এবার না হয় দ্বিতীয়, দেখো আগামী
পরীক্ষায় আমি নিশ্চয়ই প্রথম হব। গত দুই ম্যাচে ভালো করতে পারিনি ঠিকই
কিন্তু পরের ম্যাচে আশা করি আমি ভালোভাবেই ফিরে আসব। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে
গিয়ে যদি আগেই নার্ভাস হয়ে পড়ি, তাহলে তো আমার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ারই
যোগ্যতা হয়নি। ঠিক এ ধরনের কথাগুলোই যদি আপনার কোমলমতি সন্তানরা বুক ভরে
নিঃশ্বাস নিয়ে দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করে, তখন আপনার অনুভুতি কেমন হবে? সন্তানের এ
আত্মবিশ্বাস আপনাকে যতটা আনন্দিত করবে? লাখ টাকাও নিশ্চয়ই সেই শান্তি, সেই
তৃপ্তি আপনাকে কখনোই এনে দিতে পারবে না। সৌভাগ্যবান যেসব বাবা-মা এ ধরনের
কথা তাদের সন্তানের কাছ থেকে এরই মধ্যে শুনেছেন বা শুনছেন তাদের জন্য
অনুস্মারকস্বরূপ ও যারা শোনার প্রত্যাশায় মনে মনে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি
নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, তাদের শুভ এ আগ্রহকে সমমান জানাতেই গাইডলাইন হিসেবে এই
লেখাটি।
পরিকল্পনা মাফিক শুরু করুনআমিও পারি-ছোট অথচ প্রচণ্ড শক্তিশালী এ বোধটুকু ধীরে ধীরে শিশুর মনে সঞ্চারিত করার কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবা-মা। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি দক্ষতার সঙ্গে সঠিকভাবে সম্পাদন করতে না পারলে অবশ্যই যথাযথ ফল পাওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য শুরুতেই আপনার দরকার হবে যথাযথ আগ্রহ, সুচিন্তিত পরিকল্পনা, অকৃত্রিম আন্তরিকতা, সুস্থিত ধৈর্য ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা।
শিশুরা মূলত আত্মবিশ্বাসী নয় বরং তারা নিষিক্রয় ও পরনির্ভর। তাদের প্রয়োজন বাইরের উৎসাহ, সমর্থন ও অনুমোদন। প্রকৃতপক্ষে তার ভেতরের স্বভাব-কৌতূহল, উচ্ছ্বাস ও সৃষ্টিশীলতা তার আত্মবিশ্বাস বিকাশের জন্য যথেষ্ট নয়।
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন
একটি সুস্থিত পারিবারিক জীবনের মূলমন্ত্র হলো নিয়মমাফিক রুটিন। সব শিশুই এ রুটিন থেকে আত্মবিশ্বাস লাভ করে। শৃঙ্খলা সঙ্গতি সৃষ্টি করে, ফলে শিশুরা নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে। আর তা থেকেই স্বস্তি ও শক্তির মতো প্রত্যয়বোধ তাদের ভেতরে জন্ম নেবে। নিশ্চিত হোন যে, আপনার আচরণও দৃঢ় ও সঙ্গতিপূর্ণ। নিউইয়র্কের ফ্যামিলি থেরাপিস্ট সুসান পি হেভেন বলেন, একজন আত্মবিশ্বাসী শিশু গড়ে তোলার জন্য সর্বোত্তম পন্থা হলো নিজেদের আত্মবিশ্বাসী বাবা-মা হওয়া।
সিদ্ধান্ত নিতে সন্তানকে সহযোগিতা করুন
শিশুকে তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পছন্দ করতে দিন। এটা তার জন্য সহজ হবে যদি তাকে কেবল দুটি জিনিস থেকে একটি পছন্দ করতে দেয়া হয়। হতে পারে সে দুটি জিনিস আপনি আপনার সন্তানের জন্য সাপোর্ট করেন বা তাদের জন্য মঙ্গলজনক মনে করেন। এতে বিষয়টি এমন হলো যে, শিশু নিজেই পছন্দ করে নিল ও আপনার প্রত্যাশিত জিনিসই তাকে দিতে পারলেন। কিংবা তাকে একটি জামার দোকানে নিয়ে যান। জামা পছন্দ করতে বলুন। তাকে জিজ্ঞাসা করুন সে কেন অন্যগুলো বাদ দিয়ে ওই জামাটি পছন্দ করল। তারপর তাকে উৎসাহিত করতে বলুন, তোমার চয়েস সত্যিই চমৎকার ও ভবিষ্যতে তুমি আরো ভালো পছন্দ করতে পারবে।
ভালোবাসা প্রদর্শন করুন
সন্তানকে প্রতিদিনই শর্তহীনভাবে ভালোবাসুন। তাদের কোমলভাবে বুকে জড়িয়ে নিন। উৎসাহ দিতে তাদের পিঠে আলতো করে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিন। তার স্কুলব্যাগ কিংবা লাঞ্চ প্যাকে বড় করে আই লাভ ইউ স্টিকার লাগিয়ে দিন। ঘুম পাড়ানোর সময় তাদের মাথায় কোমলভাবে হাত বুলিয়ে দিন, কপালে চুমু দিন। এ ধরনের ভালোবাসা সন্তানদের খুবই প্রয়োজন। মনে মনে তারা তাদের বাবা-মার কাছ থেকে এমনটি সত্যিকারেই প্রত্যাশা করে।
সন্তানের সাফল্য সেলিব্রেট করুন
সন্তানের শিক্ষা, খেলাধুলাসংক্রান্ত কিংবা সাংস্কৃতিক গুণাবলির বহিঃপ্রকাশস্বরূপ যে কোনো অর্জন, যে কোনো সাফল্য সেলিব্রেট করুন। তার পছন্দের খাবারটি সেদিন সেপশালভাবে রান্না করে দিন। পুরস্কার হিসেবে তাকে তার পছন্দের জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান, কিংবা তার খুব পছন্দের কোনো জিনিস গিফট করে তাকে সারপ্রাইজ দিন। তার পুরস্কারগুলো, যেমন মেডাল, সার্টিফিকেট বা অন্য যে কোনো কিছু দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখুন বা ড্রইংরুমের শোকেসে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখুন। এমনকি শিশু শুনতে পায় এমন দূরত্বে আপনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনের কাছে তার প্রশংসা করুন।
কাজের মূল্যায়ন পজিটিভলি করুন
যথাযথ মূল্যায়ন পেলে সন্তান নিঃসন্দেহে উন্নতির পথে আরো এগিয়ে যায়। অন্যদের মতো তোমার প্রেজেন্টেশন অসাধারণ ছিল, এভাবে না বলে মূল বিষয় নিয়েই বলুন। যেমন তোমার নাচের মুদ্রাগুলো জটিল ছিল ঠিকই কিন্তু তুমি সম্পূর্ণটাই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছো, সত্যিই অতুলনীয়। এতে শিশু সত্যিকারে কতটুকু করেছে সে ব্যাপারে যেমন ধারণা পাবে, তেমনি তার উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে বহুগুণ।
সতর্কতা ও সাবধানবাণী গঠনমূলকভাবে দিন
শিশুকে কোন ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে সে ব্যাপারটি বোঝানোর সময় আপনার কণ্ঠ যতটুকু সম্ভব শান্ত, কোমল ও বন্ধুসুলভ রাখুন এবং বক্তব্য ইতিবাচক করুন। যেমন স্কুলে গিয়ে খবরদার মারামারি করবে না-এভাবে না বলে বলুন, আমি চাই তুমি স্কুলের সময়টা পুরোটাই উপভোগ করো। আমার মনে হয় যাদের তুমি পছন্দ করো, কেবল তাদের সঙ্গে খেললেই তোমার ভালো লাগবে। সব সময় তাদের সঙ্গেই থাকবে। এ বাক্যটি অধিকতর ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ নয় কি?
ধৈর্য ধরতে উৎসাহিত করুন
সন্তান যদি নতুন কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে সুষ্ঠুভাবে বলে দিন, কাজটি কীভাবে করা যেতে পারে। একবারে না পারলে অস্থির না হয়ে কাজটি তাকে আবার করতে বলুন, না হলে আবার। প্রয়োজনে আপনিও সহযোগিতা করুন। এতে হয়তো আপনার খানিকটা সময় ব্যয় হবে কিন্তু আপনার সন্তান যে নতুন কিছু শিখছে এটা অনেক বড় অর্জন নয় কি? যেমন আপনার শিশু নিজেই তার ময়লা জামাটি ধোয়ার চেষ্টা করছে। তখন তাকে না বকে বরং তাকে জানিয়ে দিন বা বুঝিয়ে দিন যে, ওই জামাটি ধুতে কতটুকু সাবান আর পানি লাগতে পারে।
সন্তানকে নয়, তার অমার্জিত কাজকে দোষী বলুন
শিশুকে বিষয়গতভাবে সংশোধন করুন। বুঝলেন না? ধরুন তার স্কুলের হোমওয়ার্কটা বিশৃঙ্খল হয়েছে বা তার হাতের লেখাটা সুন্দর হয়নি। তাকে বলুন, তোমার হোমওয়ার্কটা বিশৃঙ্খল হলেও তুমি কিন্তু সুশৃঙ্খল, তোমার হাতের লেখাটা সুন্দর না হলেও তুমি কিন্তু খুব সুন্দর। তাই ভুলটা তোমার মধ্যে নয়, ভুলটা এ পৃষ্ঠায়। আশা করি তুমি যেমন সুন্দর আর সুশৃঙ্খল, তোমার হোমওয়ার্ক আর হাতের লেখাও তেমন সুশৃঙ্খল আর সুন্দর হবে। বিষয়টি অনেকটা ব্যক্তিকে দোষী না বলে তার দোষকে সংশোধন করে দেয়ার মতোই।
মহৎ ব্যক্তিদের গল্প পড়ে শোনান
সারাদিন অফিস, ব্যবসা বা সংসার নিয়ে ব্যস্ত? ঠিক আছে, তাহলে রাতে সন্তানদের ঘুম পাড়ানোর সময় তাদের মহৎ ব্যক্তিদের গল্প শোনান। কেননা জীবনীর প্রতি শিশুদের স্বভাব-দুর্বলতা আছে। বিশেষ করে যেসব সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি তাদের মেধা, শ্রম, নিষ্ঠা, ধৈর্য্য, অধ্যবসায় ও কাজের দ্বারা এ পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, তাদের জীবনী শিশুরা বেশি পছন্দ করে। সত্যি বলতে এ জাতীয় গল্পে সাফল্য আসে আন্তরিক চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, অবিচল ধৈর্য্য, প্রতিজ্ঞা ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে। আমিও পারি-জাতীয় ইন্সপায়ারিং মেসেজ এমনিই মিশে থাকে। এ ধরনের গল্প শুনলে বাচ্চারা সহজেই আত্মবিশ্বাসী হতে শেখে। যেমন তাকে জীবন্ত কিংবদন্তি ম্যারাডোনার কথাই বলুন না। শৈশবে বস্তিতে নিষ্ঠুর দারিদ্র্যের মাঝেও ছেঁড়া কাপড় দিয়ে ফুটবল খেলে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলারদের অন্যতম।
সন্তানের মধ্যে রসবোধ গড়ে তুলুন
হাসি শিশুকে পরাজয়ের গ্লানি কিংবা অহেতুক ভয়, যেমন ভূতের ভয় ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যে শিশুরা প্রাণখুলে হাসে বা হাস্যরস সৃষ্টিকারী কথা বলতে পারে, তারা স্বভাবতই যে কোনো কাজে অধিকতর উদ্যোগী ও উদ্যমী হয়। প্রয়োজনে শিশুকে মজার মজার শিশুতোষ কৌতুক শোনান।
অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী বাবা-মা হোন
আপনি নিজেই প্রতিনিয়ত কতটা পরিশ্রম-সংগ্রাম করছেন কর্মক্ষেত্রে তো অবশ্যই, এমনকি নিজের বাসায়ও। এগুলো শিশুকে বুঝিয়ে বলুন। তাদের বলুন, আপনার দুঃসময়ে কীভাবে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেছেন ও সফল হওয়ার জন্য কীভাবে পরিশ্রম করেছেন। তাকে জানান, কীভাবে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন। আপনার এ বর্তমান অবস্থানের পেছনে অন্যতম কারণ যে আপনার অটল আত্মবিশ্বাস, তা-ও আপনার সন্তানকে বোঝান। হয়তো এগুলোই আপনার সন্তানের ব্লুপ্রিন্ট হিসেবে কাজ করবে।
যা যা করবেন না
ভুলেও আপনার সন্তানকে অন্য কোনো শিশুর সঙ্গে তুলনা করবেন না। এর প্রভাব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও ব্যাপক। এতে সন্তানের আত্মবিশ্বাসে মারাত্মক প্রভাব পড়ে তো বটেই, সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হিংসা ও ঈর্ষার জন্ম হয়। বরং এভাবে ভাবুন যে আপনি হয়তো অন্য সেই শিশুর বাবা-মার মতো আপনার সন্তানের উপযুক্ত যত্ন নিচ্ছেন না।
সন্তানের ভুল জনসমক্ষে শুধরে দিতে যাবেন না। শুধু তাই-ই নয়, বকা পর্যন্ত দেবেন না। বিশেষ করে তার সমবয়সীদের সামনে। এতে তারা একদম চুপসে যাবে, এতে তারা হীনমমন্যতায় ভুগবে। তারা মানুষের সামনে যেতে লজ্জাবোধ করবে, বরং তাকে একা একা শান্তভাবে বুঝিয়ে বলে সংশোধন করে দিন।
তোমার কাছে সব সময় এটা আশা করি, ওটা আশা করি, এ ধরনের কথা বলে তার কাজের পরিমাণ বা ফলাফল নির্দিষ্ট সীমায় বেঁধে দেবেন না। এতে তার মধ্যে সর্বদা নীরব একটা চাপ তৈরি হবে। আর চাপের মুখে শুধু শিশুরা কেন, অনেক অভিজ্ঞ লোকও নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, বরং তাকে বলুন যে তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। খারাপ করলে বলুন, চেষ্টা চালিয়ে যাও, নিশ্চয়ই পরেরবার আরো ভালো করবে। তা ছাড়া তুমি তো অনেকের চেয়েই ভালো করেছো। আরো উৎসাহিত করতে চাইলে বলতে পারেন, যদি এবার এ প্লাস পাও, তাহলে তোমার জন্য দারুণ একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। এ প্লাস পেলে তার কাছে বহু কাঙ্ক্ষিত এমন কিছু তাকে উপহার দিন।
শিশুকে এ ধরনের সান্ত্বনামূলক মন্তব্য করবেন না; যেমন তোমার ভাই-বোনের চমৎকার চুল আছে, কিন্তু তুমি ভালো গান গাও। তখন বিষয়টি সত্যিকার অর্থে এমন মনে হবে যে তার কাছে তার কণ্ঠের প্রশংসার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে তার চুল সুন্দর নয়। ফলে তার মধ্যে তৈরি হবে হীনমমন্যতা। কারণ শিশুদের মনের গঠন এমনভাবে তৈরি যে নেগেটিভ কোনো কিছু তাদের খুব সহজেই প্রভাবিত করে। বরং এটাই বলুন না যে তুমি যেহেতু চমৎকার গান গাও, তোমার ভাই-বোনদের তো গান শেখাতে পার। এতে তার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে অন্যকে শেখাতে গিয়ে নিজের মধ্যে আস্থার ভিতটাও যথেষ্ট শক্ত হবে। মাঝে মাঝে শিশুকে ভুল করতে দিন। যেমন ধরুন, সে একদিন স্কুলের হোমওয়ার্কটা করতে ভুলে গেল। তাকে ভুলে যেতে দিন। ফলে, পরদিন স্কুলে গিয়ে সে তার ভুলটা বুঝতে পারবে। এতে তার ভেতর গড়ে উঠবে অনুতাপবোধ, ফলে এমন ভুল তার আর সহজে হবে না।
তাহলে আর দেরি কেন
সুতরাং তাদের জন্য উৎসর্গ করুন আপনার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সামর্থ্যের সবটুকু। শিশুদের শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করবেন না। শিশুদের হ্যাঁ বলুন। হয়তো আগামী আত্মবিশ্বাসী প্রজন্মের পৃথিবীতে আর যা-ই হোক প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়া যাবে, হয়তো ভাবতেও হবে না নিরাপত্তা নিয়ে। বাবা-মাদের দৃষ্টিভঙ্গির সামান্য একটু পরিবর্তন হয়তো অসামান্য অবদান রাখতে পারে।
No comments:
Post a Comment