য পালন করেছে তা মূল্যায়ন করো। ৪
# ওপরের সৃজনশীল প্রশ্নের ‘ক’ উপ-অংশের নমুনা উত্তর হলো—
নাগরিকেরা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রের প্রদত্ত যে মর্যাদা লাভ করে, পৌরনীতিতে তাকেই নাগরিকত্ব বলে।
এ উত্তরটি পাঠ্যবই থেকে সরাসরি দেওয়া যায়। এ প্রশ্নে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রদত্ত উত্তরে বিশেষ কোনো পার্থক্য হবে না। পার্থক্য হতে পারে বাক্য গঠনে। যেমন নাগরিকত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের বিশেষ অধিকার। এ দুই উত্তরের ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা পূর্ণ নম্বর পাবে।
# ‘খ’ উপ-অংশে শিক্ষার্থীরা নাগরিকতা লাভের দুটি পদ্ধতির যেকোনো একটি পদ্ধতি এবং ওই পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবে। তাতে প্রধানত দুই ধরনের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। যেকোনো একটি পদ্ধতির নাম ও বিবরণ লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উত্তরের মধ্যে পরিবেশিত তথ্যের মিল থাকবে। কিন্তু বাক্য গঠন ও বিন্যাসে বিভিন্ন শিক্ষার্থী বিভিন্ন রীতি অনুসরণ করবে।
# ‘গ’ উপ-অংশে একটি নতুন পরিস্থিতিতে পাঠ্য বইয়ের একটি বিশেষ ধারণা (নাগরিকের সামাজিক অধিকার) প্রয়োগে শিক্ষার্থীর দক্ষতা মূল্যায়নের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নের শিক্ষার্থীদের প্রদত্ত উত্তরের মধ্যে মিল বা সাদৃশ্য হবে—যে ধারণা/নীতি/পদ্ধতি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে তা লেখার মধ্যে। যেমন: রূপম চাকমা নাগরিকের সামাজিক অধিকার ভোগ করছে। এরপর এ সামাজিক অধিকার কী এবং কীভাবে রূপম চাকমার ভোগ করা সুবিধাগুলো সামাজিক অধিকারের পর্যায়ভুক্ত তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ মেধা ও মননকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে পাঠ্য বিষয়কে সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার ভাষার দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা সর্বোপরি সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায়। এ প্রশ্নের উত্তর দেখে একজন শিক্ষক খুব সহজেই উচ্চ মেধাসম্পন্ন, মেধাসম্পন্ন এবং নিম্ন মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সফলভাবে বিভাজন করতে পারেন।
# ‘ঘ’ উপ-অংশে নাগরিক হিসেবে রূপম চাকমার একটি বিশেষ আচরণের কথা বলে নাগরিকের অধিকার ভোগের সঙ্গে কর্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাইয়ের প্রয়াস গৃহীত হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নের এ অংশের উত্তরে শিক্ষার্থীরা রূপম চাকমার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমাদানের কাজটি নাগরিকের কী ধরনের কর্তব্য পালন, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি এ কর্তব্যকে অধিকার ভোগের সঙ্গে সম্পর্ক করে সামগ্রিক আলোচনা করবে। ফলে এ অংশে শিক্ষার্থীরা একটি বাস্তব ঘটনা পাঠ্যবইয়ের আলোকে যাচাই-বাছাই করে এর ধরন চিহ্নিত করার পাশাপাশি এর সঙ্গে অধিকারের যোগসূত্র স্থাপন করে নিজের মতামত প্রদান করবে। নিজস্ব মতামত কিংবা যুক্তি উপস্থাপনকালে শিক্ষার্থীরা পাঠ-সহায়ক বই-পুস্তকের তথ্যাদি সংযুক্ত করে প্রশ্নের উত্তর সমৃদ্ধ করতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীদের উত্তরের মধ্যে নিজ নিজ চিন্তা-ভাবনা, সিদ্ধান্ত নির্মাণ ও সূক্ষ্ম চিন্তন তথা বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ ও মূল্যায়নের সক্ষমতা প্রকাশ পাবে। এ প্রশ্নের উত্তর দেখে শিক্ষক খুব সহজে শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই করতে সক্ষম হবেন।
শেষে বলা যায়, শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা হবে বহুমাত্রিক। কেবল সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি সৃজনশীলতার পরিমাপক নয়। আবার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার কোনো সীমা টানাও কঠিন। তবে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে বাহুল্য বাদ দিয়ে একটা পরিমিত বোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার সৃজনশীল প্রশ্নের বিভিন্ন উপাংশের জন্য প্রশ্নোত্তরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অবশ্য সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির পাশাপাশি শ্রেণীতে পাঠদানকালে এবং শ্রেণীর পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের সম্পাদিত কাজে কতটা সৃজনশীলতার প্রতিফলন ঘটে তা মূল্যায়ন আবশ্যক। সেই লক্ষ্যে আরও পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন এবং ব্যবহার আবশ্যক।
সৃজনশীলতা বিষয়টি কোনো একটি মাত্র নির্দিষ্ট রূপের মধ্যে আবদ্ধ নয়। ব্যক্তির নিজের কর্মসাধনা এবং তা থেকে সৃষ্ট বা উদ্ভাবিত কোনো দ্রব্য বা সেবা যদি ভোক্তার অভাব পূরণ করতে পারে, তবে এটা যেমন সৃজনশীলতার একটি নমুনা। আবার ওই একই অভাব পূরণে অন্য কেউ যদি নতুন স্বাদ যুক্ত করে আরেকটি দ্রব্য বাজারে হাজির করে, তবে সেটাও সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ। আরও বলা যায়, সৃজনশীলতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এটা দিগন্তরেখার মতো। আপনি খুব কাছে দেখে তা ধরতে গেলে এটা দূরে সরে যায়। সে জন্য এ সৃজনশীল কাজের শুরু সেই আদিকাল থেকে, আজও তা বজায় রয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রশ্ন করে থাকেন, সৃজনশীল প্রশ্নের কোনো উপাংশের জন্য উত্তর কতটা দীর্ঘ হবে? একজন শিক্ষার্থীর লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে অন্য একজন শিক্ষার্থীর লিখিত উত্তর কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ হবে, কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন ক্লাসের ভালো শিক্ষার্থী যেভাবে উত্তর লিখেছে, অন্যরা অনুরূপভাবে উত্তর লিখবে এবং এর কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নম্বর কম বা বেশি পাবে। এর একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজে পেতে নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সৃজনশীল প্রশ্নের নমুনা উত্তর লেখার মধ্য দিয়ে পাবো।
সৃজনশীল প্রশ্ন: ২
আর্থিক লাভের আশায় দরিদ্র কবির হোসেন রত্নাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর রত্নার বাবা জামাতাকে খুশি করার জন্য ২০ হাজার টাকা প্রদান করে। এতে সে খুশি হতে পারেনি। আরও টাকা পাওয়ার জন্য সে রত্নাকে বাপের বাড়ি পাঠায়। তাতে কাজ হয়নি দেখে সে রত্নাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। এ খবর শুনে রত্নার বাবা ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করে। তাতে সুবিচার পাননি। শেষে বাধ্য হয়ে রত্নার বাবা মেয়েকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে এনে একটি সেলাই মেশিন কিনে দেন।
(উদ্দীপক সূত্র: প্রথম আলো ২৪.০৩.২০০৭)
ক. অপরাধ কাকে বলে? ১
খ. বাংলাদেশের দারিদ্র্যের কারণে অপরাধকর্ম সংঘটিত হয়—বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. কবির হোসেনের অর্থ দাবির ঘটনাটি পাঠ্য বইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. রত্নার বাবার পদক্ষেপটি তোমার কাছে কতটা সমর্থনযোগ্য? মতামত দাও। ৪
নবম ও দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অধ্যায়ের পঞ্চম পরিচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়বস্তু বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাকে উপজীব্য ধরে ওপরের দৃশ্যকল্পটি রচনা করা হয়েছে। দৃশ্যকল্পে বাস্তব একটা পরিস্থিতি/নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাশাপাশি বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিশেষ পদক্ষেপ সমর্থন করে কিংবা সমর্থন না করে শিক্ষার্থীদের নিজের মতামত/যুক্তি উপস্থাপনের অবকাশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
# সৃজনশীল প্রশ্নের—ক এবং খ অংশ দৃশ্যকল্পনির্ভর নয় সত্য, তবে দৃশ্যকল্পের সঙ্গে এর অন্ত্যমিল আছে। যেমন—যৌতুক এক ধরনের সামাজিক অপরাধ। আবার অপরাধ সংঘটনের পেছনে দারিদ্র্যই মূল কারণ। এমন বিবেচনায় ক এবং খ অংশ সজ্জিত করা হয়েছে।
# ‘ক’ অংশের উত্তর শিক্ষার্থী পাঠ্যবই থেকে লিখতে পারবে। যেমন—
অপরাধ হলো এক ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ, যা সমাজ ও প্রচলিত আইন কর্তৃক স্বীকৃত নয়।
শিক্ষার্থীরা কোনো সমাজবিজ্ঞানীর প্রদত্ত অপরাধের সংজ্ঞা উল্লেখ করেও এ প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারে। যেমন—‘সমাজ বা গোষ্ঠী দ্বারা দৃঢ়ভাবে অসমর্থিত বা নিষিদ্ধ মানব আচরণই হলো অপরাধ।’ (সমাজবিজ্ঞানী কোনিগ)
# ‘খ’ অংশে দারিদ্র্যের কারণে যে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তা বুঝিয়ে লিখতে হবে।
# ‘গ’ অংশে কবির হোসেনের অর্থ দাবি যে যৌতুক চাওয়ার সমতুল্য তা পাঠ্যবইয়ে প্রদত্ত যৌতুকের সংজ্ঞা উল্লেখ করে চিহ্নিত করতে হবে।
‘ঘ’ অংশের উত্তর একজন শিক্ষার্থী এভাবে লিখতে পারে—
# ‘ঘ’ অংশে রত্নার বাবার পদক্ষেপটির যৌক্তিকতা বিচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পরস্পরের উত্তরের মধ্যে ভিন্নতা থাকবে। অর্থাৎ কেউ কেউ রত্নার বাবার পদক্ষেপটি সমর্থন করে এভাবে মতামত দিতে পারে যে রত্নার বাবা তাঁর মেয়ের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে বিচারপ্রার্থী হন। সেখানে সুবিচার পাননি। এমতাবস্থায় মেয়েকে স্বামীর বাড়িতে রাখাটা নিরাপদ নয়। কেননা বিচারপ্রার্থী হওয়ার কারণে রত্নার স্বামী এবং তার পরিবারের লোকজন রত্নার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হয়ে থাকবে। সুতরাং রত্নাকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনা ছাড়া রত্নার বাবার অন্য কোনো উপায় ছিল না। রত্নার বাবা মেয়েকে নিজের বাড়ি নিয়ে এসে ক্ষান্ত হননি। তিনি মেয়ের কর্মসংস্থানের একটা পথ খুঁজে দিয়েছেন। এখন এ সেলাই মেশিন চালানোর কাজের দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার বিষয়টি নির্ভর করবে রত্নার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলের ওপর। অতএব বলা যায়, রত্নার বাবার গৃহীত পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য।
# আবার কোনো শিক্ষার্থী রত্নার বাবার পদক্ষেপটি সঠিক হয়নি মনে করলে তা নিচে উল্লিখিত যুক্তি দিয়েও লিখতে পারে....তাই ‘ঘ’ অংশের উত্তর অন্য একজন শিক্ষার্থী এভাবেও লিখতে পারে—
রত্নার বাবা ইউনিয়ন পরিষদে নালিশ করে সুবিচার পাননি সত্য। তাঁর এরপর পারিবারিক আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা না করে অপরাধীকে ছেড়ে দিলেন এবং অপরাধের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজের মেয়েকে নিজের ঘরে ফিরে আনলেন। এর পরও তিনি মেয়ের কর্মসংস্থানে যে পদক্ষেপটি গ্রহণ করেছেন তা কতটা কাজে আসবে সেটা অনেক অনুমানের ওপর নির্ভর করে। রত্না যদি আগে থেকে সেলাইয়ের কাজ শিখে থাকে এবং নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে যদি সে তার কর্মদক্ষতা বাড়াতে পারে তাহলে হয়তো তার একটা নির্ভরযোগ্য কর্মসংস্থান হবে।
এখানেও কিছু অনিশ্চয়তা আছে। রত্না অন্যের জামা-কাপড় সেলাইয়ের কাজ করবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে ক্রেতা বা খদ্দের থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় পুঁজি তার হাতে থাকতে হবে।
এতগুলো সম্ভাবনা একসঙ্গে কাজ করলে রত্না আত্মকর্মসংস্থান করে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং সমাজে নারী হিসেবে আপন মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবে।
# এ ধরনের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সব শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এক এবং অভিন্ন নাও হতে পারে। একটি প্রশ্ন এমনও হতে পারে যা শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে উত্তর লেখার দিকে ধাবিত করবে। শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ গ্রহণ করে নানা রকম বিচিত্র কিছু তথ্য ভরপুর করে এবং আপন আপন চিন্তা-চেতনা খাটিয়ে নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তর লিখবে। এতে করে একজন শিক্ষক বা পরীক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের স্বকীয়তা ও সৃজনশীলতা ধরা পড়বে। শিক্ষক তা খুঁজে পেয়ে আনন্দিত হবেন, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।
No comments:
Post a Comment