উদ্বেগ সমস্যার পাশাপাশি প্যানিক শব্দটা
চলে আসে। এটি উদ্বেগের একটা পুঞ্জীভূত রূপ। ব্যক্তি মনে করে বসেন পুরো
শরীর দুর্বল আর ভেঙে আসছে, হৃদকম্প থেমে আসছে। মৃত্যুর সময় যেন আসন্ন।
ঘাবড়ে যাবার কোনো কারণ নেই। আতঙ্ক প্রবলভাবে চেপে বসলেও তা কখনোই প্রাণে
মারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সমস্যাগ্রস্তদের অ্যাসোসিয়েশন
কতগুলো গোল্ডেন রুল শিখিয়ে থাকে। আপনিও তা চর্চা করতে পারেন। যদি এ সমস্যা
থাকে তাহলে দেখবেন কতটা স্বাচ্ছন্দ্য আর সাবলীলভাবে তা অতিক্রম করে
যাচ্ছেন। মাত্র দশটা নির্দেশনা আজই মনে গেঁথে নিন।
১. সব সময় আশ্বস্ত থাকবেন এজন্য যে, এ সময়কালীন অনুভূতি আর উপসর্গগুলো বেশ ভীতিপ্রদ মনে হলেও তা মারাত্মক ও ক্ষতিকর কোনোটাই নয়।২. অনুধাবন করুন এর শ্বাসক্রিয়া বা হৃদকম্পন হার বেড়ে যাওয়া উদ্দীপকে দেহজ স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার অতিরঞ্জন। এতে বিপদ ঘটতে যাবে কেন? কিছুক্ষণ দৌড়াতে হলে বা সিঁড়ি দিয়ে দশ কদম উঠলেই তো আগের শ্বসনহার বা হৃদকম্পন বেড়ে যায়। এ জরুরি অবস্থা তো আসলে সে ধরনের ঘটনা।
৩. স্থির হোন। হৃদকম্পন বা শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যাওয়া এ জাতীয় উপসর্গগুলোর ওপর মনস্থির করুন, দেখবেন এগুলোর তীব্রতা বা হার ক্রমশ কমে আসছে।
৪. কখনোই চিন্তা করতে যাবেন না এর ক্রমপরিণতি কেমন হবে। যদি মনে প্রশ্ন আসে, কী হবে? মনকে বুঝ দিন তাতে কি এসে-যায়!
৫. পরিণতির কথা চিন্তা না করে বর্তমান সমসাময়িক চিন্তা মাথায় আনুন। উপসর্গগুলোর ওপর মন দিন। দেখবেন আশঙ্কার চিন্তার অনেকটা কমে এসেছে।
৬. প্রথম হতেই নিশ্চিত ধরে নিন উপসর্গ ক্রমশ বাড়তে থাকলেও একটা নির্দিষ্ট মুহূর্ত হতে তা কমতে থাকবে। এমনকি আপনি মনোনিবেশ করতে পারেন-উপসর্গ ক্রমশ পর্যায়ক্রমিক ধারায় বেড়ে যাচ্ছে আর এক সময় কমতে শুরু করেছে।
৭. যখনই আপনার মনে হবে ভয় ক্রমশ পুঞ্জীভূত হচ্ছে তখন মনকে অন্য কাজে নিবিষ্ট করুন। তা হতে পারে স্রেফ শার্টের বোতামগুলো পুনর্বার লাগানো, শার্ট-প্যান্ট ঠিক করে নেয়া।
৮. প্রাক নির্দেশনা হতে অনুধাবন করে নিন যে কোনোভাবে আতঙ্কের উদ্দীপনাকে সরিয়ে দিলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। সুতরাং উদ্বেগ-উদ্দীপনাকে তাড়ানোর বিকল্প বের করে আনুন।
৯. মনের মাঝে চলে আসা ভয়কে যখন কোনোভাবেই তাড়ানো যাচ্ছে না তখন তাকে স্বাগত জানান, পর্যবেক্ষণকারীর ভূমিকায় তাকে দেখুন, নানা উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিন্তু অল্প সময় ব্যবধানে তা ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। উদ্বেগ আতঙ্কের ক্ষমতা সীমিত, আর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা অবলম্বন করে আরো দুর্বল করে দেয়। ব্যাপারটা অনেকটা পুলিশের নীরব পর্যবেক্ষণের ভূমিকা নেয়ার মতো। চোর তখন প্রাণ বাঁচাতে চুপিসারে সরে যায়।
১০ নিজেকে পুরস্কৃত করুন। গর্ববোধ করতে পারেন, উদ্বেগ আপনাকে আর কাবু করতে পারছে না। বরঞ্চ আপনিই তাকে ঘায়েল করতে বসেছেন। এ মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন। দেখবেন উদ্বেগ আর কাছে ভিড়ছে না।
কিছু বাড়তি উপদেশ
যখন উদ্বেগ উপসর্গগুলো যেমন হাত কাঁপা, ঘামানো, হৃদকম্পন হার বেড়ে যাওয়া ঘটতে থাকে তখন নিচের নির্দেশনাগুলো প্রয়োগ করুন। দেখবেন উপসর্গের তীব্রতা কমে আসছে ক্রমশ।
১১. নাক দিয়ে হাল্কা মাত্রায় দম নিন-ছাড়তে থাকুন।
১২. আপনার আশপাশের কোনো জিনিস যেমন-দেয়াল, হাত দিয়ে সপর্শ আর অনুভব করতে পারেন।
১৩. নিজেকে আশ্বস্ত করতে থাকুন-এতে ভয় বা ক্ষতি বা বিপদের কোনো ঝুঁকি নেই।
১৪. নিজেকে আশ্বস্ত করুন-এগুলো ক্ষণস্থায়ী, আপনা হতে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
১৫. দূরের নীলাকাশের দিকে মনোনিবেশ করুন।
১৬. মন হতে সবকিছু বের করে দিন। একদম ফাঁকা, কিছুই নেই। কোনো অনুভূতিই নেই।
১৭. মেডিটেশন চর্চা করুন।
১৮. গুন গুন গুঞ্জন শুরু করে দিন।
১৯. হাতের বইটা পড়া শুরু করে দিতে পারেন।
২০. পাশের বন্ধুর সাথে আলাপচারিতা শুরু করে দিন।
২১. হাঁটতে শুরু করুন।
২২. গরম পানিতে গোসলে নেমে পড়তে পারেন।
২৩. বাড়ির দেয়াল বা গাড়ি পরিষকারের কাজে নেমে পড়ুন।
মানে এমন কিছু করুন যা আপনার মনোযোগকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাবে। সমস্যা তো মনের, সুতরাং তাৎক্ষণিক উপশম!
No comments:
Post a Comment