Sunday, August 5, 2012

রাগঃ শরীর ও মনের মারাত্মক শত্রু

রাগঃ শরীর ও মনের মারাত্মক শত্রু

রাগ একটি স্বাভাবিক আবেশ বা অনুভূতি যেটা আমার, আপনার সকলেরই আছে। রাগের অন্য নাম ক্রোধ, আক্রোশ বা বিদ্বেষ ইত্যাদি- যদিও এই শব্দগুলো সবসময় একদম একই অনুভূতির কথা বোঝায় না। অভিমান কিংবা দুঃখ অনেক সময় রাগের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেখানে আমাদের প্রত্যাশা বা চাহিদা পূরণ হয় না, সেখানেই রাগের উৎপত্তি। দৈনন্দিন জীবনে যদিও রাগকে অনেক সময়েই আমরা নেতিবাচক অনুভূতি বলে মনে করি, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিদরা অনেকে মনে করেন যে, দুঃখ, ব্যর্থতা, ভয় ও অত্যাচারজনিত মানসিক অনুভূতিকে আয়ত্তে আনার জন্য যে আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়, তা-ই হলো রাগ। অর্থাৎ রাগকে আমরা ইতিবাচকভাবেও ব্যবহার করতে পারি। রাগের প্রকাশ মানুষবিশেষে বিভিন্ন। রাগ প্রকাশের ভঙ্গি পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে।
প্রকাশিত রাগ
এই ধরনের রাগ বাইরে থেকে দেখা যায়।
(১) রগচটা মানুষের রাগ
কিছু মানুষ সবসময় রাগ প্রকাশ করেন। তারা সব সময়েই মনে করেন যে, তাদের রাগ করার যথেষ্ট কারণ বা যুক্তি আছে। তারা সহজেই তুচ্ছ কারণে রেগে যান। চিৎকার করেন, এমনকি মারধরও করেন নিয়মিতভাবে।
তাদের সকলেই রাগী বলে জানে। তাদের রাগের জন্য যে কোনো পরিস্থিতি হঠাৎ মাথাচাড়া এবং গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
রাগের মাত্রা হারিয়ে অনেক সময় তারা নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তাদের হার্টঅ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দুর্ঘটনার প্রবণতাও বেশি থাকে। নিজেদের মানসিক অসুস্থতাও থাকতে পারেন এবং অন্যদেরও মানসিক বৈকল্যের কারণ হয়ে দাঁড়ান। এরা অনেকেই আসলে খুব খাঁটি এবং সৎ মানুষ। কিন্তু লোকে তাদের ভুল বোঝেন এবং এড়িয়ে চলেন। এর ফলে তারা অনেক সময় একাকীত্বে ভোগেন।
রগচটা মানুষ
করিমের ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার শখ ছিল। তখন থেকেই তার রাগ এবং জেদও ছিল, কিন্তু তার মা বলতেন, ‘পুরুষ মানুষের আবার রাগ থাকবে না’! তিনি শেষ পর্যন্ত ডাক্তার হতে পারলেন না এবং একটি সাধারণ কলেজ থেকে বিএস পাস করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ শুরু করলেন। তার বিয়ের পর থেকেই তিনি স্ত্রীকে নিয়মিতভাবে গালাগাল দেন এবং মারধর শুরু করেন। সন্তানের জন্মের পরেও এই আচার-আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় না। সন্তানের সামনেই এসব হতে থাকে। তিনি তার স্ত্রীকে সব কিছুর জন্যই দোষ দেন। করিমের কথায়, তার স্ত্রী একটি failure­ স্ত্রী এবং মা হিসেবে। ছেলেকে মানুষ করতে পারছেন না তার স্ত্রী- যদিও করিম নিজে ছেলেকে কোনো সময় দেন না, তার ভালোমন্দ কিছুই দেখেন না, কিন্তু পান থেকে চুন খসলেই স্ত্রীকে প্রচণ্ড মারধর করেন। কাজের জায়গায় তার কোনো বু নেই। সবার সঙ্গেই তার ঝগড়া হয়। তিনি কিন্তু নিজের আচরণের জন্য নিজের কোনো দোষ দেখেন না।
(২) ক্ষণক্রোধ
হঠাৎ রেগে যান।
অনেক সময় কারণ বোঝা যায় না। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এবং মানসিক চাপে বিধ্বস্তদের এরকম হতে পারে। তাদের অনেক সময় পরে অনুশোচনা হয়। এদেরও অনেক সময় স্ট্রোক বা হার্টঅ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উদাহরণ-
অপ্রকাশিত রাগ-
বাইরে থেকে এই ধরনের রাগ বোঝার উপায় নেই।
(৩) চাপা রাগ
অনেকে মনে করেন তাদের কোনো রাগ নেই, কারণ রাগের প্রকাশ নেই- যেমন চাপা রাগ। তারা নিজেদের রাগের কারণ বোঝেন কিন্তু প্রকাশ করেন না। তারা সহজে চেঁচামেচি বা মারধর করেন না। রাগ করার জায়গাতেও তারা অনেক সময় চুপচাপ থাকেন। যেহেতু তারা রাগ প্রকাশ করেন না, আপাতদৃষ্টিতে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে কোনো বড় অসুবিধা দেখা যায় না। কিন্তু তারা ক্রমশ কাছের লোক থেকে দূরে সরতে থাকেন। কোন ব্যাপারটায় তাদের রাগ হচ্ছে বা হতে পারে তা তাদের সঙ্গীরা বুঝতে পারেন না এবং সঙ্গীদের আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এর ফলে রাগের কারণ তাদের জীবন থেকে কোনোদিন চলে যায় না। দাম্পত্য জীবনেও ধীরে ধীরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার জন্য তাদের সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতার অভাব ঘটে এবং বিয়ের বাইরে কোনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন।
কর্মক্ষেত্রে বসের ওপর চাপা রাগ থাকলে সৃজনী ক্ষমতা, দক্ষতা, মনোসংযোগ, উদ্যম ও উদ্দেশ্য নষ্ট হতে পারে। এর ফলে কাজের ক্ষতি হয়। কাজ এড়ানোর, ছুটি নেয়ার বা কামাই করার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। হাইপারটেনশন, আলসার বা পেটের ঘা, কার্ডিয়াক সমস্যা, হাঁপানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, ঘুমের ওষুধ ব্যবহারের প্রবৃত্তি থাকে।
উদাহরণঃ চাপা রাগ
রবিন প্রথমবার প্রেমে ধাক্কা খান। পরের বার তার ভাগ্য খুলে যায়। সুন্দরী ও শিক্ষিতা মৌসুমীকে বিয়ে করেন সম্ব করে। কিছুদিন পরে রবিন বুঝতে পারেন যে মৌসুমির চাহিদা তিনি কোনোভাবেই পূরণ করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি কখনো মৌসুমিকে বুঝতে দেন না যে তার চাহিদা পূর্ণ করার চেষ্টায় তিনি মানসিকভাবে সব সময়েই খুব অশান্তিতে থাকেন। তিনি মনে করেন তার আর্থিক অবস্থার কথা জেনেও মৌসুমির এরকম দাবি করা অন্যায় এবং অযৌক্তিক এবং মনের ভেতরে রাগ জমতে থাকে। তিনি প্রায়ই বুদের সঙ্গে কথায় কথায় বলতে থাকেন মৌসুমিকে নিয়ে তার অসুবিধার কথা। কিন্তু কিছুদিন পর আর তারাও শুনতে চায় না, বলে- অতই যদি অসুবিধা তাহলে ওকে বলিস না কেন? কিন্তু রবিন পারে না। মৌসুমির বুরা ভাবে রবিনের মতো বর হয় না। এত ঠাণ্ডা মাথা এবং এত শান্ত। কিন্তু মৌসুমি বুঝতে পারে যে রবিন আস্তে আস্তে তার থেকে দূরে সরে গেছে। রবিন ক্রমশই তার কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলেছে এবং তার সহকর্মী বিপাশার সঙ্গে তার একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও তৈরি হয়েছে।
(৪) গুটিয়ে থাকা রাগ
এখানেও রাগের কোনো প্রকাশ নেই। এরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা নিজেদের রাগ সম্ব েসচেতন থাকেন না। জানেন না ঠিক কতটা রেগে আছেন তারা। এই রাগের উৎস অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের অক্ষমতা। যেখানে অসফল হওয়ার সম্ভাবনা সেসব পরিস্থিতি থেকে তারা সাধারণত নিজেদের সরিয়ে নেন। এর ফলে কখনো আত্মতৃপ্তির স্বাদ পান না। কিন্তু সব মানুষের মনেই নিজের পরিচিতি এবং আত্মমর্যাদা সৃষ্টি করার ইচ্ছা থাকে। এদের সেই ইচ্ছা কখনো পূর্ণ হয় না। এই অভাব রাগের সৃষ্টি করে। অনেক সময় তারা রাগ হওয়ার পরিস্থিতি থেকেও নিজেেেদর সরিয়ে নেন। এর ফলে তারা অপ্রিয় পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন না এবং প্রায়ই অন্য লোকেরা তাদের ওপর অন্যায় দাবি বা জুলুম করে। এরাও হাইপারটেনশন, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি মানসিক অসুবিধায় ভোগেন।
উদাহরণঃ গুটিয়ে নেয়া রাগ
রিক্তা সাধারণ মেয়ে। সে স্কুল-কলেজে কোনো প্রতিযোগিতা না নাচ-গান-নাটকে কখনো অংশগ্রহণ করেনি- সুযোগ আসা সত্ত্বেও। কলেজে ঢোকার আগে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও সে বসেনি। ফলত একটি সাধারণ কলেজে পাস কোর্সে বিএস পাস করে বিয়ের পর সে তার কর্মক্ষেত্রে একটি ভালো চাকরির সুযোগ পেয়েও করেনি। ধীরে ধীরে দেখা গেল সে ক্রমশ বদমেজাজি এবং রাগী হয়ে উঠছে। জীবনে সাফল্যের অভাবের জন্য সে তার বাবা-মা, স্বামী-সন্তান সবাইকে দায়ী করে এবং তার রাগের প্রতিফলন পড়ে তাদের ওপর।
(৫) অন্তর্মুখী রাগ
কিছু মানুষ আছে যারা রাগ করার প্রয়োজনকেই অস্বীকার করে। সব পরিস্থিতিকেই নিজের অক্ষমতা বলে মনে করে। তারা হীনমমন্যতায় ভোগে, তাদের মধ্যে বিষণ্নতা দেখা যায় এমনকি আত্মহত্যা করাও সম্ভব। এই ধরনের রাগ অনেক সময়েই সৃষ্টিশীলভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদাহরণঃ অন্তর্মুখী রাগ
পিয়ালি বাবা-মায়ের তৃতীয় মেয়ে। জন্মানোর কিছুদিন পর থেকেই তার বাবার ব্যবসায় সমস্যা দেখা দেয়। পিয়ালিকে অপয়া মনে করা হয়। তার বড় বোনদের ভালো স্কুলে পড়ানোর সুযোগ হয়নি। সে মনে করত তার জন্মটাই বৃথা। ছোটবেলায় জ্বর হলে সে কাউকে কিছু বলত না, পাছে তার ওপর টাকা খরচ করতে হয়। সে ভালো রেজাল্ট করে, লেখেও ভালো। কিন্তু তার নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস নেই। তার একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কিন্তু কথা অনেক দূর এগোনোর পর ছেলেটি জানায় যে সে আরেক জায়গায় তার বিয়ে ঠিক করেছে। এর জন্য পিয়ালির কোনো রাগ হয়নি। সে মনে করল তার অক্ষমতার জন্যই এই বিয়ে হলো না। সে একটি স্কুলে চাকরি করতে আরম্ভ করে। কিন্তু মাঝে মাঝেই তার মনে হতো যে তার বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না এবং সে মরে গেলে অন্যরাও রেহাই পাবে। তাই সে আত্মহত্যারও চেষ্টা করে কিন্তু প্রাণে বেঁচে যায়। তারপর তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হয় এবং acute depression এর চিকিৎসা শুরু হয়।
রাগ নয় কিন্তু রাগের মতো দেখতে
ছদ্মকোপ
না রেগে রাগার ভান- কাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে।
আমরা কেন রাগ করি
আমরা রাগ করি যখন-
  • আমাদের সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করে- যেমন মিনিবাসে উঠতে গিয়ে এক মহিলার গায়ে একটু ঠেকা লাগতে তিনি যেমন অনেক গালমন্দ করেন তখন তার খারাপ ব্যবহারে রাগ হতেই পারে।
  • আমাদের কাছ থেকে কেউ অন্যায় সুযোগ নিচ্ছে- একজন দোকানদার যদি খারাপ জিনিস দেয়ার চেষ্টা করে কিংবা ঠকানোর চেষ্টা করে তখন রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
  • আমাদের ওপর অবিচার করা হলে- অফিসে যথেষ্ট পরিশ্রম করা সত্ত্বেও যদি বস মনে করেন যে সে কাজে ফাঁকি দিচ্ছে কিংবা তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক না দেয়া হয়- সেটা একটা রাগের কারণ হতে পারে।
  • আমাদের কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করছে- বাড়ি থেকে চুরি হলে কিংবা চরিত্র হননকারী মন্তব্য করলে।
  • কারো চেহারা, গায়ের রঙ বা কোনোরকম অক্ষমতা নিয়ে বিদ্রূপ করলে রাগ হয়।
  • আমাদের sensitive বা দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে।
  • আমাদের ওপর অত্যধিক মানসিক বা কাজের চাপ থাকলে- যেমন পরীক্ষার আগে, পারিবারিক অশান্তি, অসুস্থতা। এমনকি আনন্দের জায়গায় ও মানসিক চাপের কারণে রাগারাগি ও ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, যেমন বিয়ে বাড়িতে।
  • কর্তৃত্ব হারানো- নতুন বউ আসার পর, শাশুড়ির যদি মনে হয় যে তার ছেলে আর ‘তার’ থাকছে না-
  • তার থেকে জন্মানো রাগটা প্রতিফলিত হয় বউমার ওপর, বউমার সঙ্গে দুর্ব্যবহারে।
বেশিরভাগ সময়েই রাগের পেছনের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের চাহিদা না মেটা। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন কারণে রাগ হয়। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চাহিদা পাল্টায়।
(১) শৈশব- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে রাগ বা Temper tantrum-এর কারণ হচ্ছে যখন আবদার মেটানো হয় না। যেমন- খেলনা, চকোলেট, টিভি দেখতে না দেয়া ইত্যাদি।
(২) তরুণ-তরুণীদের- এই সময়টা হচ্ছে Identity Formation-এর। নিজের মতামত প্রকাশে বাধা পড়লে, বু-বাবদের কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার, অভিভাবকদের পড়াশোনা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান, প্রেমে হোঁচট খেলে তাদের মধ্যে রাগের সৃষ্টি হয়।
(৩) যুবক-যুবতী- নিজের পছন্দের ক্যারিয়ার না পাওয়ার হতাশা, প্রেমে বিফলতা, বিবাহে বাধা বা করতে গিয়ে সমস্যা।
(৪) প্রাপ্তবয়স্ক- সাফল্যের অভাব, কাজের জায়গায় অসন্তুষ্টি, পারিবারিক অশান্তি, সন্তানকে নিয়ে সমস্যা, আর্থিক সমস্যা। মহিলাদের ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা, কিংবা ক্যারিয়ার না হওয়ার হতাশা, মেনোপজের জীবনচক্র পরিবর্তনের সময়টা, বিশেষ করে মহিলাদের নানারকম শারীরিক এবং মানসিক কারণের জন্য তাদের মধ্যে রাগ এবং উত্তেজনা বেড়ে যায়।
(৫) প্রৌঢ়ত্ব বা বার্ধক্য-একাকীত্ব, শারীরিক সমস্যা, পরনির্ভরতা যেটি শারীরিক অক্ষমতার জন্য কিংবা আর্থিক কারণেও হতে পারে।
কী কী কারণে দাম্পত্য জীবনে রাগের সৃষ্টি হয়
একজন যদি বিয়েতে রাজি না থাকে- জোর করে বিয়ে দেয়া হয়। শিক্ষা শেষ করার আগেই বিয়ে করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের বলা হয়, বিয়ের পরে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কিন্তু তা হয় না। যেখানে একজন নিজেকে নিয়ে বেশি গর্বিত বোধ করেন- এটি তার চেহারা, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক দক্ষতা কিংবা ধনদৌলতের জন্য হতে পারে। তার আচার-আচরণে (স্ত্রী বা স্বামী) সবসময় এটি উপলব্ধি করেন এবং রেগে যান।
  • আবেগ, অনুভূতি ও যৌন সম্পর্কের বিভিন্ন স্তরে অসাম্য বা অসঙ্গতি, মানসিক বা যৌন সামঞ্জস্যের অভাব।
  • সন্তানকে মানুষ করা নিয়ে মতভেদ।
  • Martyr syndrome­- নিজেকে শহীদ ভাবার প্রবণতা। দুটি মানুষের সম্পর্কে দেখা যায়, একজন প্রতি পদে অন্যজনকে মনে করে দিচ্ছে যে তিনি নিজে কত কষ্ট সহ্য করেন এবং আত্মত্যাগ করে তার সঙ্গীর সুবিধা করছেন। এটা ঠিকই দুটি মানুষের সম্পর্কে সবসময় দুজনকে কিছু না কিছু অসুবিধা করে চলতে হয়। সুস্থ সম্পর্কের খাতিরে এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া হয়। যারা এই স্বাভাবিক সাধারণ ব্যাপারটিকে প্রতি মুহূর্তে নিজস্ব সাংঘাতিক আত্মত্যাগ বলে মনে করেন তারা Martyr syndrome- এ ভুগছেন। অর্থাৎ তারা সঙ্গীর স্বার্থে শহীদ হয়ে চলেছেন। এর ফলে অন্যজনের মধ্যে রাগের সৃষ্টি হয়।
  • অসহিষ্ণু, খিটখিটে, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। তার স্বভাবের জন্য স্ত্রীর মধ্যেও রাগ সৃষ্টি হয় কিন্তু সেটা সাধারণত অসুস্থতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
  • শ্বশুরবাড়ি সংক্রান্ত- অনেক সময় স্ত্রীদের রাগের কারণ হয়ে ওঠে তাদের স্বামীর ব্যবহার- যেখানে তারা নিজের বাড়ির লোকদের পক্ষে কথা বলে স্ত্রীর মতামত উপেক্ষা করে। অনেক সময় স্বামীও মনে করতে পারে যে স্ত্রীর বাড়ির লোকেরা তাদের দাম্পত্য জীবনে অযথা হস্তক্ষেপ করছে এবং স্ত্রীকে তারাই চালিত করছে।
  • সন্দেহপ্রবণতা- যখন স্ত্রী বা স্বামীর সন্দেহপ্রবণতার জন্য অপরজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তখন তার মধ্যে রাগের উৎপত্তি হয়।
  • জীবনে অন্য জিনিসে প্রাধান্য- কাজ, বু-বাব, আড্ডা, সন্তান, ধর্ম ইত্যাদি যদি স্বামী-স্ত্রীর থেকে বেশি প্রাধান্য পায় সেখানে অন্যজনের মধ্যে একটা রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • দায়িত্ব- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজনের যদি কোনো ‘ক্রনিক’ অসুস্থতা থাকে, তখন অপরজনকে দুজনের দায়িত্ব নিতে হয়। এই দায়িত্বের বোঝা সামলাতে সামলাতে রাগ এসে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
  • তৃতীয় ব্যক্তি- একটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যদি আরেকটি নারী-পুরুষ আসে- সেটি একটি সাংঘাতিক রাগের কারণ হতে পারে- যার ফলে দাম্পত্য সুখ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
সিঙ্গল পেরেন্ট- ডিভোর্সি, অকৃতদার। ডিভোর্সিদের ক্ষেত্রে প্রতারণার অথবা প্রত্যাখ্যানের ফলে এই ক্ষেত্রে রাগ জন্মাতে পারে।
উভয়ক্ষেত্রেই মনে হতে পারে সব দায়িত্ব অন্যায্যভাবে একজনকেই বইতে হচ্ছে।
রাগের কারণ যখন অসুস্থতা
শারীরিক অসুস্থতা
ক. দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা- যেমন আর্থ্রাইটিস বা কিছু কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
খ. অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা- এই রোগীদের রাগ এবং বিষণ্নতা দুই-ই দেখা দিতে পারে।
গ. কিছু রোগের নিয়মবদ্ধ চিকিৎসা- নিয়ম মেনে চলতে চলতে কিছু রোগী অসহিষ্ণু হয়ে পড়েন- যেমন ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগী ইত্যাদি।
ঘ. যে রোগ পরনির্ভর করে তোলে- অসুস্থতা যদি রোগীকে সারাক্ষণ পরমুখাপেক্ষী করে দেয়, সেখানে নিজের অক্ষমতার জন্য রাগ জন্মায়- যেমন স্ট্রোক, অঙ্গহানি।
মানসিক অসুস্থতা
১। সন্দেহবাতিক- অবিশ্বাস এবং ক্ষতির ভয় থেকে যখন রোগের উৎপত্তি হয়। অনেক সময় সেটা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। স্কিটজোফ্রেনিয়া এবং প্যারানয়েড (ডিলিউশনাল) ডিসঅর্ডারে এ ধরনের সন্দেহ দেখা যায়। সেখানে রোগী নিজেকে কাল্পনিক শত্রু থেকে বাঁচানোর জন্য অন্যের ক্ষতি, এমনকি খুনও করতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী অন্যজনকে সন্দেহ করাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে যে, তার থেকে উৎপন্ন রাগ প্রাণহানিকারকও হতে পারে। যা হয়েছিল ওথেলো ও ডেসডিমোনার ক্ষেত্রে। এই কারণে এই ধরনের প্যারানয়েড বা ডিলিউশন ডিসঅর্ডারকে ওথেলোস সিনড্রমও বলা হয়।
২। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার- বিশেষ করে সাইকোপ্যাথ অথবা অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি। তাছাড়াও অবসেসিভ ক?পালসিভ পারসোনালিটি, ডিপেন্ড্যান্ট, নারসিস্টিক পারসোনালিটি এবং বর্ডার লাইন পারসোনালিটি। বিভিন্ন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারজনিত সমস্যার কারণ হলো ছোটবেলা থেকে ব্যক্তিত্বের বিকাশ স্বাভাবিকভাবে না হওয়ার কারণে এদের প্রায়ই আচার-আচরণে অসামঞ্জস্য দেখা যায়। এই কারণে অন্য মানুষ যেখানে রাগ করবে না কিংবা রাগ করার কথা মনেও ভাববে না সেই পরিস্থিতিতেও এরা ভয়ঙ্কর রেগে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার না থাকলেও কিছু মানুষের কিছু পারসোনালিটির খামতি থাকে যার জন্য তাদের যেমন রাগী বলা হয় তেমন তিরিক্ষি মেজাজের লোক, দাম্ভিক মানুষ, অসহিষ্ণু মানুষ এবং খ্যাপাও আখ্যা দেয়া হয়।
৩। বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের রোগীদের রাগ দেখা দেয়- অনেক ক্ষেত্রে এই রাগটা নিজেদের ওপরই হতে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই রাগের প্রকাশটা হয় অন্যের উপরে।
৪। নেশাজনিত কারণ- মদ বা ড্রাগ
রাগের কারণে লোকে নেশা করতে পারে এবং অপরিমিত নেশাও রাগ সৃষ্টি করতে পারে।
রাগের প্রভাব
শারীরিক
ক. রাগের জন্য বিভিন্ন পেশিতে টেনশন বাড়ার ফলে প্রধানত মাথা, ঘাড় আর পিঠে ব্যথা হয়।
খ. হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
গ. রাগের ফলে পাকস্থলিতে এসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি হয়। ফলে বদহজম, এসিডিটি এবং আলসারও হতে পারে।
ঘ. রাগ রাক্তচাপ বৃদ্ধি করে- স্ট্রোক, এনিগমা এবং হার্টঅ্যাটাকও হতে পারে।
ঙ. রাগ শরীরস্থ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটায়, নানা রকম রোগ দেখা যায়, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম।
মানসিক
ক. মনোসংযোগের ক্ষমতা কমে যায়, অস্থিরতা বেড়ে যায়
খ. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
গ. ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ এবং বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে।
ঘ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক হতে পারে। অনেকেই রাগ করে খাওয়াই ব করে দেন। তেমনই কিছু কিছু রোগীর খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন অনেক ডায়াবেটিক রোগী রেগে গেলে নিষিদ্ধ খাবার বেশি খেয়ে ফেলেন।
সামাজিক
ক. পারসপরিক সম্পর্কে সমস্যা এবং ভুল বোঝাবুঝি
খ. অসংযমী ব্যবহার- যেমন গালিগালাজ, জিনিসপত্র ভাঙচুর করা, অন্যদের মারধর করা, এমনকি খুন করা বা নিজের ওপর রাগ করে আত্মহত্যা করা।
গ. মাদকদ্রব্য সেবন করা- মদ, ড্রাগ, কিংবা অতিরিক্ত ধূমপান করা সবই অনেক ক্ষেত্রে রাগের কারণে হয়ে থাকতে পারে।
ঘ. দুর্ঘটনাপ্রবণতা- আগেও বলা হয়েছে যে, অতিরিক্ত রাগের জন্য মানুষ অনেক সময় খুব অসংযমীভাবে গাড়ি চালান কিংবা চলাফেরা করেন, যার ফলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কর্মক্ষেত্রে
ক. কাজে অসন্তোষ।
খ. উৎসাহ ভঙ্গ।
গ. বারবার চাকরি পাল্টানো।
ঘ. সহকর্মীদের সঙ্গে খারাপ স?পর্ক।
এসবই রাগী লোকদের সঙ্গে সঙ্গে চলে।
রাগ কী করে সামলাবেন
প্রথমত রাগ কেন সামলানো দরকার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাগ আমাদের জীবনে নেতিবাচক ভূমিকায় আসে এবং এর পরিণতি অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক হতে পারে। রাগের প্রভাব সম্ব েবিস্তারিত আলোচনার পর আমরা সবাই একমত যে, আমাদের জীবন সুষ্ঠুভাবে কাটাতে গেলে এর প্রভাব যত কম রাখা যায় ততই মঙ্গল। কিন্তু এটাও অনস্বীকার্য যে, রাগ বশে আনা সম্ব েবলা যত সহজ সেই পদ্ধতিগুলো কাজে প্রয়োগ করা অনেক কঠিন। রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রথম ধাপ হলো-
১। রাগ নিজের জীবনে একটা সমস্যা- সে কথা স্বীকার করা এবং মেনে নেয়া।
২। অযৌক্তিক রাগের কারণ অনুসান করা। অনেক সময় আমাদের রাগ অযৌক্তিক হতে পারে। যেমন- রানু যদি হঠাৎ তার ছেলের একটু তুচ্ছ প্রশ্নে ঝাঁঝিয়ে ওঠে বলে ‘বড় জ্বালাতন করিস’। তখন মনে হবে এটা একটা অহেতুক রাগ। কিন্তু পরে জানা যেতে পারে, তার আগেই স্বামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এই রাগকে বলা হয় ডিসপ্লেসড অ্যাঙ্গার। সাদা কথায়, উদোর রাগ বুধোর ঘাড়ে। এ ধরনের রাগ প্রায়ই দেখা যায়, যারা বাইরের জগতে নিজেদের রাগ প্রকাশ করতে পারে না তারা সেই রাগ বাড়ির লোকদের ওপর ফলান।
রাজুর মা ছোটবেলা থেকেই তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করত। তাকে লোহার ডান্ডা দিয়ে মারধর করে বাড়িতে তালাচাবি দিয়ে ব করে চলে যেতেন। রাজুর মা তার সাত বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। ছোটবেলা থেকেই রাজুর মহিলাদের ওপর সাংঘাতিক রাগ এবং ঘেন্না। তার মহিলা সহকর্মীদের সঙ্গে ব্যবহারে সেটা সপষ্ট বোঝা যায়।
আপাতদৃষ্টিতে এই রাগও অযৌক্তিক মনে হতে পারে। কিন্তু রানুর রাগের মতো এরও একটা কারণ আছে। এটা হয়তো খুঁজে পাওয়া খানিক আগে হওয়া ঝগড়ার মতো সহজ হবে না, কিন্তু যতক্ষণ না বোঝা যাবে, ততক্ষণ রাজু তার সহকর্মিণীদের সঙ্গে এবং হয়তো সহকর্মিণীর সঙ্গেও স্বাভাবিক সাধারণ ব্যবহার করতে পারবে না।
আমাদের রাগের মূল কারণ খুঁজে বের করা তাই খুব প্রয়োজন। তা না হলে আমরা আমাদের অযৌক্তিক বা ইরিটেশনাল এবং ডিসপ্লেসড রাগ সামলাতে পারব না।
(৩) সঠিক পদ্ধতিতে নিজের কথা বলতে এবং অন্যের কথা বুঝতে শেখা প্রয়োজন- অনেক সময় আমরা অন্যের কথা ভুল বুঝি। এসব ক্ষেত্রে কোনো কথার প্রেক্ষিতে আমরা অন্য কোনো কিছু অনুমান করে নিই। যেমন রিতার মা তাকে বললেন ‘এই জিনিসটা একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবো’। তাতে রিতা খুব রেগে গেল কারণ তার মনে হলো তার মা বলতে চাইলেন যে, তার মাথা গরমই থাকে। এখানে যদি সে জিজ্ঞাসা করত ‘আমি তোমার কথাটা ঠিক বুঝলাম না, তুমি কী বলছ যে, আমি সাধারণত মাথা গরম করে চলি?’ তা হলেই রিতার মা ঠিক কী বলতে চাইছিলেন তা জানা যেত।
৪। সাবমিসিভ বা প্যাসিভ কমিউনিকেশন বদলের প্রয়োজন- রাগ করে বোঝার ভুল যেমন রিতার হলো- অনেক সময় লজ্জা বা সংকোচের জন্যও এই সমস্যা দেখা যায়। মিষ্টি গিয়েছিল তার বু রিমার বাড়িতে দাওয়াতে। সেখানে দেখল যে রিমা শাড়ি বিক্রির ব্যবসা ফেঁদেছে। না বলতে না পেরে মিষ্টি বাধ্য হয়ে রিমার অনুরোধে একটা শাড়ি কিনল। কিন্তু তার মনে হতে থাকল যে এই শাড়িটা রিমা বাজারের চেয়ে বেশি দামে গছাল। ফলে সারা রাস্তা গজগজ করতে করতে সে বাড়ি ফিরল এবং স্যাবেলা স্বামীকে বলল আর কোনো দিন রিমার বাড়ি যাবে না।
মিষ্টির এ ক্ষেত্রে অ্যাসারটিভনেস ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন। যেখানে না বলতে চান কিন্তু পারেন না, সেখানে কীভাবে অন্যকে আঘাত না করে বা উত্তেজিত না হয়ে নিজের মনের কথা প্রকাশ করা যায়, তাই শেখা যায় অ্যাসারটিভনেস ট্রেনিংয়ে।
৫। আগ্রাসী ব্যবহার বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন
যাদের রাগের প্রকাশ খুব সাংঘাতিক- যেমন ডালে লবণ কম হয়েছে বলে পলাশ সে দিন বউয়ের ওপর রাগ করে ভাতের থালা ছুড়ে মারল তার কপালে। বউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে সেটা না দেখেই সে বেরিয়ে চলে গেছে কাজের জায়গায়। সারাদিন পরে ফিরে দেখল যে অকার ঘরে কপালে সেলাই নিয়ে শুয়ে আছে বউ, পলাশের মা সেদ্ধ ভাত রেঁধে রেখে বাইরে গেছে, আর বাড়ির কেউ ওর সঙ্গে কথা বলছে না। পলাশের মনে সামান্য অনুশোচনা হলেও ক্ষুধার মুখে মনে হলো- সে নিজে সকালে না খেয়ে কাজে গেছে ফিরে এসে জুটেছে নুন ভাত, আর কারোর সে বিষয়ে কোনো হুঁশই নেই। বউ মন দিয়ে রান্না করলেই তো এসব কিছুই হতো না।
এই ধরনের রাগ যদি মানসিক রোগের জন্য না হয়, তাহলে রাগী ব্যক্তির প্রয়োজন ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট’। এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি যেগুলো রাগী লোকদের রাগ সামলানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট সঠিক জায়গায়, সঠিক বিশেষজ্ঞের কাছে শিখতে হয়।
৬। নিরীক্ষণ শিক্ষা (Observational learning) পাল্টানোর দরকার হয়- রাজু ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে তার বাবার প্রচণ্ড রাগ। জিনিস ছোড়াছুড়ি, ভাঙাভাঙি মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। ছোট থেকেই সে শিখেছে রাগ আর অসন্তোষ প্রকাশ করার একমাত্র পদ্ধতিই হলো এই রকম আচরণ করা। বিশেষ করে সেই সময়ে তার মায়ের আচার-আচরণ সেই বিশ্বাসকে দৃঢ় করে তুলেছে। মা সব সময়েই এই পরিস্থিতিতে শান্তভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে এমনভাবে চলাফেরা করতেন যে, পরিস্থিতি কখনোই হাতের বাইরে যেত না। কিন্তু রাজুর বাবার রাগ থামানোরও কোনো চেষ্টা হতো না। রাজুও রাগী মানুষ হয়ে বড় হয়েছে। প্রয়োজনে জিনিস ভাঙতে বা ছুড়ে ফেলতে সে দ্বিধা করে না। কিন্তু সেও তার বাবার মতোই মনে করে না তার রাগ নিয়ে কোনো সমস্যা আছে। তার মা প্রায়ই বলে থাকেন তার রাগ তার বাবার মতো নয়।
সমস্যা শুরু হলো রাজুর বিয়ের পর। আধুনিক মতাদর্শে বিশ্বাসী রানি নিজে বড় চাকরি করে এবং তারও যথেষ্ট মেজাজ। রাজুর রাগকে সে তোয়াক্কা করে চলে না, ফলে বাড়িতে অশান্তি লেগেই থাকে। রাজু যুক্তি দিয়ে বুঝতে পারে তার চট করে রেগে যাওয়াটা তার মায়ের মতো তার স্ত্রী মেনে নেবে না। কিন্তু পরিস্থিতির মধ্যে পড়লে সে নিজেকে সামলাতে পারে না। এক্ষেত্রে এদের দুজনেরই ম্যারেজ কাউন্সিলিং এবং অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট করা উচিত।
৭। সমালোচনাকে প্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করা- সাগরকে ছোটবেলা থেকেই বলা হয়েছিল যে তার দ্বারা সায়েন্স হবে না। কিন্তু সে বড় হয়ে ডাক্তার হয়েছে। সমালোচনাকে আমরা একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারি এবং এটাই আমাদের প্রেরণাশক্তি বা মোটিভেটিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ হবে না, পারবে না, পারো না কথাগুলোকে আমরা আমাদের মনে রাগ সৃষ্টি না করতে দিয়ে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারি। একটা চ্যালেঞ্জের সামনে হার স্বীকার করলে যে রাগ জন্মায়, সেই রাগটাকে মানুষ ঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেই চ্যালেঞ্জ জয় করার শক্তি পায়। এটা রাগের ইতিবাচক রূপ।
৮। নেশা ছাড়া দরকার- চাপা রাগ অনেক সময় নেশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গুটিয়ে রাখা রাগ প্রকাশ করতে মদের জুড়ি নেই। যে মানুষ রাগ করে কিন্তু রাগ প্রকাশ করতে পারে না, তারা অনেক সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাদের রাগ প্রকাশ করতে পারে। অসুবিধার কথা হলো, এই প্রকাশ অনেক সময় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। সেই রাগের প্রকোপে অন্য কেউ ভীষণভাবে আহত, এমনকি নিহতও হতে পারেন। এক্ষেত্রে নেশার চিকিৎসার প্রয়োজন। রাগ কমানোর বিভিন্ন পদ্ধতি সাধারণত এসব চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে থাকে।
৯। চাহিদাকে বাস্তব রাখার চেষ্টা করা দরকার- আমাদের চাহিদা যদি অবাস্তব হয়, সেগুলো না মেটার সম্ভাবনাই বেশি। তার থেকে রাগ জন্মানোও স্বাভাবিক। কিন্তু চাহিদা কম বা বাস্তবধর্ম হলে আমাদের রাগ এবং দুঃখ দুই-ই কম হবে। অর্থাৎ আমার স্বামী সবসময় আমার মনের কষ্ট বুঝবে, সে আমার সব চাহিদা তৎক্ষণাৎ পূরণ করবে, তার মা-বাবাকে ভুলে গিয়ে সবসময় শুধু আমারই কথা ভাববে, আমার ছেলে সবসময় পরীক্ষায় ফার্স্টই হবে- না হলেও চলবে, শুধু সব সাবজেক্টে অন্যদের চেয়ে বেশি নম্বর পেলেই চলবে...এসব চাহিদা বোধহয় কারোরই পূর্ণ হয় না। তাই চাহিদার মাত্রা সীমিত রাখার চেষ্টা করাই কাম্য।
১০। অন্যকে চালনা করার চেষ্টা কমানো উচিত- তনিমার বিয়ে হয়েছে অল্প বয়সে। তার স্বামী শিক্ষিত, মার্জিত, ব্যবসায়ী। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তনিমা ক্রমশ তার ব্যবসায়ের ব্যাপারে ঔৎসুক্য প্রকাশ করতে শুরু করে। প্রথমে অমলের ব্যাপারটা ভালোই লাগে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তনিমা তার প্রতিটি সিদ্ধান্তকে এমনভাবে সমালোচনা করতে শুরু করে যে, তিনি হকচকিয়ে যান। কিছুদিন তিনি তনিমার কথায় নিজের কাজ চালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু বুঝতে পারেন সেভাবে হবে না। তিনি সপষ্ট ভাষায় তনিমাকে জানিয়ে দেন, হয় সংসার নিয়ে থাকুক, নয়তো নিজে অন্য কোনো কাজ করুক। কিন্তু তার কাজের জায়গায় আর যেন না আসে।
অনেক রাগারাগির পর তনিমা নিজে একটি ব্যবসা শুরু করে। সাফল্য আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধ পায় এবং তাকে কর্মচারী রাখতে হয়। কিন্তু তাদের প্রত্যেক কাজে তনিমা এতই বেশি তদারকি করতে থাকে তারা বেশিদিন টেকে না। তনিমার রাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে অমল তাকে মনোবিদের নিকট নিয়ে যায়।
মনোবিদ বলেন, তনিমার জীবনে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ ও সঞ্চালিত করার একটা অদম্য ইচ্ছা আছে। কিন্তু সে চেষ্টা যখন ফল দেয় না, তখনই তার মনে জাগে রাগ। এই রাগের ফলে তার বিবাহিত জীবনে সে স্বামীর থেকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে দূরে সরে গেছে। কাজের জায়গায় বারবার কর্মচারী বদলের ফলে তার ব্যবসাও বাড়েনি। এদের ক্ষেত্রে সাইকোডায়নামিক সাইকোথেরাপি করার প্রয়োজন।
১১। শখ বা হবি ডেভেলপ করা- আবার মনে করাই ঃ রাগ আমাদের অপূর্ণ চাহিদা বা প্রত্যাশার ফল। আমরা যদি এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মানসিক চাহিদা অন্যভাবে পূর্ণ করতে পারি তা হলে রাগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আমার স্বামী আমাকে সময় দিতে পারছে না বলে আমি তার ওপর রাগ করে বাড়িতে জিনিস ছোড়াছুড়ি না করে একটা শখ তৈরি করতে পারি, যার থেকে আমার সময়ও কাটবে এবং সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আমার রাগও কমবে। যেমন বাজনা শেখা, গান করা, আঁকা শেখা, এমনকি চাইলে নতুন নতুন রান্না শেখা, বাড়িতে যথেষ্ট সুযোগ থাকলে বাগান করা ইত্যাদি। এখান থেকে একটা আত্মতৃপ্তিবোধ তৈরি হয়, যেটা আমাদের পাথেয় হয়ে থাকে সারাজীবন।
১২। রিলাক্সেশন, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদি- রাগের কারণে পেশিতে টেনশন বাড়ে। রিলাক্সেশন, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদি অন্যান্য সাইকোথেরাপির সাহায্যে মনের শান্তি বাড়ে এবং টেনশন কমে। শরীর রিলাক্স করলে সেই অনুভূতি মনেও আস্তে আস্তে ছেয়ে যায়। তাতে মানসিক শান্তি আসে এবং রাগ কমতে সাহায্য করে। রিলাক্সেশন অন্তত প্রথম দিকে মনোবিদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে করতে হয়, মিউজিক থেরাপির জন্যও বিশেষজ্ঞ পাওয়া যায়, কিন্তু গান বা বাজনা শুনে শান্তি পাওয়ার বা রিলাক্স করার জন্য বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না, শান্তি উদ্রেক করে এমন গান বা বাজনা বাড়িতে বসেই শোনা যায়।
১৩। ধ্যানের মাধ্যমে মন থেকে সব ভাবনা-চিন্তা দূর করে মনটাকে সম্পুর্ণ চিন্তামুক্ত করা হয়- তার ফলে রাগভাব কমে যায় এবং মানসিক শান্তি আসে। কিন্তু ধ্যান সবসময় সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষকের কাছে শিখতে হয়।
বেঁচে থাকার পথে আমাদের উচিত দৈনন্দিন চিন্তাভাবনার বাইরে জীবন সম্বীয় একটা মতাদর্শ তৈরি করা। এই মতাদর্শের সাহায্যে আমরা যদি এই বিশ্বাস মনের মধ্যে আনতে পারি, সব জিনিস আমাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা পাই না এবং সেটা আমাদের রোজকার কাজকর্মে প্রকাশ করতে পারি, তা হলে দেখব রাগ করার মতো পরিস্থিতি যেন আমাদের জীবনে আর আসে না। আসলে আমরা সেসব পরিস্থিতিতে রাগ না করেই মোকাবিলা করতে পারব।
কেন মাথা গরম হয়
রাগের উৎস খুঁজতে গেলে আমাদের পৌঁছে যেতে হবে মস্তিষেক। সেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষেকর এক বিশেষ অঞ্চল লিম্বিক সিস্টেম, মাস্টার গ্ল্যান্ড পিটুইটারি আর হাইপোথ্যালামাসের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে লিম্বিক হাইপোথ্যালামাস পিটুইটারি অ্যাক্সিস। এই অ্যাক্সিসের কলকাঠি বাড়ায় সৃষ্টি হয় ষড়রিপুর অন্যতম ক্রোধ যা রাগ। রাগ, দুঃখ, ভয় এসবের পেছনেই আছে মূলত দুটি নিউরোহরমোনের মাত্রার ওঠানামা। এরা হলো অ্যাড্রিনালিন আর ননঅ্যাড্রিনালিন। এদের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ রেগে ওঠে আর এ ক্রমাগত চাপা রাগ এই দুই হরমোনের মাত্রা আরো ঊর্ধ্বমুখী করে তোলে, ব্যাপারটা চলতেই থাকে চক্রাকারে।
রাগ থেকে রকমারি অসুস্থতা
‘রেগে আগুন’ ব্যাপারটা নেহাতই কথার কথা নয়, কেননা প্রচণ্ড রেগে গেলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যায়। স্বাভাবিক টেম্পারেচার ফিরিয়ে আনতে ঘাম হয়, নাড়ির গতি ও নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে যায়। কথা বলার ধরন ও গলার স্বর যায় বদলে, রক্তচক্ষু অর্থাৎ চোখ লাল হয়ে ওঠে অনেকের। আসলে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে বা কমে যাওয়ার জন্য এসব শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। হার্টবিট বেড়ে গিয়ে অনেকের আচমকা হার্টঅ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেরিব্রাল অ্যাটাকের চান্সও বাড়ে। যাদের কথায় কথায় রেগে যাওয়ার অভ্যাস (তা কাজের চাপের জন্যই হোক, কোনো সম্পর্কের অবনতির জন্যই হোক অথবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে) তাদের এই লাগাতার ক্রোধ বেশ কিছু ক্রনিক শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। যেমন- মাইগ্রেন বা মাথার যন্ত্রণা, ডায়রিয়া, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম ইত্যাদি।
এছাড়া অ্যাজমা, বাত, এপিলেপসি, হার্টের ক্রনিক পেন সিনড্রম, ডায়াবেটিস মেলিটাস, এসএলই ইত্যাদি অসুখ যদি থাকে, মেজাজ সপ্তমে চড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়। রাগের মাথায় অনেকের আবার কথা জড়িয়ে যায়। চিৎকার করে দ্রুতবেগে কথা বলতে গিয়ে তোতলামি এসে যায়। এছাড়া যাদের একজিমার প্রবণতা আছে রাগের চোটে ত্বকের এই সমস্যা বাড়তে থাকে। কালাপাহাড়ের মতো রাগ মানুষকে ধ্বংসকামী করে তোলে। এর ফলে শুধু যে সম্পর্ক ভেঙে যায় তা নয়, রাগী মানুষটির জীবনের ছন্দে আসতে পারে নানা বাধা-বিপত্তি। ঠিক এই ধরনের রাগের বশবর্তী হয়েই পরশুরাম ‘কঠোর কুঠার’-এর আঘাতে একুশবার এ বিশ্ব থেকে ক্ষত্রিয় সমাজকে মুছে ফেলেছিলেন। শুধু তাই নয়, চণ্ডাল রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য পরশুরাম হত্যা করেছিলেন নিজের জন্মদাত্রীকে। অ আর দুঃসহ ক্রোধের এরকম অজস্র লজ্জাজনক ইতিহাস আমরা জানি। রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য না হয়ে রাগ দমন করার শিক্ষাই এ যুগের ব্যস্ত মানুষের কাম্য হওয়া উচিত। তাতে একদিকে যেমন মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক বজায় থাকে, তেমনই সুস্থ দেহমনে দীর্ঘজীবন লাভ করা যায়। সাইকোসোমাটিক অসুখ-বিসুখের শিকার হতে হয় না।
‘হাড়ে আমার রাগটি নেই’ এ পর্যন্ত পড়ে ভেবে বসবেন না যেন ‘রাগ’ মানেই ‘জীবন-যৌবন, ধন-সম্পদ’ সব গেল। রাগের বেশ কিছু ভালো দিকও আছে। কেউ অকারণে অপমান করলে, আঘাত করলে বা অন্যায় আচরণ করলে তার প্রতি রাগ দেখানো অবশ্যই দরকার, কেননা এর ফলে একজন মানুষের ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠে। তবে এটাও ঠিক, রাগের বহিঃপ্রকাশটা যথাযথ হওয়া চাই। রেগে গিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করা বা হাতের কাছে জিনিসপত্র পেলে ভাঙচুর করা অথবা অকথ্য গালিগালাজ কখনোই কাম্য নয়। অন্যায় অবিচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রেগে যাওয়া অবশ্যই একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। শুধু তাই নয়, আত্মবিশ্বাস তৈরিতে এমনকি জীবনের ভুলভ্রান্তি দূর করে তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনতেও সাহায্য করে। অবশ্য সঠিক সময়ে রাগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে শিখতে হবে। রাগের বশবর্তী হয়ে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে বরং ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে, নিজের যোগ্যতা প্রমাণের একটা বড় পথ রাগ। মনোবিদদের মতে, অ্যাংজাইটি ও অ্যাঙ্গার পারফরম্যান্স এর উন্নতি করতে সাহায্য করে।
Year Kas Dot son Curve অনুযায়ী দেখা যায়, Anger Arousal Agitation Anxiety Good Performance.
আধুনিক মানুষ যখন বিজ্ঞানের বেশিরভাগ যুক্তিই মেনে নিয়েছে তখন রাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও মনোবিদদের পরামর্শ মেনে চলা দরকার। এতে নিজের, নিকটজনের, পরিবারের সর্বোপরি সমাজের কল্যাণ।
রাগ কমানোর ব্রহ্মাস্ত্র
রেগে গিয়ে শক্তির অপচয় করবেন না। রাগের ফলে মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের কাজকর্ম পুরোপুরি ওলটপালট হয়ে গিয়ে তার শরীরের কাজগুলোও যথাযথভাবে হতে পারে না। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে, চোখ লাল হয়ে, বুক ধড়ফড় করে প্রচুর এনার্জি ক্ষয় হয়। এর পরবর্তী পর্যায়ে রেগে যাওয়া মানুষটির মানসিকতা ভীষণ নেগেটিভ হয়ে পড়ে। রাগের চরম পর্যায়ে মানুষ তার যথাযথ বিচার-বিবেচনা হারিয়ে বসে। ফলে চকিতে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। দীর্ঘদিনের সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরে, ভেঙে যায় সুন্দর বুত্ব। সুতরাং অকারণে রেগে গিয়ে শক্তির অপচয় না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বোঝাপড়া রাগ কমায়
দেখা গেছে যথাযথ শিক্ষা ও নিজেদের মধ্যে বোঝপড়া থাকলে ভুল বোঝাবুঝি ও রাগের ঘটনা অনেক কম হয়। আর উল্টোটাও সমানভাবে সত্যি যে, ঠিকঠাক বোঝাপড়ার অভাবে রাগারাগির ব্যাপারটা অনেক বেশি হয়। ইতিহাসের পাতা উলটে এরকম ঘটনা দেখা যায় অজস্র। অনেক রাজা-বাদশা, মুহূর্তের ভুলে, সামান্য বোঝাপড়ার অভাবে প্রচণ্ড রাগের মাথায় এমনই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রাজ্যপাট চলে গেছে অন্যের দখলে। অবশ্য শুধু ইতিহাসের পাতাতেই বা কেন, আমাদের আশপাশের সাধারণ পরিবারেও এ ঘটনা আকছার ঘটে। বোঝাপড়ার অভাবে সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যেতে পারে স্বামী-স্ত্রী, শাশুড়ি-বউমা, ভাইবোন, ছেলেমেয়ে, নিকট বু বা প্রেমিক-প্রেমিকারও। রাগ দমন করতে শিক্ষাসংস্কৃতির একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। যথাযথ বোঝাপড়া আছে এমন পরিবারের মানুষজনের মধ্যে রাগ ব্যাপারটাই যথেষ্ট কম। সুসম্পর্ক ও ঠিকঠাক আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য এই ধরনের মানুষের সহনশীলতা ও যে কোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা যথেষ্ট বেশি। তাই এরা চট করে রেগে ওঠে না।
রাগ কমানোর মূলমন্ত্র
আমি কিছুতেই রাগব না- রাগ দমিয়ে রাখার মূলমন্ত্র কিন্তু এটাই। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে মানুষে মানুষে বোঝাপড়া যেমন দরকার, তেমনই প্রয়োজন-রাগের কারণ ভুলে যাওয়া এবং অবশ্যই ক্ষমা করা। ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখলে শত্রুর ওপরেও রাগ করতে পারবেন না।
সেন্স অব হিউমার বাড়িয়ে তুলুন
রাজার অসুখ সারাতে সেকালের বৈদ্য যে দাওয়াই দিয়েছিলেন তা মনে আছে? এমন একজন মানুষ খুঁজে বের করতে হবে যার মনে কোনো দুঃখ নেই। তার বিছানায় ঘুমালে রাজার অসুখ সারবে। অবশেষে সেই মানুষের খোঁজ পাওয়া গেল। যে পৃথিবী বনবন করে ঘুরছে, চাঁদ উঠছে, সূর্য ডুবছে-এসবের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে সে হাসির খোরাক। তাই সে দিবা-রাত্রি মনের আনন্দে হেসে চলেছে। যদিও এ ঘটনা নিছকই একটা গল্প কিন্তু এ গল্পের তাৎপর্য বুদ্ধিমান মানুষ নিশ্চয়ই বুঝেছেন। জীবনের সব ঘটনার উজ্জ্বল দিকটা দেখা ও তার মধ্যে আনন্দের খোরাক খুঁজে নিতে পারলে আর রাগ-দ্বেষ থাকবে না। রেগে আগুন, তেলে কেত্তন...কথাগুলো তখন শুধু বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ধরুন আপনি ছাতা না নিয়ে বাইরে বেরিয়েছেন, ঝমঝম করে বৃষ্টি এল- মেঘের ওপর রাগ করে কী লাভ আছে বরং হঠাৎ বৃষ্টি আসায় মানুষজনের দৌড়াদৌড়ি দেখে তার মধ্যে মজা খুঁজে নিন।
বক্স-১
রগচটা কৈশোর
বয়ঃসন্ধি ছেলেমেয়েদের মধ্যে অল্পতেই চটে যাওয়ার প্রবণতা বেশ বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইয়ুথ ভায়োলেন্স প্রিভমেশন রিসার্স সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। এদের মধ্যে ৩৩৫ কিশোর রাগ দমন করতে না পেরে ভায়োলেন্ট হয়ে ওঠে। তুচ্ছ কারণে প্রচণ্ড মারপিট করে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রতি চারজন টিনএজারের মধ্যে তিনজনই রাগের প্রকাশ ঘটায় মারধর করে। এরা নিজেরাই স্বীকার করেছে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় তাদের জানা নেই।
আমাদের দেশের ছবিটাও অনেকটা এরকম। কোনো সমীক্ষা বা হিসাবনিকাশ না থাকলেও ছবিটা খুব একটা আলাদা নয়। রাগের প্রকাশ হিসেবে বয়ঃসরি ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। তুচ্ছ কারণে রাগ করে সেই রাগ মনে পুষে রেখে, প্রিয় বুকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতেও পিছপা হয় না তারা।
আসলে এই বয়সটাই টালমাটালের বয়স। বাবা-মা ও নিকটজনের যথাযথ সাহায্যের অভাবে প্রচণ্ড ক্রোধ ভায়োলেন্সের রূপ নিতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের রাগ দমনের ব্যাপারে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা অন্য গুরুজনরা (যেমন- দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা-চাচী ইত্যাদি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।একই সঙ্গে ছেলেটি বা মেয়েটিকেও সচেতন হতে হবে অকারণে ভয়ানকভাবে রেগে না উঠে নিজের বিচার-বিবেচনা কাজে লাগাতে। কোনো সহপাঠী বা বুর ওপর চটে গিয়ে মনে মনে গর্জন করা- ‘আমি ওর মজা দেখিয়ে ছাড়ব’ এই ব্যাপারটা কখনোই ঠিক নয়।
বরং কোনো উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মাথা গরম হয়ে গেলে সেল্ফ কন্ট্রোল করা জরুরি। নিজের মনকেই বোঝাতে হবে-রিল্যাক্স করো, শান্ত হও। নিতান্তই না পারলে একজন অভিভাবক বা ঠাণ্ডা মাথার বুকে রাগের ব্যাপারটা খুলে বলতে হবে। এছাড়া অভিভাবকদেরও খেয়াল রাখতে হবে ছেলেটি বা মেয়েটি হঠাৎ হঠাৎ রেগে উঠছে কি না। এ ক্ষেত্রে তার রাগের কারণ বিস্তারিত জেনে নিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। একান্ত প্রয়োজন হলে মনোবিদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। নিয়মিত এক্সারসাইজ, সাইকেল চালানো, সাঁতার, খেলাধুলা ইত্যাদি রাগ দমনে ও মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। সর্বোপরি একটা খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব তৈরি করতে পারে- যেমন ‘ও এরকম করল তো আমার বয়েই গেল’ গোছের মনোবৃত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
পজিটিভ চিন্তা-ভাবনা রাগের তীব্রতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আসলে তীব্র রাগ পুরো শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে দেয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা ভীষণ জরুরি।
বক্স-২
প্রতিবাদী রাগী শিশু
ছোট বলে ওরা কিছু বোঝে না বা ওদের মনে রাগ নেই, এই ধারণাটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। আসলে এক থেকে তিন বছর বয়সী বাচ্চারা যথাযথভাবে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারে না। অথচ পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে পারে ভালোভাবে, তাদের চাহিদাও থাকে অনেক। বড়রা তা বুঝতে পারে না, ফলে রেগে গিয়ে কান্নাকাটি, হাত-পা ছোড়া এসব ঝামেলা শুরু করে দেয়। একটু জ্ঞান-বুদ্ধি হলে পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে বুঝতে শিখলেই শিশুর চাহিদা তৈরি হয়, আর চাহিদা না মিটলে রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কান্নাকাটি। মূলত ১ থেকে ৩ বছর বাচ্চারাই বেশি রাগারাগি করে। বছর চারেক বয়সের পর থেকে শিশুদের রেগে যাওয়ার ব্যাপারটা কমতে শুরু করে। নিজেদের জগৎ নিয়ে ওরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের রেগে যাওয়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম- সে আপনার কথা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না বা আপনি কী চাইছেন সে ব্যাপারটা তার কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। ফলে সে কনফিউজড হয়ে গিয়ে রেগে যাচ্ছে।
  • তার চাহিদার ব্যাপারটাকে বড়রা গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই সে রেগে গিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
  • ক্ষুধার জন্যও বাচ্চারা রেগে যায়। ক্ষুধা পেলে শরীরে অস্বস্তি হয় অথচ ব্যাপারটা বুঝতে বা বোঝাতে পারে না। ফলে রেগে গিয়ে অন্যদের মারধর বা দুরন্তপনা শুরু করে। যিনি বাচ্চাটিকে দেখভাল করেন তার এ ব্যাপারটা খেয়াল রাখা উচিত। দেখা গেছে, এই অবস্থায় বাচ্চাটিকে কিছু খাবার খাইয়ে দিলে তার রাগ কমে যায়।
  • বাচ্চাটি এমন এক সমস্যায় পড়েছে যে সে তা ভাষায় বোঝাতে পারছে না। যেমন ধরুন, হিসি করতে গিয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে বা খুব জোরে ধাক্কা খেয়ে ব্যথা পেয়েছে- তা বোঝাতে না পেরে প্রচণ্ড রেগে যায়।
  • পর্যাপ্ত ঘুম হয়নি অথবা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও বাচ্চারা রেগে যায়। কখনো বা শিশুটির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেয়া হয় না। মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শশুটি নিজের রাগ প্রকাশ করে হাত-পা ছুড়ে বা কান্নাকাটি করে।
  • বাড়িতে কোনো বাচ্চা এলে বা নার্সারি স্কুলে অথবা পার্কে কোনো বাচ্চাকে দেখে মনে খুব হিংসা হয়েছে, তার জন্যও সে রেগে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে।
  • পেটে ব্যথা বা শরীরের কোনো কষ্টের জন্যও শিশুটি রেগে যেতে পারে।
  • অনেক মানুষের একটা বদ অভ্যাস আছে অকারণে বাচ্চাদের পেছনে লেগে তাকে রাগিয়ে দেয়া। বাচ্চাটি যা অপছন্দ করে সেই ব্যাপারটা বারেবারে বলে তাকে রাগিয়ে তোলে। বলাই বাহুল্য শিশুদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করা উচিত নয় মোটেও। শিশুর রাগের ব্যাপারটা বুঝে নিতে হবে মা এবং ওকে যিনি দিনের বেশিরভাগ সময়টা দেখাশোনা করেন তাকে। ছোট থেকেই রাগ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা না করলে ভবিষ্যতে বাচ্চাটির ব্যক্তিত্ব বিকাশে অনেক বাধা আসে। সে একজন খিটখিটে মানুষে পরিণত হতে পারে। বাচ্চার রাগ কমাতে তাকে সঙ্গ দিন, বোঝানোর চেষ্টা করুন। সবচেয়ে ভালো হয় শিশুর দৈনন্দিন জীবন একটা রুটিনে বেঁধে দিতে পারলে যেমন- তার খেলাধুলা, পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া, পার্কে যাওয়া। এ ছাড়া অতিরিক্ত পড়ার চাপও বাচ্চাকে রাগী, জেদি ও অবাধ্য করে তোলে। এ ব্যাপারটাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে।
বক্স-৩
রাগ থেকে মস্তিষেকর সমস্যা
বরাবরই হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোর অভ্যাস নকীবের। আর তার ফলেই হঠাৎ দুর্ঘটনায় মাথায় চোট। এর পরে ঘটনাটা আরো মারাত্মক। মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে বাড়ি ফেরার পর থেকে নকীবের মেজাজ গেল বদলে। শান্ত স্বভাবের ছেলেটি হঠাৎ বেদম বদমেজাজি হয়ে উঠল। নকীবের মা অবাক হয়ে দেখলেন যে চায়ের লিকার পাতলা হয়েছে এই অজুহাতে কাপসুদ্ধ ছুড়ে ফেলে দিল। দেরি না করে নকীবকে নিয়ে যাওয়া হলো মনোবিদের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে দেখা গেল, মস্তিষেকর চোটের জন্যই নকীব এরকম বদমেজাজি হয়ে পড়েছে। মায়ার ঘটনাটা আবার অন্যরকম। সম্প্রতি মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল, তার সঙ্গে নতুন উপসর্গ হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করা। তুচ্ছ কারণেই মায়া ইদানীং রীতিমতো গলা তুলে ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিচ্ছে।
মায়ার স্বামী-সন্তানরা অবাক। এরকম স্বভাব তো ছিল না ওর। নিয়ে যাওয়া হলো ডাক্তারের। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেল মায়ার মস্তিষেকর টেম্পোরাল লোবে একটা বড়সড় গবহরহমরড়সধ অর্থাৎ টিউমার হয়েছে। তবে ব্রেন টিউমার শুনে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। খুব সহজ অস্ত্রোপচারের সাহায্যে এই টিউমার বাদ দেয়া হয়। রোগী আবার স্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। কিছু কিছু বিশেষ ধরনের এপিলেপসির জন্যও মানুষ প্রচণ্ড রাগী ও বদমেজাজি হয়ে উঠতে পারে। রাগ কমাতে সার্জারি করা দরকার। রোগ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠতে পারে। অনেক সময় মস্তিষেকর ফ্রন্টাল লোবে আঘাত বা টিউমারের জন্যও মানুষের আচরণের পরিবর্তন হয়। যখন-তখন তুচ্ছ কারণে প্রচণ্ড রেগে ওঠার প্রবণতা বেড়ে যায়। মধ্য মস্তিষেকর থার্ড ভেন্ট্রিকেল অংশে জলভরা সিস্ট হলেও এরকম ব্যবহারের পরিবর্তন হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় এই সিস্টের নাম কোলায়ড সিস্ট। এ ক্ষেত্রেও অপারেশন করে রোগ সারানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারের পরিবর্তন করা হয়। নিউরোসার্জারির পরিভাষায় এই ধরনের অপারেশনকে বলা হয় ‘সাইকোসার্জারি’।
ইদানীং রোগ সারানোর সঙ্গে সঙ্গে মেজাজ ভালো করতে সাইকোসার্জারি করে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মানুষের চোখের (অক্ষিগোলকের) ঠিক ওপরের দিকে মস্তিষেকর যে অংশটি আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় তার নাম ঋৎড়হঃধষ খড়নবং। আর কানের ঠিক ওপরের অংশের নাম ঞবসঢ়ড়ৎধষ খড়নবং। ফ্রন্টাল লোব মানুষের রাগ, দুঃখ, ভয়-বিভিন্ন কাজকর্ম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশে টিউমার হলে মনের এই প্রবৃত্তিগুলো সব ওলটপালট হয়ে যায়। তাই রোগী কারণে-অকারণে রেগে যায়, হঠাৎ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায় বা দুঃখে কেঁদে ভাষায়। টেম্পোরাল লোব বুদ্ধি বিচার-বিবেচনার একটা অন্যতম অংশ। মাথায় হঠাৎ চোট লাগলে এই টেম্পোরাল লোব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর তখনই মানুষ বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে দুমদাম ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে যাকে যা বলা উচিত নয়-তাই বলে ফেলে। অবশ্য রেগে যাওয়া ছাড়াও এ ধরনের মস্তিষেকর অসুখে মাথার যন্ত্রণা, চোখে কম দেখা, কানে কম শোনা, কনভালশন বা তড়কা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সাইকোসার্জারির সাহায্যে অসুখ সারানোর সঙ্গে সঙ্গে আগের স্বাভাবিক মেজাজও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...