Sunday, August 5, 2012

শিশুর বুদ্ধি বাড়াতে

আমাদের অনেকেরই ধারণা, প্রত্যেক মানুষ বুদ্ধির একটা কৌটা নিয়ে জন্মায়, অর্থাৎ বুদ্ধির সবটাই জন্মগত, কোনোভাবেই বুদ্ধি বাড়ানো যায় না। এ রকম ধারণা ভুল। বুদ্ধি কিছুটা জেনেটিক, বাকিটা গড়ে ওঠে শেখার মাধ্যমে। জিনবাহিত বুদ্ধিও অনেক অংশে প্রভাবিত হয় পরিবেশ দিয়ে। বুদ্ধি নির্ভর করে শেখার পরিবেশ, শেখার পদ্ধতি, আর শেখার আবেগ (Emotion)-এর ওপর। বুদ্ধির এই বিকাশ অনেকাংশেই নির্ভর করে চর্চার ওপরেও। এর জন্য চাই যথাযথ খাবার, প্রয়োজনে ঠিকমতো ব্যায়াম এবং উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল। তাই একটি শিশুর বোঝার মতো বয়স হলেই বুদ্ধি বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
বুদ্ধি বাড়ানোর মূল কথা
বুদ্ধিতে সব সময়ই শান দিতে হবে। তবেই তা পলে পলে বাড়তে থাকবে। তাই বাচ্চাদের এমন পরিবেশে বেড়ে উঠতে হবে যেখানে তাদের বুদ্ধি বিকাশের রসদ মেলে। অনেক মা-বাবা অন্যের কাজের উদাহরণ দিয়ে নিজের বাচ্চাকে বলে থাকেন-সে পারে তুমি পার না কেন? এভাবে বলা খুব ভুল প্রক্রিয়া। মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে-মানুষে মানুষে শেখার ক্ষমতায় কিছুটা তারতম্য থাকবেই। শেখার ক্ষমতা বাড়ে শরীর মন সুস্থ সবল হলে। কমে শরীরে শক্তির অভাব, মনে ফুর্তির অভাব থাকলে। অনুপ্রেরণা পেলে শেখা বাড়ে, বাড়ে শেখার পরিবেশ আর পদ্ধতি আনন্দময় হলে। ভয় দেখানো, চাপ তৈরি করা পরিবেশ শেখার অনুগত মান কমায়। পরিবেশে অশান্তি, উদ্বেগ বা ভয়ভীতি থাকলে কমে শিক্ষার মান ও পরিমাণ দুটোই। আনন্দবোধ, উৎসাহ, প্রেরণা, প্রশংসা বা পুরস্কার শেখার আগ্রহ শুধু বাড়ায় না, এতে শেখার মাত্রা ও গুণমান বাড়ে।

বুদ্ধির বেড়ে ওঠা
আজকের স্কুল-কলেজে পড়ার বোঝা, অতিরিক্ত চাপ, দম বন্ধ করা পরিবেশ এসবই কঠোর বাস্তব। মনোবিজ্ঞানীরা নানা গবেষণার সূত্র ধরে শেখার যে পদ্ধতি, পরিবেশের কথা বলেছেন তা এই ইঁদুর-দৌড় যুগে করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, অনেক ছাত্র খুব ছোটবেলায় স্কুল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তেমন সাফল্য দেখাতে পারে না, কিন্তু উঁচু ক্লাসে বা কিছু সময় পর থেকে তারা ভালো করতে শুরু করে। এদের বলে লেট ‘অ্যারাইভাল।’ সে ক্ষেত্রে বলা যায় এই গোত্রের মানুষরা তাদের বুদ্ধিতে শান দিয়ে, তা কাজে লাগাতে শুরু করে। জেনে নিন আদর্শ লেখাপড়ার ও শেখার পরিবেশ আর পদ্ধতি কেমন হওয়া দরকার-

  • তীব্র আবেগের সঙ্গে শেখার ব্যবস্থা, একটানা বেশিক্ষণ না শিখিয়ে মধ্যে বিনোদনের ব্যবস্থা।
  • শেখানোর ব্যবস্থা যেন যথেষ্ট উদ্দীপনা জোগায়।
  • শেখা তথ্য বা পদ্ধতিকে যেন বারবার ঝালিয়ে নেয়া হয়।
  • শেখার ওপর নজর থাক, তবে খবরদারি বা বেশি নাক গলানো নয়। খবরদারি না থাকা স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশে শেখার মান ও পরিমাণ বাড়বে।
  • একশ ভাগ ছাঁচে-ঢালা পদ্ধতি বা পরিবেশ নয়, সুচিন্তিত, বেশ খানিকটা স্বতঃস্ফূর্ত শেখার ব্যবস্থা, শেখার গভীরতা ও বিস্তার বাড়ায়।
  • শেখানোর পদ্ধতি হওয়া চাই সহজ-সরল, জটিল বিষয়কে সহজ করে বোঝানোর দক্ষতা শিক্ষকের থাকা চাই।
  • জোর করে গেলানো পদ্ধতি নয়, শেখার গুণমান ও পরিধি বাড়ে
    শেখার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীর মগজ কাজে লাগানোর ব্যবস্থা থাকলে।
বুদ্ধি বাড়াতে করণীয়
  • বাচ্চাকে যথাসম্ভব প্রকৃতির সান্নিধ্যে রাখুন। ঘাস, ফড়িং, ফুল, ফল, পাখি, গাছ, পাতা বা প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বাচ্চা অনেক শেখে।
  • চাপ না দিয়ে লেখাপড়া শেখান হাসতে হাসতে, খেলতে খেলতে।
  • শুধু পড়াশোনা নয়, বাচ্চা যেন রোজ খেলার সুযোগ পায়।
  • বাচ্চার পুষ্টির দিকে নজর রাখুন, তার মানে এই নয় যে, জোর করে বেশি খাওয়াবেন।
  • বাচ্চার শেখার আগ্রহের প্রতি নজর রাখুন, সাহায্য করুন তবে কোনো কিছু জোর করে শেখাতে বা চাপাতে যাবেন না।
  • স্কুলে শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতির খোঁজ-খবর নিন, প্রয়োজনে সক্রিয় হোন।
  • বাচ্চাকে শিখতে দিন ওর প্রবণতা অনুযায়ী।
  • পড়া শেখার ফাঁকে ফাঁকে বাচ্চা তার পছন্দ অনুযায়ী ছবি আঁকুক, নাচুক, গান বা নাটক করুক। কিন্তু বাচ্চাকে ভুলেও সর্ববিদ্যার বিশারদ বানাতে যাবেন না।
  • ভয় দেখিয়ে, মারধর করে ভুলেও শেখাতে যাবেন না বাচ্চাকে।
  • অন্যের সঙ্গে বাচ্চার তুলনা করবেন না। কথায় কথায় বকবেন না, শাস্তি দেবেন না।
  • ভালো শেখার জন্য বাচ্চাকে যথেষ্ট প্রেরণা দিন পুরস্কার দিন।
  • বাচ্চাকে শিখতে সাহায্য করার দক্ষতা অর্জন করা যায় অনুশীলনে। আপনার বাচ্চার সবচেয়ে ভালো শিক্ষক হতে পারেন আপনি।
  • বাচ্চাকে সময়ের সদ্ব্যবহার শেখান, একটু বড় হলে শেখান পড়াশোনার টাইম ম্যানেজমেন্ট।
  • নিজে না শিখে বাচ্চাকে শেখাতে যাবেন না।
  • গল্প শুনতে শুনতে বাচ্চাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাড়াতাড়ি, বাড়ে কল্পনাশক্তি, তাই বাচ্চাকে ক্ষীরের পুতুল, ঠাকুরমার ঝুলি, সায়েন্স ফিকশন-এ ধরনের কল্পনাসহায়ক বই পড়তে দিন।
  • টিভি দেখা থেকে হয়তো বিরত করা যাবে না, তবে বেশি টিভি দেখতে দেবেন না। কী অনুষ্ঠান কতক্ষণ দেখছে মা-বাবা সেদিকে অবশ্যই নজর রাখবেন। তবে খবরদারি নয়, ওদের বুঝতে না দিয়েই নজর রাখার চেষ্টা করুন।
  • দূরে পড়তে গেলে হয়তো মোবাইল ফোন দিতে হতে পারে সে ক্ষেত্রে হাইটেক ফোন দেবেন না। সাধারণ মোবাইল ফোনই যথেষ্ট।
  • কম্পিউটারও আজকের শিক্ষাব্যবস্থায় জরুরি। তবে চট করে ইন্টারনেট কানেকশন না দেয়াই
  • ভালো। দিলেও বাচ্চা যেন আপনার উপস্থিতিতেই ব্যবহার করে এমন ব্যবস্থা করবেন।
  • বড় ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার যেন মাত্রাছাড়া না হয় সেদিকে নজর রাখুন।
  • সমস্যা এড়িয়ে যেতে নয়, সমস্যার মুখোমুখি হতে শেখান।
  • স্বার্থপর হতে নয়, অন্যের আবেগকে জেনে-বুঝে কাজ করতে শেখান। বাচ্চার সুকুমার বৃত্তিগুলোকে ইঁদুর-দৌড়ে না নামিয়ে ওদের মতো করে ওদের বাড়তে দিন। পাশে থাকুন বন্ধুর মতো।
  • মানুষের পাশে থাকুন, শিখুন হাত বাড়াতে, আপনাকে দেখে বাচ্চাও শিখবে, সামাজিক মানুষ হবে।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...