Wednesday, August 1, 2012

পরীক্ষাভীতি ও করণীয়




পরীক্ষার্থীদের সামনে এখন কঠিন সময়। শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীদের চোখে ঘুম নেই। পরীক্ষা শব্দটি শুনলেই ছাত্রছাত্রীদের বুক ধড়ফড় করে, মুখ শুকিয়ে যায়, মাথায় ভর করে একরাশ দুশ্চিন্তা। পরীক্ষার সঙ্গে এই অস্বস্তিকর আবেগীয় অবস্থার উপস্থিতিকে পরীক্ষাভীতি বলে। এই ভীতি সবার হয় না, তবে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর হয়। একটা কঠিন পরিস্থিতি  মোকাবেলা করতে হবে এমন বোধ থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। পরীক্ষাভীতি থেকে শারীরিক কিছু উপসর্গও প্রকাশ পায়, যা একজন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যাহত করে।
পরীক্ষাভীতির লক্ষণ
পরীক্ষাভীতি এক ধরনের উৎকণ্ঠা বা উদ্বেগ। এ সময় অনেকেই খাওয়া-নাওয়া ভুলে যায়। ঘুমেরও অসুবিধা হয়। এ সময় সাধারণত যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো-অস্থিরতা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, অনিন্দ্রা, হাত-পা অতিরিক্ত ঘামা ও কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়া, মেজাজ খারাপ হওয়া, জানা জিনিস ভুলে যাওয়া। শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, বমি বমি ভাব, ঘনঘন প্রস্রাব, ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা ইত্যাদি।

পরীক্ষাভীতি দূর করতে যা করতে হবে
পরীক্ষা বিষয়টিকে সহজে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নিজের আকাঙক্ষা কমাতে হবে। মূলত আকাঙক্ষার কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। আকাঙক্ষা কমলে চাপও কমবে, এতে পরীক্ষাভীতিও কমে যাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মানসিক চাপমুক্ত পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের পরীক্ষার ফল ভালো হয়েছে। পরীক্ষাভীতি কাটানোর ভালো উপায় হলো আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া। যদি বছরের শুরু থেকেই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সঠিকভাবে পড়ালেখা করা যায়, তাহলে পরবর্তীকালে পরীক্ষাভীতি থাকে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিংবা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পড়ালেখার প্রয়োজন নেই। পড়ালেখার জন্য দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। এ সময়টুকু টানা পড়তে হবে এমন কথা নেই। সময়টাকে ভাগ করে নিতে হবে। সকালে এতটুকু এবং সন্ধ্যায় এতটুকু। এভাবে ভাগ করে পড়লে পড়া ভালো হবে, পরীক্ষার সময় তাড়াহুড়ার প্রয়োজন হবে না, ফলে পরীক্ষাভীতিও থাকবে না।

পরীক্ষার সময় খাওয়া-দাওয়া
পুষ্টিকর খাবার শরীরে শক্তি জোগায় ও অমনোযোগী হতে বাধা দেয়। তাই সব সময় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অনেক ছাত্রছাত্রীকে দেখা যায়, পরীক্ষার সময় খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়ে সারাক্ষণ পড়ালেখায় ডুবে থাকে। এটা ঠিক নয়। গ্লুকোজ সহজেই মস্তিষ্কে পৌঁছে ব্রেইন সেলকে সতেজ রাখে। এ জন্য মিষ্টি বা শরবত পরীক্ষার সময় ভালো কাজ করে। এ সময় তাজা বা শুকনা ফল, ফলের রস, সুপ, লবণমুক্ত বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এসব খাবার পড়ার ফাঁকে ফাঁকে খেতে হবে। ভাত, মাছ, গোশত বা ডিম নিয়মিত খেতে হবে প্রধান খাবার হিসেবে। ভাতের বদলে অন্যান্য সিরিয়াল ও রুটি বা স্ন্যাক্স খাওয়া যেতে পারে। চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। পানি পান করতে হবে বেশি করে। রাত জেগে কাজ করার সুবিধার্থে সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। পরীক্ষার সময় অনেকে চা বা কফি খেতে পছন্দ করে। কিন্তু চা বা কফিতে বিদ্যমান ক্যাফিন স্নায়ুকে উত্তেজিত করে তোলে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। সুতরাং এসব পানীয় পরিহার করাই ভালো। এসবের পরিবর্তে দুধ-ঘোল/লেবু শরবত অনেক উপাদেয়, তবে অজীর্ণ দেখা দিলে লেবুর শরবত অথবা টক জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। পরীক্ষার আগের রাতে শর্করা জাতীয় খাবার যেমন-ভাত, রুটি, আলু ইত্যাদি খেতে হবে। পরীক্ষার দিন সকালে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার  যেমন-ডিম, শিম, মাশরুম বা সিরিয়াল জাতীয় খাবার খেতে হবে।


এখন চলছে নতুন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার মৌসুম। সব মিলিয়ে পরীক্ষার আবহ। চারদিকে বিরাট আয়োজন, মা-বাবার মনে দুশ্চিন্তার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। কিন্তু বাবা-মার এই দুশ্চিন্তা সন্তানকে যেন স্পর্শ না করে। কারণ পরীক্ষা এলে কিন্তু এমনিতেই শিশুর বুকটা ধুক ধুক করে ওঠে, জিহ্‌বা শুকিয়ে যায়। এ সময় তাই সোনামণিকে ধীরস্থির থাকতে হবে। কিন্তু ছোট শিশু পারবে কি এই অস্থিরতা কাটাতে? এ জন্য মা-বাবাকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুর কোমল মনের অনুভূতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, শিশুকে খুব বেশি জবরদস্তি করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এল.ই. ফাতমি বলেন, শিশুরা তো পড়াশোনা সারা বছরই করে থাকে। সুতরাং এ কয়টা দিন অতিরিক্ত চাপ দিলে বাড়তি কোনো ফল আসবে না, উল্টো ক্ষতি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো পড়া না পারলে শিশুকে দোষ দেয়া যাবে না। অন্য মানুষের সামনে কখনো বলা যাবে না শিশু কিছুই মনে রাখতে পারে না। অনেকে আবার শিশু সব পড়া পারলেও নজর লাগবে এই ভয়ে বলেন, কিছুই পারে না। এতে কিন্তু তার মনোবল নষ্ট হয়ে যায়। জানা প্রশ্নও ভুলে যায়। তাই এটি করা উচিত নয়।
পরীক্ষার সময় শিশুরা খাওয়া-দাওয়া একদম করতে চায় না। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া না করলে তো শিশু দুর্বল হয়ে পড়বে। আর মগজের দরকার যে ফুয়েল বা জ্বালানি তা আসে মূলত গ্লুকোজ থেকে। আর   গ্লুকোজ থাকে শর্করায়। এ সময় অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সঙ্গে শর্করাজাতীয় খাবার ভাত, রুটি, চিনির শরবত খাওয়াতে হবে। বাজার থেকে গ্লুকোজ কিনে আনার প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক খাবারে যে শর্করা থাকে তা থেকেই শিশু সহজে গ্লুকোজ পায়। আকর্ষণীয় খাবার যেমন জর্দা, পায়েস এসব দিতে পারেন। এগুলোতেও আছে গ্লুকোজ। পরীক্ষার আগে রুচিহীনতার কারণে সোনামণিরা শক্ত খাবার খেতে চায় না। তাই তরল ও নরম খাবার দেয়াই ভালো। ফলের জুস, দুধে ভেজানো রুটি, নরম খিচুড়ি ভালো কাজ দেবে।
পরীক্ষার এই সময়ে কিন্তু আইসক্রিম বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি একদম দেয়া যাবে না। এতে ঠাণ্ডা লেগে, জ্বর হয়ে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে যাবে। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়া অনেকেরই অভ্যাস। এদিকে মা-বাবাকে নজর দিতে হবে। রাত জাগলে কিন্তু পড়া মনে থাকে না, সারাদিন যা পড়া হয় তা  ব্রেইনের স্তরে জমা হতে সুস্থির সময়ের প্রয়োজন হয়। তাই ব্রেইনকে বিশ্রামের সময় বেশি না দিলে কোনো পড়াই স্মরণ থাকবে না। খুব দ্রুত পড়া ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পরীক্ষার সময় অস্থিরতা একদম বারণ। অস্থিরতায় মগজ থেকে এক ধরনের কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়, সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং মানুষের অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। বুক ধড়ফড়, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, পিপাসা লাগা, অতিরিক্ত ঘাম, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব সিমপেথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। অস্থিরতায় পড়াশোনা গুলিয়ে যায়, জানা উত্তরও ভুল হয়। তাই যতটা সম্ভব সুস্থির থাকতে হবে।
পরীক্ষার সময় সন্তানের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ঠাণ্ডা, জ্বর, ভাইরাস, টনসিলাইটিস-এসব শিশুর সাধারণ শীতের অসুখ। এসব যেন শিশুকে সহজে কাবু করতে না পারে সে জন্য সামান্য লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, যাতে অসুখের কারণে পরীক্ষাটাই মাটি হয়ে না যায়। মোটকথা, শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেন আপনার সন্তান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...