Sunday, August 5, 2012

স্মরণশক্তি লোপের ১০টি কারণ


পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মনে হয় তাদের স্মরণশক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কারো কারো মধ্যে সব সময়ই একটি ধারণা কাজ করে, তার স্মরণশক্তি কম। অনেক স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী আছে যারা একটি বিষয় দু-একবার পড়ে স্মরণ রাখতে না পেরে অগত্যা স্মরণশক্তিকে দায়ী করে। অনেকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। কিছু কিছু অভিভাবক আছেন যারা তাদের সন্তানদের স্মরণশক্তির ব্যাপারে অতি উৎসাহী এবং এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না থাকার পরও তা বৃদ্ধি করার মহৌষধ খুঁজতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার সে রকম কোনো মহৌষধ নেই। কোনো মানুষ যদি নিজের স্মরণশক্তির ব্যাপারে সন্তুষ্ট না হন এবং যদি সব সময়ই একটি ধারণা করেন যে তার স্মরণশক্তি কম, তাহলে এটা থেকে ধীরে ধীরে হতাশা এবং বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে। আর এ হতাশা এবং বিষণ্নতা দীর্ঘস্থায়ী হলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। অবশ্য এ সমস্ত ক্ষেত্রে হতাশা এবং বিষণ্নতার সঠিক চিকিৎসা করলে স্মরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। স্মরণশক্তিহীনতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি বৃদ্ধ বয়সের রোগ। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কম বয়সেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।
যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা অধিক হারে স্মরণশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬৫ বছরের অধিক বয়সের মানুষ কমপক্ষে ১০ শতাংশ স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। বয়স বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যাটিও আরো বৃদ্ধি পায়। আশি বছরের অধিক বয়সী বৃদ্ধরা ২০ শতাংশ স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। স্মৃতিশক্তি লোপ সমস্যা সাধারণত দুই ধরনের। একটি হলো মস্তিষেকর নিজস্ব কারণজনিত সমস্যা। অপরটি মস্তিষেকর বাইরের অন্য কোনো অঙ্গ বা সিস্টেম আক্রান্ত হবার ফলে মস্তিষেক সৃষ্ট সমস্যা। মানুষের মস্তিষককে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। বাইরের স্তরকে বলে কর্টেক্স এবং ভেতরের স্তরকে বলে মেডুলা। মানুষের স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত বাইরের কর্টেক্স স্তরটি। যে সমস্ত অসুখে কর্টেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে সমস্ত অসুখেই স্মরণশক্তি লোপ পায়। স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া শুধু একটি রোগ নয়। এটি একটি সামাজিক সমস্যাও। স্মৃতিশক্তি লোপ পেলে মানুষের আচার-আচরণ, আবেগ-ব্যক্তিত্ব সব কিছুতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে নানাবিধ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক কারণেই স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। নিচে স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
কারণ-১
মস্তিষেকর ক্ষয়রোগঃ কিছু কিছু অসুখ আছে যাতে মস্তিষেকর স্মরণশক্তি নিয়ন্ত্রণকারী কর্টেক্স ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে স্মরণশক্তি লোপ পায়। আলঝেইমারস এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। আলঝেইমারস একটি দীর্ঘস্থায়ী মস্তিষক ক্ষয়কারী রোগ, যেটি হলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পেতে একজন মানুষ সম্পূর্ণ স্মরণশক্তিবিহীন হয়ে যেতে পারে। আলঝেইমারসের সঠিক কোনো কারণ আবিষকৃত হয়নি, তবে জিনঘটিত সমস্যা এবং অধিক বয়সকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আলঝেইমারস ছাড়া আরো কিছু রোগ আছে যেগুলো মস্তিষেকর ক্ষয়সাধন করে থাকে। এদের মধ্যে হানটিংটনস, পারকিনসন্স, লিউয়িবডি ডিমেনশিয়া প্রভৃতি রোগের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


কারণ-২
মস্তিষেকর রক্তনালির রোগঃ মস্তিষেকর ছোট অথবা বড় যে কোনো ধরনের রক্তনালি ব্লক হয়ে গেলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। রক্তনালি ব্লক হয়ে যাওয়ার ফলে মস্তিষেকর কর্টেক্স অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এছাড়া স্ট্রোক করার পর অথবা মস্তিষেক রক্তনালির প্রদাহের ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৩
ব্রেন টিউমারঃ ব্রেন টিউমারকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো ব্রেনের নিজস্ব কোষে সৃষ্ট টিউমার এবং অন্যটি শরীরের অন্য কোনো জায়গার টিউমার রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত হয়ে ব্রেনে জমা হওয়ার ফলে সৃষ্ট টিউমার। ব্রেনের নিজস্ব কোষে টিউমার হলে স্মৃতিশক্তি সাধারণত তেমন লোপ পায় না। কিন্তু রক্ত বা লসিকা দ্বারা বাহিত ব্রেন টিউমার হওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। ব্রেন টিউমার ছাড়াও ব্রেনের ভেতর রক্তক্ষরণের পর জমাট বাঁধা রক্তের কারণে কর্টেক্সে চাপ পড়লে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৪
মস্তিষেক আঘাতঃ সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অথবা অন্য যে কোনো দুর্ঘটনায় মস্তিষক মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। অনেক সময় বক্সিং খেলায় একজন বক্সার তার প্রতিপক্ষের মাথায় জোরে আঘাত করে থাকেন। আর এভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৫
ভিটামিনের অভাবঃ ভিটামিনের অভাবে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। যে সমস্ত ভিটামিনের অভাবে স্মরণশক্তি লোপ পায় সেগুলো হলো- ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিন, ভিটামিন বি১২ এবং নিয়াসিন। যেসব পরিবারের খাদ্যতালিকায় এসব ভিটামিন দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকে তাদের পরিবারের সদস্যরা স্মৃতিশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কারণ-৬
মস্তিষেক বিষক্রিয়াঃ যারা দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের দেহে ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিনের অভাব দেখা দেয়। ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস পায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করলে মস্তিষেকর কর্টেক্সের আকার হ্রাস পায়। ফলে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। অ্যালকোহল ছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানায় কাজ করেন তাদের মস্তিষেক বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে এবং স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যারা সিসার ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তাদের মস্তিষেক সিসা জমা হওয়ার ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৭
মস্তিষেক রোগজীবাণুর আক্রমণঃ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা মস্তিষেক প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। সিফিলিস হলে যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয় তাহলে দুই থেকে তিন বছর পর মস্তিষক আক্রান্ত হতে পারে। এটিকে বলা হয় ‘নিউরোসিফিলিস’। নিউরোসিফিলিসে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। তাছাড়া এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও স্মরণশক্তি লোপজনিত সমস্যায় ভুগতে পারেন।

কারণ-৮
মস্তিষেক অক্সিজেনের ঘাটতিঃ যেসব রোগ হলে মস্তিষেক রক্ত সরবরাহ কমে যায়, সেসব রোগে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে। হার্টফেইলর এ রকম একটি রোগ। তাছাড়া ফুসফুস বিকল হয়ে গেলে কিংবা কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার ফলে মস্তিষেক অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে এ থেকে স্মরণশক্তি লোপ পেতে পারে।

কারণ-৯
হরমোনের ঘাটতিঃ থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড হরমোনের অভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে। তাই হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতাজনিত রোগ এবং হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিজম বা প্যারাথাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতাজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মরণশক্তি হ্রাস পেতে পারে।

কারণ-১০
প্রিয়ন রোগঃ প্রিয়ন রোগ মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীরও হয়ে থাকে। এ রোগ হলে মস্তিষক সপঞ্জের মতো হয়ে যায় এবং মস্তিষেকর নিউরনের সংখ্যা হ্রাস পায়। মানুষ আক্রান্ত হয় এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রিয়ন রোগের নাম হলো ক্রোজফেল্ট জ্যাকব রোগ। বিশ্বব্যাপী রোগটির প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতি দশ লাখে একজন লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ হলে খুব দ্রুত স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। এর কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত ৪-৬ মাসের মধ্যে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...