শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয়, প্রাত্যহিক জীবন
যাপনের একটা রুটিন করে ফেলুন। সর্য ওঠার পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করুন। সকালে
কোমল পরিবেশে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে। মন তরতাজা থাকে-এ সময়ে পড়াশোনা
ভালো হওয়ারই কথা। শ্রেণীকক্ষেপূর্ণ মনোযোগী হবেন। হাতের লেখা সুন্দর,
সপষ্ট, দ্রুত করার চেষ্টা করুন। যে কোনো পড়ার পূর্বে নিজের অটুট সংকল্প বা
আত্মবিশ্বাস একটু ঝালিয়ে নিন। বুঝে জেনে পড়ার চেষ্টা করুন।
অনুকূল পারিপার্শ্বিকতাপ্রত্যেকটা মানুষই অগাধ সহজাত প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সেই মানুষটি তার চেনা পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক প্রকৃতি, সামাজিক, আর্থিক ভেদাভেদ দেখে শেখে এবং এইভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে বড় হতে থাকে।
প্রচলিত একটা বাক্য আছে বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়। সহজ তো সহজই। কঠিনকে কঠিন করে দেখলে কঠিন আরো কঠিন হতে থাকে। কঠিন বিষয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর পজিটিভ মানসিকতা ‘আমি সব পারি’, ‘আমাকে সব পারতে হবে’। আমি আর দশটা মানুষের মতো মানুষ, তাহলে অন্য কেউ পারলে সেই কাজটি আমিও পারব।
এই কথাগুলো যদি আপনার মনের কথা হয় ছাত্র হিসেবে খারাপ হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
ছাত্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য
থরে থরে সাজানো বই হরদম মুখস্ত করার চর্চা কিংবা পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে আসাই ছাত্রের কাজ নয়। ছাত্র জীবন হচ্ছে-
S-Study
T-Truthfulness
U-Unity
D-Desicipline
E-Education
N-Neatness
T-Tidiness
আপনি বলুন তো এসবের প্রত্যেকটা গুণ আপনি আজ থেকে অর্জন করতে থাকবেন। তাহলে আপনার সামনে সোনালী ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।
সাধনার সময়
ছাত্র জীবন সাধনার সময়। এটা কি কাউকে বলে দিতে হয়? শুধু স্মরণ করলাম।
বিশ্ব সংসারটাই ধ্যান আর জ্ঞানের। (ধ্যান+জ্ঞান=সফল জীবন) লক্ষ্য করুন সাধারণত যারা খোদা ভীরু তার জীবন যাপন একটু ভিন্ন ধাচের নিয়ম নিষ্ঠ। ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে এশার নামাজ পর্যন্ত নিয়ম মেনে চলার কারণে এমন অনেকের নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নামাজে নিয়মের কারণে নামাজ পড়া হয়ে ওঠে না।
ভালো ছাত্র হওয়ার মন্ত্রজপ নেই। আছে আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়, নিয়ম নিষ্ঠা, ধৈর্য, মনোযোগ, উচ্চাকাক্ষা, একাগ্রতা, ত্যাগের সুষম ব্যবহারিক বন্টনের মাধ্যমে আত্মোন্নয়ন।
আত্মবিশ্বাস
নিয়মনিষ্ঠা, অধ্যবসায়, মনোযোগ, উচ্চাকাক্ষা, একাগ্রতা উলেস্নখিত বিষয়গুলোকে ফর্মলা হিসেবে নিতে চাইলে নিতে পারেন। আত্মবিশ্বাসে আপনি হারকিউলিস। পড়াশোনার ব্যাপারে আপনার ত্যাগ, নিষ্ঠা, অধ্যবসায়ে আপনি অনমনীয়। অনেক ছাত্রকেই বলতে শোনা যায় ‘আমার মাথা ভালো না, পড়া মনে রাখতে পারি না, বলতে হবে তারা নিজেদেরকে গাইড করতে পারছেন না। সঠিক মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার কারণেও এটা হতে পারে।
অধ্যবসায় এমন একটি জীবন গড়ে দিতে পারে-পরবর্তী জীবনে বুকের ছাতি সগৌরবে দু’ ইঞ্চি বেড়ে যাবে। আপনি পারেন না সবাই পারেন।
একথাটাই প্রতিদিন সকাল বিকাল গুনে গুনে ১০০বার করে আউড়ান। কাজ হয় কিনা দেখুন। সঙ্গে আপনার মরচে আত্মবিশ্বাসটাও দেখুন কেমন নড়েচড়ে ওঠছে কিনা দেখুন। আত্মবিশ্বাস আর অধ্যবসায় যিনি ১০০% দিতে পারছেন বাকি সব সমস্যাই ফুৎকারে উড়ে যাচ্ছে। ধৈর্য আর মনোযোগ দুটি ফাঁকা ঘরের মতো সেই ঘরে আপনি যা কিছু আপন করবেন তাই আপনার সম্বল।
উচ্চাকাক্ষা কার না আছে। কি বলুন, বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার নেই! নিয়মনিষ্ঠতা গ্রাহ্যতা যে কোনো মানুষের জন্যই অপরিহার্য। সুস্থতার জন্য হলেও আপনি নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। সকাল-সন্ধ্যার পড়ার সময়ের হিসাব মেনে চলুন। খাওয়া দাওয়া, নিজের শারীরিক পরিচর্যা, দিবা নিদ্রা, পারিবারিক ও বন্ধুর সঙ্গ সবকিছুই আপনি রুটিনে নিয়ে আসুন। মুখস্ত করে সঙ্গে সঙ্গে না দেখে লিখে ফেলবেন। আজকের কাজ আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখবেন না।
শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয়, প্রাত্যহিক জীবন যাপনের একটা রুটিন করে ফেলুন। সর্য ওঠার পূর্বেই শয্যা ত্যাগ করুন। সকালে কোমল পরিবেশে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে। মন তরতাজা থাকে-এ সময়ে পড়াশোনা ভালো হওয়ারই কথা। শ্রেণীকক্ষেপূর্ণ মনোযোগী হবেন। হাতের লেখা সুন্দর, সপষ্ট, দ্রুত করার চেষ্টা করুন। যে কোনো পড়ার পূর্বে নিজের অটুট সংকল্প বা আত্মবিশ্বাস একটু ঝালিয়ে নিন। বুঝে জেনে পড়ার চেষ্টা করুন।
স্মরণশক্তি
নিজের স্মরণশক্তির ওপর অগাধ আস্থা রাখতে শিখুন। ভাবুন আপনি যা পড়ছেন তা আপনি মনে রাখার ক্ষমতা রাখেন। মানুষের মস্তিষক একটা অসীম বড় কুঠুরি। সারা জীবন যা শিখবেন, দেখবেন মনে রাখার মতো ক্ষমতা তার আছে। প্রয়োজনে বিষয়বস্তু ভাষায় কঠিন থেকে ঝরঝরে সহজ সুপাঠ্য করে নেবেন।
বড় রচনাবলী মুখস্ত হতে না চাইলে ভাগ ভাগ করে অন্য কোনো ইন্টারেস্টিং বিষয়ের সঙ্গে মনছবি মিলিয়ে বা তারতম্য করে পড়তে পারেন। একবার ব্যর্থ হলে বারবার চেষ্টা করুন। আন্তরিকভাবে নিজেকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা পড়া মুখস্ত রাখতে পারেন না অথচ স্যাটেলাইট চ্যানেলে একবার শুনেই কোনো মুখস্ত বলে দিতে পারেন।
ভুলে যাওয়ার প্রবণতা
বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন মায়ের ইচ্ছায় ছয় বছর বয়সে বেহালা স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু্তু তার স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল ছিলো দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টায় দশ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছিলেন।
এসএসসি পাস করতেও তার দুবার পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো।
স্মৃতিশক্তি স্বল্পতার জন্য তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে অস্বীকার করেন। স্কুলে চাকরি খোঁজার চেষ্টায় গিয়ে পড়লেন বিপাকে। ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে তিনি কিছুই মনে রাখতে পারেন না। কোথাও তার চাকরি হলো না।
পরবর্তীতে টানা দুই বছর তিনি শুধু স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকলেন। তার পরের ইতিহাস সবার জানা-এর ঠিক ২০ বছর পর তিনি নোবেল বিজয়ী হন। এই রকম কিংবদন্তী হয়েছেন উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। টমাস আলভা এডিসন, ভাস্কর রঁদা, ইমাম গাজ্জালী, রোপদেব, মার্কিন প্রেসিডেন্ট উন্ড্রোউইলসন প্রত্যেকই প্রথম জীবনে স্মৃতিশক্তি নিয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন।
মেধা বাড়ানো
মস্তিষক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি। দৃষ্টিভঙ্গি গড়ূন সেভাবেই। নিজের মনের ইচ্ছাশক্তি ও তৎপরতার সম্পর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। এভাবে কয়েক দিন অনুশীলন করুন। আপনি সফল হবেন।
বুদ্ধি বিকাশ
শুধু পাঠ্য বই নয়, জ্ঞানের হাবিজাবি নয় হাল্কা জোকস, উপন্যাস, কবিতা পড়ূন। টিভি দেখুন, ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়ূন একটু বেড়িয়ে আসুন।
আবেগ
আবেগ যদি ইতিবাচক ফলদায়ক হয় তাহলে আপনার আবেগ অতিমাত্রায় বেশি হলে ক্ষতি কি! আপনার সম্পদ হতে পারে এটা। আবেগের সঙ্গে জেদ ধরুন, আজকের পড়া পরিকল্পনা আজকেই নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর শেষ করবেন। জেদ/আবেগের ইতিবাচক চর্চা প্রতিদিন অনুশীলন করুন।
পড়া মুখস্ত করার সহজ উপায়
লেখাপড়ায় যারা অনিয়মিত কিংবা অমনোযোগী, তাদের কাছে মুখস্ত করার ব্যাপারটি বেশ জটিল। আপনি যদি মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী না হন তাহলে নিচের কিছু নিয়ম মেনে দেখতে পারেন সফলতা সম্পর্ণ আপনার সদিচ্ছার ওপর।
- হাত পা ধুয়ে, চোখে মুখে পানি দিয়ে কিংবা হাল্কা ব্যায়াম করে আপনি একনিষ্ঠতার প্রথম ধাপটি ঢুকে পড়ূন।
- চেয়ারে বসে প্রথমে নিজেকে বলুন, এখন আমি চলমান জীবন থেকে অন্য ভুবনে চলে গেছি। এখানে আমার স্বজন বই, খাতা, কলম। যতক্ষণ রুটিন অনুযায়ী পড়বেন স্থির করেছেন পূর্বেই। ততক্ষণ আপনি মাঝে মধ্যে নিজের সঙ্গে কথা বলে নিজের আত্মবিশ্বাস মনোযোগ ঝালাই করে নিন।
- ভাগ ভাগ করে পড়ূন।
- অর্থ জেনে বুঝে পড়ূন।
- মনে রাখার কৌশল হিসেবে তুলনা করে বা তারতম্য করে পড়ূন।
অমূলক ভয়-ভীতি থেকে দরে থাকুন
কোনো কোনো ছাত্রকে বলতে শোনা যায় কোনো একটি বিষয়ে বা কোন কোন বিষয়ের
ব্যাপারে দুর্বল। আপনি দুর্বল! আপনি দুর্বল? আপনি দুর্বল এ ধরনের নেতিবাচক
ভাবনা কখনোই মনে স্থান দেবেন না।
No comments:
Post a Comment