পরীক্ষা-ভীতি
এখন চলছে নতুন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার
মৌসুম। সব মিলিয়ে পরীক্ষার আবহ। চারদিকে বিরাট আয়োজন, মা-বাবার মনে
দুশ্চিন্তার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। কিন্তু বাবা-মার এই দুশ্চিন্তা
সন্তানকে যেন স্পর্শ না করে। কারণ পরীক্ষা এলে কিন্তু এমনিতেই শিশুর বুকটা
ধুক ধুক করে ওঠে, জিহ্বা শুকিয়ে যায়। এ সময় তাই সোনামণিকে ধীরস্থির থাকতে
হবে। কিন্তু ছোট শিশু পারবে কি এই অস্থিরতা কাটাতে? এ জন্য মা-বাবাকে মুখ্য
ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুর কোমল মনের অনুভূতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো, শিশুকে খুব বেশি জবরদস্তি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এল.ই. ফাতমি বলেন, শিশুরা তো
পড়াশোনা সারা বছরই করে থাকে। সুতরাং এ কয়টা দিন অতিরিক্ত চাপ দিলে বাড়তি
কোনো ফল আসবে না, উল্টো ক্ষতি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো পড়া না পারলে
শিশুকে দোষ দেয়া যাবে না। অন্য মানুষের সামনে কখনো বলা যাবে না শিশু কিছুই
মনে রাখতে পারে না। অনেকে আবার শিশু সব পড়া পারলেও নজর লাগবে এই ভয়ে বলেন,
কিছুই পারে না। এতে কিন্তু তার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। জানা প্রশ্নও ভুলে যায়।
তাই এটি করা উচিত নয়।
পরীক্ষার সময় শিশুরা খাওয়া-দাওয়া একদম করতে চায় না। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া
না করলে তো শিশু দুর্বল হয়ে পড়বে। আর মগজের দরকার যে ফুয়েল বা জ্বালানি তা
আসে মূলত গ্লুকোজ থেকে। আর গ্লুকোজ থাকে শর্করায়। এ সময় অন্যান্য খাবারের
সঙ্গে সঙ্গে শর্করাজাতীয় খাবার ভাত, রুটি, চিনির শরবত খাওয়াতে হবে। বাজার
থেকে গ্লুকোজ কিনে আনার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক খাবারে যে শর্করা থাকে তা
থেকেই শিশু সহজে গ্লুকোজ পায়। আকর্ষণীয় খাবার যেমন জর্দা, পায়েস এসব দিতে
পারেন। এগুলোতেও আছে গ্লুকোজ। পরীক্ষার আগে রুচিহীনতার কারণে সোনামণিরা
শক্ত খাবার খেতে চায় না। তাই তরল ও নরম খাবার দেয়াই ভালো। ফলের জুস, দুধে
ভেজানো রুটি, নরম খিচুড়ি ভালো কাজ দেবে।পরীক্ষার এই সময়ে কিন্তু আইসক্রিম বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি একদম দেয়া যাবে না। এতে ঠাণ্ডা লেগে, জ্বর হয়ে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে যাবে। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়া অনেকেরই অভ্যাস। এদিকে মা-বাবাকে নজর দিতে হবে। রাত জাগলে কিন্তু পড়া মনে থাকে না, সারাদিন যা পড়া হয় তা ব্রেইনের স্তরে জমা হতে সুস্থির সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই ব্রেইনকে বিশ্রামের সময় বেশি না দিলে কোনো পড়াই স্মরণ থাকবে না। খুব দ্রুত পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরীক্ষার সময় অস্থিরতা একদম বারণ। অস্থিরতায় মগজ থেকে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়, সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। বুক ধড়ফড়, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, পিপাসা লাগা, অতিরিক্ত ঘাম, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। অস্থিরতায় পড়াশোনা গুলিয়ে যায়, জানা উত্তরও ভুল হয়। তাই যতটা সম্ভব সুস্থির থাকতে হবে।
পরীক্ষার সময় সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠাণ্ডা, জ্বর, ভাইরাস, টনসিলাইটিস-এসব শিশুর সাধারণ শীতের অসুখ। এসব যেন শিশুকে সহজে কাবু করতে না পারে সে জন্য সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে অসুখের কারণে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে না যায়। মোটকথা, শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেন আপনার সন্তান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।
ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ২২টি টিপস
দক্ষতা বাড়ানো এবং মানসিক স্বাস্থ্যের
উন্নতির জন্য নিচে উল্লেখিত উপসর্গগুলো গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটা একজন জ্ঞানী
লোকের নিকট থেকে জেনেছি কিন্তু তার নাম আমি এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। এ
উপায়গুলো আপনার ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলছে তা বোঝার জন্য কিছু সময় ব্যয়
করুন।
১.
কে দায়ী এবং কিসের জন্য দায়ী। আমার সীমানা অতিক্রমযোগ্য কিন্তু দৃঢ়।
বেশিরভাগ সময় আমরা নিজেদের দোষারোপ করি, দায়ী না হয়েও কিন্তু অনেক সময় কোনো
কাজের জন্য দায়ী হতে হয় আবার দায়ী হওয়া হওয়া সত্ত্বেও অনেক সময় তা স্বীকার
করি না। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন ‘আসলে কে দায়ী?’ দেখুন আপনার মনোবল এবং
শক্তি আপনাকে কী কাজ দিচ্ছে এবং এটি সঠিক কিনা?২. সতর্কতামূলক দুশ্চিন্তা পরিহার করুন এবং এটি ক্ষতিকারক হলে ত্যাগ করুন। আমরা দুশ্চিন্তা করে অনেক সময় নষ্ট করি যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। আপনি যদি আপনার দুশ্চিন্তাকে সতর্কতামূলক কাজে পরিণত করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন তাহলে আপনি ভালো থাকবেন। আপনি যদি তা না পারেন তবে দুশ্চিন্তা ত্যাগ করুন এবং আপনার শক্তিকে কাজে পরিণত করুন। আপনি যদি সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করেন তবে তা আপনাকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করবে। তাই আপনার কর্মক্ষমতাকে অন্য কাজে ব্যয় করুন।
৩. আমাদের সবার জানা উচিত সূর্য যেমন পূর্ব দিকে ওঠে এবং পশ্চিমে অস্ত যায় ঠিক সেই নিয়মে আমাদের জীবনে মৃত্যুও অবধারিত। তাই আমাদের কাজের জন্য দ্রুত হাঁটা উচিত। আমরা যন্ত্রমানব নই, আমরা মানুষ। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের লক্ষ স্থির রাখতে হবে এবং সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে, কর্মশক্তিকে যোগ্য কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমরা অনেকেই তা না করে উদ্দেশ্যহীনভাবে এগিয়ে যাই এবং চিন্তা করি অগোছালোভাবে। আমরা এখানে সেখানে দৌড়িয়ে অনেক সময় নষ্ট করি যা ফলপ্রসূ হয় না। একটু বেশি সময় নিন এবং ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়ে দেখুন আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কি না।
৪. হগ প্রেথার বলেছেন ‘একটি পুরানো প্রবাদ আছে কোনো কিছু যদি আপনাকে নিঃশেষ করে তবে তা থেকে বেরিয়ে আসুন।’ মানসিক যন্ত্রণাশক্তিকে কাজে পরিণত করার পথে একটি বাণিস্বরূপ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক। সমস্যাকে জীবন পরিবর্তনের চাবিকাঠি হিসেবে নিন। কষ্টের মুখোমুখি হোন। যদি আপনার জীবনে উন্নতি না হয় তবে ব্যবহার অথবা পরিস্থিতির পরিবর্তন করুন।
৫. বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় এক সপ্তাহে ১৬৮ ঘণ্টা থাকে। আমাদের কাছে এর বেশি বা কম সময় নেই। এটা আমাদের কাজের উৎস। যদি আপনি সময়মতো চলতে পারেন আপনার জীবনও সময়মতো চলবে। কিন্তু আপনি যদি সময় অপচয় করেন আপনার জীবনেরও অপচয় ঘটবে। তাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।
৬. পছন্দের বা শখের কথা ভাবুন। এটি আপনাকে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। আমাদের প্রত্যেকের শখের বিষয় রয়েছে। আমাদের সাথে যা ঘটে তার ওপর বেশিরভাগ সময় আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু আমরা সেই সময়ে সেই কাজের প্রতি যত্নশীল থাকি এবং এটা আমরা স্বেচ্ছায় করতে পারি। শখ এবং অনুভবের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের নিজেদের প্রতি নিয়ন্ত্রণের একটা নির্দিষ্ট ও আশানুরূপ মাত্রা রয়েছে। তাই শখের প্রতি বা পছন্দের কাজের প্রতি গুরুত্ব দিন।
৭. মানসিক যুক্তিগুলো অভ্যাস করুন। সত্য এবং অবিঘ্নিত কাজের মধ্যে খুব অল্পই দূরত্ব রয়েছে। অধিকাংশ সময় আমরা অঙ্কের জ্যামিতির মতোই সরাসরি না বলে কিছু কথা ঘুরিয়ে বলে থাকি। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এটি অভ্যাস করা প্রয়োজন। আমরা অধিকাংশ সময়ই এটি করে থাকি এবং এটি আমাদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন।
৮. সহজ উপায়ে কাজ করুন। এই ছোট বাক্যটি এ কথাই মনে করে দেয় যে, অনেক সময় আমরা কাজ কঠিনভাবে করি যা আমরা সহজভাবেও করতে পারতাম। তাই পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবনে চলার পথে মনে রাখব কঠিনভাবে কাজ সম্পন্ন করার পরিবর্তে সহজভাবে করব।
৯. শুধু কাজ করার চেয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করা ভালো। কোনো ব্যক্তির সাথে কাজের ব্যাপারে দ্বন্দ্ব থাকলে আন্তরিকভাবে কাজ করুন, শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের কথা না ভেবে। আন্তরিক মুখোমুখি বা সম্ভাষণ আপনার সমস্যাকে মিটিয়ে দেবে এবং দুইপক্ষই ভালো অনুভব করবেন। প্রায় সব সময়ই শুধু কাজ করার ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন লাভ করে এবং অন্যজন লোকসান করে। তাই এক্ষেত্রেও তাদের মধ্যে তৈরি হয় লোকসানের ভয়, লাভের তীব্রতা এবং রাগ ও হতাশার ক্ষেত্র। এই অনুভূতিগুলো ক্ষতিকর। তাই ভাবুন কীভাবে আপনি শুধু জেতার কথা না ভেবে দুপক্ষের কথা আন্তরিকভাবে চিন্তা করে কাজটি সমাধা করতে পারেন।
১০. নিজেদের প্রতি সতর্ক থাকুন কিন্তু সচেতন নয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি চেষ্টাই হলো নিজেকে সতর্ক রাখা। এটা সিদ্ধান্ত নিতে এবং নিজের অনুভূতিকে বিশ্বাস করার জন্য সহায়ক। আত্মসচেতনতা অনেক সময় অন্যরা কী ভাবল তার প্রতি গুরুত্ব দিতে শেখায়। যারা আত্মসচেতন তারা সিদ্ধান্ত নিতে এবং কাজে পদক্ষেপ নিতে দুশ্চিন্তায় ভোগে। তারা অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধে বেশি ভোগে। অন্যদিকে আত্মসতর্কতা কাজ করার ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম ও দুশ্চিন্তাহীন মানসিকতার পরিচয় দেয়।
১১. ভুল হলে খারাপবোধ করুন কিন্তু অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধে ভুগবেন না। এটা পূর্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যখন আপনি খারাপবোধ করবেন তখন ভালো থাকার চেষ্টা করুন। এটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণের একটা ভালো পদ্ধতি। অপরাধবোধ ও লজ্জাবোধের জন্য বাহ্যিক কারণ থাকে। যখন আপনি অপরাধবোধ করবেন তখন আপনি চিরকালের জন্য অপরাধী হয়ে যাবেন। লজ্জা আপনার আত্মোপলব্ধিকে নষ্ট করবে। আপনি খারাপবোধ করতে পারেন এবং গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। যথাযথ ব্যবহার করুন এবং দেখুন এটা আপনাকে ভালো রাখতে সাহায্য করছে কি না।
১২. অন্যের মন-মানসিকতার কথা চিন্তা করুন। পরার্থবাদিতা এমনই ব্যবহার যা আপনি অন্যের জন্য যেমন করবেন তা নিজের জন্যও সেই মানসিকতা নিয়েই করবেন। আত্মসতর্কতা, আত্মসম্মানবোধ, আত্মদায়িত্ববোধ এবং আত্মজ্ঞান পরার্থবাদিতার ভিত্তি যেমন টেবিলের পায়ার বা ভালোবাসার মতো। যখন আপনি নিজের জন্য কাজ করবেন তখন আপনি অন্যের জন্য, পৃথিবীর জন্য অবদান রাখতে পারবেন। আমরা তখনই অন্যের জন্য কাজ করতে পারি যখন আমরা নিজে ভালো থাকি এবং নিজের যত্ন নিতে শিখি। আপনার কাছে কিছু না থাকলে আপনি অন্যকে কিছুই দিতে পারবেন না।
১৩. সাময়িকভাবে নিজেকে থামান। এইচ (H) হচ্ছে ক্ষুধার প্রতিচ্ছবি। আপনি আপনার জীবনে কোন বিষয়টির জন্য ক্ষুধার্ত। এ (A) বসবে রাগের জন্য। এটা আমাদের অনেক সময় এবং শক্তি নষ্ট করে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বের করুন। এল (L) বসবে একাকীত্বের জন্য। অন্য মানুষের সাথে আপনি কী রকম সম্পর্কযুক্ত, আমরা জানি মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্ভর করার মতো বন্ধুর প্রয়োজন। আপনি কি আপনার অনুভূতি ভাগ করার মতো লোক বা বন্ধুর জন্য সময় ব্যয় করছেন? টি (T) বসবে ক্লান্তির জন্য। কী এবং কে আপনাকে ক্লান্ত করছে? আপনার ক্লান্তি দূর করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ওই সময়ে? যখন আপনি এই (HALT) পদ্ধতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, আপনি আপনার সামর্থ্যের সর্বাধিক কাজ করতে পারবেন।
১৪. সত্যিকার দৃঢ় সম্পর্ক আপনার নিজের সাথে গড়ে তুলুন। অন্তত একজন ব্যক্তির সাথে হলেও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলুন। ঘনিষ্ঠতা মানুষের অভিজ্ঞতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় নিয়ে ভাবুন আপনার নিজের প্রতি আপনি কতটা দায়িত্বশীল। অস্বীকার করা বা নিজেকে বঞ্চিত করা ইজিপ্টের নদীর মতো কোনো নদী নয়। প্রত্যেকটা জিনিসকে পরিষ্কার করে দেখা এবং গ্রহণ করার মতো মানসিক প্রস্তুতি থাকা এবং শেখা উচিত, তবেই আমরা পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে পারব। আমরা নিজেরা নিজেদের দেখি কখনো সাধারণ আবার কখনো অসাধারণভাবে। আমাদের মধ্যে অন্তত একজন মানুষ থাকা উচিত, যে আপনাকে পরিপূর্ণভাবে চিনবে। সেই রকম বিষয় এবং মানুষ চেনার জন্য এবং নিজেকে সেরকম তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং ব্যবস্থা নিন।
১৫. সবচেয়ে ভালো কাজ করার চেয়ে যতটুকু পারেন ততটুকু করার চেষ্টা করুন। যখন আপনি আপনার সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন তখন আপনার দুটো চোখই থাকবে কাজের প্রতি অর্থাৎ সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকবে কাজের প্রতি। কিন্তু আপনি যখন সবচেয়ে ভালো করার চেষ্টা করেন তখন আপনার একটি চোখ থাকবে মানের দিকে অন্যটি থাকবে কাজের প্রতি। যখন আমাদের সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে কাজের প্রতি তখন কে কী ভাবল তা যদি না ভেবে থাকেন তবে কাজ ভালো হবে। আসলে আমরা প্রতি মুহূর্তে নিজের সাধ্যকে অতিক্রম করি। বাস্তবে আমরা যখন নিজের সাধ্যমতো কাজ করার চিন্তা করি, তখন দিনদিন কাজ সন্তোষজনক হতে থাকবে। এভাবে আমাদের কাজ প্রতিদিন এক ধাপ করে উন্নত হতে থাকবে। তাই চেষ্টা করুন নিজের সাধ্যমতো কাজ করতে। সব সময় মনে রাখবেন আপনি আপনার চারপাশের অবস্থাকে কখনই অতিক্রম করতে পারবেন না।
১৬. রেলস্টেশন অতিক্রম করার নিয়ম যেমন সে অনুযায়ী জীবনে চলার চেষ্টা করুন। মনে করুন এবং স্মরণ করুন আমরা রেলস্টেশন অতিক্রম করার সময় কী করি-থামুন, দেখুন, শুনুন এবং সতর্কতার সাথে সামনে অগ্রসর হোন। যখন আমরা কারো সাথে সম্পর্ক গড়তে যাই চিন্তা করুন যা আমরা করছি তা যদি বন্ধ করে দিই তাহলে কী হবে, অন্যজনের প্রতি মনোযোগ দিলে কী হবে, তারা কী বলতে চায় তা শোনা বা বোঝার চেষ্টা করুন এবং যখন আপনার কথা বলার সুযোগ আসবে আপনি বলুন কী বলতে চান এবং সতর্কতার সাথে এগিয়ে যান। সম্পর্ক গড়া তখন অনেক নিরাপদ এবং উষ্ণ হবে।
১৭. ভুল স্বীকার করার মতো সাহসী হোন। আমাদের সবারই অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। আমরা সবাই কমবেশি ভুল করে থাকি এবং সমালোচনার ভয়ে তা অস্বীকার করি। প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক বলেছিলেন আমরা দোষ বা ভুলকে গোপন করার জন্য যে সময় ব্যয় করি তা না করে যদি ভুলকে স্বীকার করে তা সংশোধন করার জন্য সময় ব্যয় করি তবে আমরা সফল হবো এবং আমাদের মধ্যে মানবিকতা গড়ে উঠবে।
১৮. আপনার জয় এবং পরাজয় পরিমাপক আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্যতা রাখুন। আমাদের মন সব সময়ই আশপাশের পরিবেশকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে এবং ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতা চিন্তা করে আমরা বেশিরভাগ সময় নেতিবাচক দিক নিয়ে বেশি ভাবি। প্রত্যেকদিন কিছু ভালো সংবাদ থেকে আনন্দ পেতে শিখুন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় থেকে আনন্দ পেতে শিখুন। এক সমীক্ষণে দেখা যায় যারা এ অভ্যাসটি রপ্ত করতে পারেন তারা ভালো থাকেন এবং অধিক মনোবল পান।
১৯. দুটি অভ্যাস গড়ে তুলুন। এক. তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভাববেন না। দুই. সব কিছুই তুচ্ছ বিষয়। আমরা আমাদের জীবনে এক বিরাট অংশ ব্যয় করি ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে যা আমরা এক সময় ভুলে যাই। তাই কিছুক্ষণ বসুন এবং চিন্তা করুন কোনটি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং কোনটি নয়।
২০. আমরা প্রায় কোনো কিছু সম্পন্ন করার জন্য বা কোনো কাজকে সফল করার জন্য কাজ করি। মানুষের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে খেলার জন্য সময় ব্যয় করার প্রয়োজন হয়। যখন আমরা খেলা করি আমাদের মস্তিষ্ক সকল প্রকার চিন্তামুক্ত থাকে। এটা নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ভালো উপায়। সপ্তাহের যে কোনো দিন এমন কাজে ব্যস্ত থাকা ভালো যা আপনাকে আনন্দ দেবে। এটা একা হতে পারে কিংবা অন্য কারো সাথে, ঘরে বা বাইরের কারো সাথে। এটা শারীরিক খেলা বা শখ হতে পারে। আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত এই বিষয়ে কিছু সময় ব্যয় করার জন্য।
২১. অন্য মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা মানুষের মধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন মানুষের সংস্পর্শে থাকার অভিজ্ঞতা। উষ্ণ অভ্যর্থনা মানুষের সাথে মানুষের মিলনকে সুন্দর করে তোলে। তাই মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ককে প্রাণবন্ত করে তুলুন।
২২. আপনার চোখে অধিক ক্ষমতাবানের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। সমীক্ষণে দেখা গেছে যারা ঈশ্বর বা আল্লাহ বা ধর্মের প্রতি অনুগত তারা বিপদের সময় তা কাটিয়ে উঠতে দৃঢ় মনোবল পান। তাই শত কাজের ভিড়েও সকল ক্ষমতার যিনি উৎস তাঁর প্রতি কিছু সময় ব্যয় করুন।
No comments:
Post a Comment