বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এ রোগ বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর মানসেই আজকের এ লেখা।
সোয়াইন ফ্লু কী
সাধারণ সর্দি-কাশিকেই ফ্লু নামে ডাকা হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দিয়ে সর্দি-কাশি হয়ে থাকে। অনেক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আছে। এর মধ্যে একটি হলো টাইপ-এ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। মানুষের মতো শূকররাও এ ধরনের সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। শূকর থেকে আসে বলে এ ফ্লুর নাম রাখা হয়েছে সোয়াইন ফ্লু। এ রোগ সাধারণত মানুষে ছড়ায় না এবং কোনো কারণে মানুষে ছড়ালেও তিনজন মানুষের মধ্যে ছড়ানোর আগেই এটি ধ্বংস হয়ে যায়। আতঙ্কের ব্যাপার হলো, এ রোগ এখন মানুষের মাঝে ছড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করেছে এবং শুধু তাই নয়, মানুষ থেকে মানুষেও এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
সোয়াইন ফ্লুর লক্ষণ কী লক্ষণগুলো সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই।
- নাক দিয়ে পানি ঝরা
- হালকা জ্বর অনুভূত হওয়া
- সারা শরীর ব্যথা করা
- গলাব্যথা করা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ডায়রিয়া হওয়া ইত্যাদি
হ্যাঁ, এটি বর্তমানে মারাত্মক ছোঁয়াচে আকার ধারণ করেছে এবং কীভাবে এটি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিজ্ঞানীরাও এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারছেন না।
এটি কীভাবে ছড়ায়
সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই এটি এক দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানত দুটি উপায়ে এটি ছড়াতে পারে। এক, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কিংবা কাশি থেকে। দুই, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস আক্রান্ত কোনো স্থান হাত দিয়ে ধরার পর সে হাত আবার মুখে দিলে। এ রোগ এতটাই ভয়াবহভাবে ছড়াতে পারে যে, কোনো ব্যক্তির দেহে এ রোগের জীবাণু প্রবেশের পর তার দেহে এর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই তিনি অন্যের দেহে এ রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার পর সাত দিন পর্যন্ত এ রোগ ছড়াতে পারে।
এ রোগ প্রতিরোধে করণীয়
এ রোগ প্রতিরোধে বাজারে কোনো টীকা বা ভ্যাকসিন পাওয়া যায় না। তাই প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে-
- হাঁচি-কাশির সময় নাক ও মুখে টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন এবং সে টিস্যু সঙ্গে সঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
- সব সময় আপনার হাত পরিষকার রাখুন এবং সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নিন। হাত ধোয়ার কাজে অ্যান্টিসেপটিক লোশনও ব্যবহার করতে পারেন।
- একান্ত প্রয়োজন না হলে হাত দিয়ে নাক, মুখ ধরা থেকে বিরত থাকুন।
- সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকুন।
- ভাইরাস থাকতে পারে এমন জায়গা হাত দিয়ে ধরবেন না।
- কেউ আক্রান্ত হয়ে থাকলে তার উচিত ঘরের মধ্যে থাকা, যাতে এ রোগ ছড়াতে না পারে।
- প্রচুর পানি পান করুন।
- দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
অবশ্যই সম্ভব। সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে ধ্বংস করার জন্য বাজারে oseltamivir or zanamivir নামক দুটো ওষুধ পাওয়া যায়। ভাইরাসনাশক এ ওষুধ শুধু সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসকে ধ্বংস করে না, এটি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এ ওষুধ রোগের তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং রোগের জটিলতাকেও বহুলাংশে কমিয়ে আনে। ভালো ফলাফল পেতে চাইলে ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার দুদিনের মধ্যে এ ওষুধ গ্রহণ শুরু করা উচিত।
কেউ আক্রান্ত হলে কী করবেন
আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। তিনি বাড়িতে বসেই এ রোগের চিকিৎসা নিতে পারবেন। তার উচিত ঘরের মধ্যেই থাকা এবং এ রোগ যাতে তার মাধ্যমে ছড়াতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া। তবে যদি নিচের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তবে রোগীকে দ্রুত হসপিটালে নিতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে
- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হলে
- স্কিনের রঙ নীল হলে
- শিশু যদি পানি গ্রহণ করতে না পারে
- শিশু যদি অতিরিক্ত ছটফট করতে থাকে
- জ্বরের সঙ্গে যদি শরীরে র্যাশ দেখা যায়
- ফ্লু ভালো হওয়ার পর যদি আবার একই সমস্যা তীব্র আকারে দেখা দেয়
- শ্বাসকষ্ট হলে
- বুকে ব্যথা বা চাপ চাপ অনুভূত হলে
- হঠাৎ মাথা ঘোরালে
- তীব্র বমি হলে
- রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে
মুখ পুড়ে যাচ্ছে শত শত মহিলার
নিম্নমানের ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে সাবধান!
ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম
গত সোমবারের ঘটনা। চল্লিশোর্ধ্ব এক মহিলা তার ১৫-১৬ বছরের পুত্রকে নিয়ে এসেছেন চেম্বারে। মুখের দুপাশের ত্বক একেবারে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। ভদ্রমহিলা জানালেন, সামান্য মেছতার দাগ ছিল। বাজারে পাওয়া চীন থেকে আনা একটি ফেয়ারনেস ক্রিম মুখে লাগানোর পর মুখ পুড়ে গেছে। লেজার করে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া চামড়া ফেলে দিতে চান। গভীরভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেল মুখে ফেয়ারনেস ক্রিম মাখায় শুধু মুখ পুড়ে কালো হয়ে গেছে তাই নয়, মুখে ফোস্কা পড়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের ত্বকের সমস্যা পেলে আমি সাধারণত ছবি তুলে রাখি। ছবিতেও সে বীভৎস চেহারা সপষ্ট। শুধু একজন মহিলা নন, এ ধরনের শত শত মহিলা প্রতিদিন কোনো না কোনো স্কিন সেপশালিস্টের কাছে যান বিদেশী নিম্ন মানের ফেয়ারনেস ক্রিম মেখে পুড়ে যাওয়া মুখ চিকিৎসার জন্য। শুধু মধ্যবিত্ত নন, উচ্চবিত্ত মহিলারাও ত্বক ফর্সা বা ত্বকের কালো দাগ তুলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মুখ পুড়িয়ে ফেলছেন। শুধু বিদেশ থেকেই নিম্নমানের ক্ষতিকর ফেয়ারনেস ক্রিম আসছে তাই নয়, দেশের একাধিক অখ্যাত কোম্পানিও মেছতার ক্রিম ইত্যাদি নামে বাজারে নকল ও নিম্নমানের ফেয়ারনেস ক্রিম ছাড়ছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা এ ধরনের ১০-১২টি ফেয়ারনেস ক্রিমের নমুনা পাওয়া যায়। রূপ সচেতন তরুণী মহিলারা যাতে এসব ব্যবহার না করেন এ জন্য এসব ফেয়ারনেস ক্রিমের নাম উল্লেখ করলাম না। তবে কখনোই স্কিন সেপশালিস্টের সঙ্গে আলাপ না করে কোনো ধরনের ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহার করা উচিত নয়।
স্কিন সেপশালিস্টদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় আসারও দরকার নেই। আপনি যে জেলা শহরে থাকেন সেখানেই রয়েছেন স্কিন সেপশালিস্ট। মনে রাখতে হবে আপনার ত্বক অত্যন্ত সেনসিটিভ বা সপর্শকাতর। ত্বকের দাগ তোলা বা ফর্সা করার জন্য ক্ষতিকর কোনো স্ক্রিন লোশন মাখবেন না। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ফেয়ারনেস প্রোডাক্টের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের পৃথক কর্তৃপক্ষ আছে। বাংলাদেশে বিএসটিআই নামের যে প্রতিষ্ঠানটি আছে এদের কোনো কার্যক্রম নেই। নকল হোক ভেজাল হোক যেকোনো পণ্যের সার্টিফিকেট দেয় এ প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া এসব ফেয়ারনেস ক্রিমের বেশির ভাগই ব্যাগেজে আনা হয়। ফলে এসব ক্রিমের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না। শুধু ঢাকা শহরে নয়, মফস্বল শহর, গ্রামে-গঞ্জেও নকল-ভেজাল, নিম্নমানের ফেয়ারনেস ক্রিম অবাধে বিক্রয় হচ্ছে-
এসবেরও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। আমি সব সময় বলে আসছি মুখের বাদামি সপট, তিলা, কালো দাগ, মেছতার দাগ, চোখের নিচে কালো দাগ, ব্রনের দাগ চিকিৎসার বিজ্ঞানসমমত পদ্ধতি আছে।
আপনি যেকোনো স্কিন সেপশালিস্টের কাছে গেলে তিনি ওষুধ অথবা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার এ সমস্যায় সাহায্য করতে পারবেন। তবে স্কিন সেপশালিস্টগণ ওষুধের মাধ্যমে আপনার ত্বকের সমস্যার সমাধান করে থাকেন। পাশাপাশি লেজার, এমসিডি, কেমিক্যাল, ট্রিটমেন্ট ইলেক্ট্রোসার্জারি, ক্রায়োসার্জারি এসব পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। স্কিন সেপশালিস্টগণ এ ধরনের পদ্ধতি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার জন্যও স্বীকৃত দেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন মেছতার কোনো লেজার চিকিৎসা নেই। পাশাপাশি যারা মুখের ত্বকের দাগ তুলে ফেলে ফর্সা হতে চান তাদের না জেনে না বুঝে কোনো ধরনের অপচিকিৎসা অথবা ভুল চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নয়। আজকাল কিছু কিছু চিকিৎসকও ত্বকের দাগ তোলার ভুল চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাই যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই জেনে নেবেন এসবের কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমনকি চোরাপথে আনা অনেক ত্বকের ওষুধেও ব্যবহারকারীদের মুখে ব্রণ বা দানা উঠছে, মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান থেকে আনা ত্বকের মেডিসিন ‘ট্রাইমেলাসিন’ ব্যবহারেও অনেকের মুখে রিঅ্যাকশন হচ্ছে।
অথচ এই মেডিসিনটি কসমেটিক হিসেবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একজন আমদানিকারক পাকিস্তান থেকে এনেছে। এটা মোটেও কসমেটিক নয়, এটা একটি মেডিসিন। বিএসটিআই অজ্ঞাত কারণে এই ট্রাইমেলাসিন আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। তাই শুধু ফেয়ারনেস ক্রিম নয়, মুখে লাগানোর বিদেশী ওষুধ সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment