Saturday, August 4, 2012

পরীক্ষা নিয়ে শারীরিক ও মানসিক চাপ

পরীক্ষা নিয়ে শারীরিক ও মানসিক চাপ


যেকোনো পরীক্ষাই টেনশনের উদ্রেক করে। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা টেনশন কিংবা চিন্তা হওয়াটা দোষের কিছু নয়। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা বা টেনশনের দরকারও রয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে কিছুটা টেনশন বা চিন্তাভাবনা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে বেগবান করে তোলে, পড়াশোনায় গতি ফিরিয়ে আনে। সবকিছু মিলিয়ে একটি পরীক্ষা পরীক্ষার্থীর ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। পরীক্ষার প্রস্তুতিপর্বে শারীরিক চাপটাই প্রধান হলেও পরীক্ষার ঠিক আগে সাথে মানসিক চাপটাও যোগ হয়।
পরীক্ষাভীতি
কেউ কেউ পরীক্ষা নিয়ে বাড়তি মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। এই মানসিক চাপ অনেক পরীক্ষার্থীকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করেন না এমন পরীক্ষার্থী পাওয়া যাবে না। এই বিষয়টিকে বলা হয় পরীক্ষাভীতি। পরীক্ষা নিয়ে টেনশনের বিষয়টি নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। যেমন-যার প্রস্তুতি ভালো থাকবে তার টেনশনও কম থাকবে। প্রস্তুতি ভালো থাকার পরও কিছুটা টেনশন থেকেই যায়। কিন্তু অনেকে আছেন যারা অযথাই টেনশনে ভোগেন। প্রস্তুতি শত ভালো হওয়ার পরও এদের টেনশনের অন্ত নেই। এ রকম টেনশন মাস্টারদের নিয়েই বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। তবে পরীক্ষা শুরুর পর পর যখন পরীক্ষাগুলো ভালো হতে থাকে তখন এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের টেনশন ক্রমান্বয়ে কমে যায়।

নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে
নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্যই এদের টেনশন আর থাকে না। আর এক ধরনের পরীক্ষার্থী আছেন যারা সব সময়েই সবকিছু নিয়ে একটু কম টেনশন করেন। এরা প্রকৃতিগতভাবেই এই টেনশনহীনতা অর্জন করে থাকেন। এরা অল্প প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষা ভালো করেন কারণ এরা যা জানেন তা পরীক্ষার খাতায় লিখে আসতে পারেন। আরেকটা গ্রুপ আছেন যাদের প্রস্তুতি একেবারেই ভালো থাকে না, এদের কাছে যে কারণেই হোক পরীক্ষা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। ফলে পরীক্ষা নিয়ে এদের কোনো টেনশনও হয় না। যাই হোক শরীরের ওপর পরীক্ষা মানসিক ও দৈহিক চাপ সৃষ্টি করে থাকে।

পরীক্ষার প্রভাবে প্রথমে আক্রান্ত হয় মন, পরে শরীর
পরীক্ষার সময় পড়াশোনা করতে হয়, প্রস্তুতির প্রায় পুরো ঘটনাটা ঘটে মস্তিষককে নিয়ে। মস্তিষ্কের প্রভাব পড়ে গোটা শরীরে। এ সময় মস্তিষ্কেকে একটু বেশি কাজ করতে হয়। অন্য সময় মস্তিষ্ক যে কাজ ছাড়া বসে থাকে তা কিন্তু নয়। মস্তিষ্ককে যে যত বেশি ক্রিয়াশীল রাখবে সে পরীক্ষায় তত বেশি ভালো করবে। অর্থাৎ যে নিয়মিত পড়াশোনা করবে তার মস্তিষক তত বেশি ক্রিয়াশীল থাকবে।

  • পরীক্ষার সময়ে মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হচ্ছে এডরেনালিন নামক হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ। এডরেনালিন শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় হরমোন, যা শরীরকে সক্রিয় হওয়ার কাজে উদ্দীপনা জোগায়। কিন্তু অতি মানসিক চাপ এই এডরেনালিন হরমোনের নিঃসরণকে বাড়িয়ে দেয় এবং কিছু অস্বস্তিকর উপসর্গের সৃষ্টি করে। তবে শারীরিক পরিশ্রমে এই এডরেনালিন ব্যবহৃত হয়। তাই শারীরিক পরিশ্রমে এই এডরেনালিনের মাত্রা কমে আসে। সুতরাং অতি মানসিক চাপের ফলে নিঃসরিত এডরেনালিনের মাত্রা কমাতে হাল্কা ব্যায়াম করতে হবে। এই ব্যায়াম শরীরে উদ্যম ফিরিয়ে এনে মনকে চাঙ্গা করে তুলবে এবং অতি এডরেনালিনজনিত উপসর্গ যেমন-বুকের ধুকপুকানি, ঘনঘন শ্বাস, মাংসপেশির খিঁচুনি ভাব ইত্যাদি কমিয়ে আনবে।
  • পরীক্ষার সময় কায়িক পরিশ্রম না হলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষুধা পায়। কিন্তু সাথে মানসিক চাপ যোগ হওয়ার ফলে মুখে রুচি থাকে না অনেকের। খাওয়ার সময় গিলতে অসুবিধা হয়, মুখ শুকিয়ে থাকে।
  • পরীক্ষার টেনশনে অনেকের মুখে এক ধরনের আলসার দেখা দেয়। এই আলসার খুবই কষ্টদায়ক। এই আলসারের নাম অ্যাপথাস আলসার। অন্যান্য মানসিক চাপ থেকেও অ্যাপথাস আলসার হতে পারে। তবে পরীক্ষার্থীদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়।
  • পরীক্ষার সময় অনেকেরই ঠিকভাবে ঘুম হয় না কিংবা নিদ্রাহীনতায় পেয়ে বসে অনেকের। এই নিদ্রাহীনতা পরীক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনে না।
  • পরীক্ষার ঠিক আগে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকে টেনশন আর ডায়রিয়ায়। এই ডায়রিয়া জীবাণুঘটিত ডায়রিয়া নয়। পরীক্ষার টেনশনের ফলে পরিপাকতন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ বেড়ে যায়। ফলে বারবার বাথরুমের চাপ দেখা দেয়, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হতে থাকে।
পরীক্ষার সময় কেউ কেউ অমনোযোগী হয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে এটিও একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। যার নাম অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসঅর্ডার উইথ হাইপার অ্যাকটিভিটি। এই সমস্যায় আক্রান্ত পরীক্ষার্থী অমনোযোগিতার পাশাপাশি অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এ জন্য সত্বর মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

টেক এক্সট্রা কেয়ার
এ সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীরে যাতে কোনো রোগ আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ যেমন-ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিস সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এই সব রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য কোনোক্রমেই বাসি খাবার, বাইরের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে ফুটানো বিশুদ্ধ পানি।
  • পরীক্ষার সময় শরীরের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। তবে যারা নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ করে থাকে তাদের জন্য খুব বেশি বাড়তি খাবারের দরকার নেই। কিন্তু মস্তিষ্ককে সুস্থ ও কার্যকর রাখার জন্য শস্যদানাজাতীয় খাবার, দুধ, সবজি, ডিম গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • পরীক্ষার সময় পড়াশোনার সময়টি নির্দিষ্ট করে অতিরিক্ত রাতজাগা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত রাত জেগে পড়াশোনা অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মনে রাখতে হবে পড়াশোনায় মনোনিবেশের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ঘুমেরও প্রয়োজন রয়েছে।
  • প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে পড়াশোনার পর্ব শেষ করে কিছুক্ষণ রিলাক্স করতে হবে। কিছুটা সময় নিজের মতো উপভোগ করতে হবে। এতে রাতের ঘুমটা ভালো হবে।
নো টেনশন
  • পরীক্ষার আগে নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি অতি এডরেনালিনজনিত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। তাই হাঁটতে হবে।
  • টেনশন কমানোর জন্য ইয়োগা বা যোগব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করা যেতে পারে। এতে শরীর কিছুটা রিলাক্স হয়। মেডিটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এ সম্পর্কে আগে থেকে খোঁজখবর থাকলে ভালো। মেডিটেশন সম্পর্কে জানা না থাকলে দৈনিক ১৫ মিনিট চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বুজে বুকভরে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে ইতিবাচক চিন্তায় বা কল্পনায় আপন মনে হারিয়ে যেতে হবে।
পরীক্ষার টেনশন কমাতে অনেক সময় ট্র্যাংকুলাইজার জাতীয় ওষুধ গ্রহণের দরকার পড়তে পারে। যে কোনো ওষুধই এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত। না বুঝে বন্ধুর দেয়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা এ সময়ে ঠিক হবে না। তাতে বিপদ হতে পারে।

রিভিশন ইজ দ্য বেস্ট
কোন বিষয়গুলো রিভিশন দিতে হবে তার একটা তালিকা তৈরি করে এ বিষয়ে একটা সাপ্তাহিক রুটিন তৈরি করে ফেলতে হবে।
পড়াশোনার ফাঁকে দৈনিক আধা ঘণ্টার একটা সেশন রাখা যেতে পারে রিভিশনের জন্য। রিভিশন পর্বে প্রশ্ন-উত্তরের ব্যবস্থা রাখা ভালো। একজন প্রশ্ন করবে অন্যজন উত্তর দেবে-এমনটি হলে ভালো হয়। শিক্ষকের সঙ্গে এই কাজটি করলে আরো ভালো। অবসর সময়ে বন্ধুর সঙ্গে এই কাজটি করা যেতে পারে। রিভিশনের সময় যে বিষয়গুলো মনে থাকছে না বলে মনে হবে সেগুলো নোট করে রেখে পরবর্তী সেশনে ওগুলো আলোচনা করতে হবে। রিভিশনের সময় শুধু উত্তরই নয় বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।

পরীক্ষা নিয়ে নানা মিথ
অনেকেই মনে করেন পরীক্ষার আগে ডিম খেলে পরীক্ষায় গোল্লা পাবে। আসলে বিষয়টি একেবারেই মনগড়া। পরীক্ষার আগে ডিমের প্রয়োজন আছে শরীরের পুষ্টির জন্য।

পরীক্ষার আগে অনেকেই বেশি বেশি খেয়ে থাকেন। মনে করেন এ সময় বেশি খেলে মেধা বাড়বে। প্রকৃতপক্ষে এই ধারণা ঠিক নয়। এ সময়ে অতিভোজন অনেক সময় শরীরকে অলস করে তুলতে পারে, অতিরিক্ত ঘুমের উদ্রেক করতে পারে। যা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ব্যাহত করবে।
পরীক্ষার আগে চাঙ্গা থাকার জন্য অনেকেই চা-কফি গ্রহণ করে থাকেন। এই চা-কফি শরীরকে চাঙ্গা রাখে। কিন্তু অনেকেই এ সময় অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ করে থাকেন, যা কিছুটা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত চা-কফি নিদ্রাহীনতা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সৃষ্টি করতে পারে। কাজেই এ সময়ে চা-কফি গ্রহণ করা যাবে, তবে তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। এ সময়ে দৈনিক ৪-৫ কাপ চা-কফি গ্রহণ করলে কোনো সমস্যা নেই। চা-কফির মধ্যে থাকে ক্যাফেইন।  এই ক্যাফেইন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা চিন্তাশক্তিকে ঘোলাটে করে দিতে পারে।
রাত জেগে পড়াশোনা করার বিষয়টি পরীক্ষার প্রস্তুতির একটি প্রচলিত বিষয় হলেও এটি শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীর জন্য সুফল বয়ে আনে না। পড়াশোনার জন্য সকাল বেলা, দুপুর ও সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময়কে বেছে নেয়া ভালো। রাতে ও বিকেলের সময়টিকে রাখা যেতে পারে ঘুম ও বিশ্রামের জন্য। অনেকে বিকেল বেলা পড়তে অভ্যস্ত। এ সময়টাকে পড়াশোনার কাজে লাগাতে চাইলে একা একা না পড়ে ইতিপূর্বের পড়াগুলোকে যাচাই করে নেয়ার জন্য অন্যদের সাথে আলোচনা করা ভালো। বিকেলে পড়াশোনা নিয়ে ডিসকাশন খুবই কাজে আসে।
শুধু পড়লেই হবে না। পড়ে পড়ে অন্যের পড়া শুনতে হবে, একা লিখতে হবে। এভাবেই সম্পন্ন হবে প্রস্তুতি।

পরীক্ষার পূর্বরাত্রি, নো টেনশন, নো স্ট্রেস

  • পরীক্ষার আগের দিন কখনোই অতিরিক্ত পড়াশোনা করা যাবে না।
  • পরীক্ষার কেন্দ্র এবং পরীক্ষার সময় সম্পর্কে পরিষকার  ধারণা থাকতে হবে। পরীক্ষার দিন যাতে পরীক্ষার কেন্দ্র খুঁজে বের করতে না হয়। আর পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর জন্য বাহন এবং পর্যাপ্ত সময় হাতে রাখতে হবে।
  • পরীক্ষার আগের রাতেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ, প্রবেশপত্র ইত্যাদি একটি বাক্সে তৈরি অবস্থায় দেখে দিতে হবে।
  • আগের দিন বাড়তি ক্যাফেইন এবং নিকোটিন গ্রহণে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা সময় রিলাক্স করতে হবে
  • পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষা নিয়ে কোনো নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ঢোকানো ঠিক হবে না। বন্ধুর সঙ্গে এই প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এটা পড়া হয়নি, প্রশ্ন খুব হার্ড হবে শুনেছি- এ জাতীয় কথা চালাচালি না করাই উত্তম।
পরীক্ষা তো জীবনেরই অংশ, কাজেই...
টেনশন পরীক্ষার্থীদের অন্যতম সমস্যা। এই টেনশন দূর করতে পরীক্ষায় কৌশলগত প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এছাড়া পরীক্ষার্থীকে প্রস্তুতি নিয়ে আস্থাশীল থাকতে হবে। পরীক্ষার্থীকে আশ্বস্ত করতে পরিবারেরও একটি ভূমিকা রয়েছে। টেনশন দূর করতে কনফিডেন্স নিয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবনে পরীক্ষা থাকবেই। আর এই পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে পরীক্ষাকে জয় করতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া জীবন হয় না। পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে না ভেবে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। কারণ জীবন এক চলমান প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ার ধাপে ধাপে রয়েছে পরীক্ষা। পরীক্ষা একটি স্বাভাবিক বিষয়। এটি জীবনেরই অংশ। কাজেই এ নিয়ে বাড়তি টেনশনের দরকার নেই। পরীক্ষার মধ্যে চড়াই-উতরাই থাকবে। কোন পরীক্ষা কার জীবনে সাফল্যের দ্বার খুলে দেবে তা কেউই জানে না। সুতরাং পরীক্ষা নিয়ে অযথা টেনশন নয়।

পরীক্ষার টেনশন কমাতে
সাখাওয়াৎ শরীফ
পরীক্ষা শব্দটি যে কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই এক ধরনের ভীতি, যা স্বাভাবিক মাত্রায় কাজ করে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ পরীক্ষা মানেই প্রত্যাশিত কোনো কিছু অর্জন। এই অর্জন যদি নিজের মতো হয় তাহলে এর যে কী সুখ তা যিনি এরূপ পরিণতির মধ্য দিয়ে অর্জন করেন তিনি সবচেয়ে ভালো উপলব্ধি করতে পারেন, বর্ণনা করতে পারেন, যা অন্যের পক্ষে ততটা যথার্থ হয় না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন পরীক্ষা জীবনের সব ক্ষেত্রেই আমাদের প্রভাবিত করে। আর নিজেকে জানা কিংবা নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম পরীক্ষা, তা তো আমরা বলতে পারি। তার মানে পরীক্ষা শব্দটিকে যদি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভাষায় বলি তাহলে বলতে পারি, পরীক্ষা হলো আমি আগে যা শিক্ষা অর্জন করেছি তা রাষ্ট্রীয় কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত কিংবা আমার জানার ও জ্ঞানের পরিধি পরিমাপ করার অনেক ব্যবস্থার মধ্যে একটি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানকে প্রকাশ করার সুযোগ পাই, যার মধ্য দিয়ে সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করি। এই অর্জন যদি নিজের চাওয়ার মতো হয় তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু যদি পরীক্ষার ফল উল্টো হয় তাহলে তার যে কী কষ্ট তা ভুক্তভোগীরাই জানে। হয়তো এই কষ্ট কারো কারো স্বাভাবিক জীবনকে পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে, কেউ কেউ হয়তোবা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা যাতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়ি কিংবা মানসিকভাবে নিজেদের স্বাভাবিক রাখার জন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের, বিশেষ করে ছোটরা যারা এখনো জীবনের অনেক পথ পাড়ি দেয়নি তারা মনে রাখবে-জীবন মানেই তো পরীক্ষা।
এই পরীক্ষাটাকে যদি আমরা জীবনের অন্যান্য খেলার মতো মনে করি এবং এই খেলা যদি নিজেদের উৎসাহিত করে, আনন্দ দেয়, তাহলে দেখবে এই খেলা খেলতে বেশি ভালো লাগবে। আর বেশি করে খেলা বা অনুশীলন মানেই তো নিজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। কোনো বিষয় দীর্ঘক্ষণ স্মৃতিতে রাখার উপায় মোটামুটি আমরা সবাই জানি, তা হলো বেশি করে অনুশীলন। এই অনুশীলনের কৌশল তোমরা হয়তো সবাই প্রয়োগ করে থাক। আমরা সবাই লক্ষ করি, যে বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো লাগে তাকে আমরা বেশি করে পড়ি এবং মুখস্থও রাখতে পারি এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলে থাকি, এই এই বিষয়ে আমি খুব ভালো করব। কিন্তু দুই-একটি বিষয়ে ভালো করব না। যখনই দু-একটি ভালো না করার বিষয় আসে তখনই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাই অন্যান্য ভালো লাগার কিংবা ভালো করে পারার বিষয়গুলোর কথা। আবার কেউ দুই-একটি বিষয়ে শত চেষ্টা করেও ভালো কিংবা নিজের চাওয়ার মতো না পারায় সারা বছর মনের কষ্টে দুশ্চিন্তায় ভোগে।
ভালো করে না পারার বিষয়টি যখনই পড়ার প্রসঙ্গে আসে তখনই মাথায় ভর করে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক চিন্তা কিংবা এক ধরনের অস্থিরতা। পাশাপাশি নিজের মধ্যে কাজ করতে পারে-আমি এই বিষয়ে ভালো করতে পারব না কিংবা বুঝি না। এই বিশ্বাসই কিন্তু ওই বিষয়ের প্রতি আমাদের অনুশীলনের মাত্রা এবং মুখস্থ করার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মনে হয় যেন একে না রাখতে পারলেই ভালো। কারণ এক সময় দেখা যায় ওই বিষয়টির প্রতি আমাদের ভালো না লাগার অনুভূতি জন্ম নেয়। আমরা তাকে ঘৃণার চোখে দেখি। বাস্তবে আমরা যাদের ঘৃণা করি কিংবা যাদের দেখলে আমাদের খারাপ লাগে তাদের সঙ্গে আমরা কী রকম আচরণ করি? নিশ্চয়ই যাদের ভালো লাগে, যাদের সান্নিধ্য খুব প্রত্যাশা করি তাদের মতো নয়। মনে কর কোনো খারাপ লোক তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, যাকে তুমি খুব অপছন্দ করো। সেই মুহূর্তটি কেমন লাগবে যদি মানুষটি প্রত্যাশিত কেউ হয়। এক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিটিকে ঘৃণা না করে ভালোবাসি, ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে তার সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করি, তার খারাপ দিকগুলো বিবেচনায় না এনে ভালো দিকগুলো নিয়ে তার সঙ্গে মিশি দেখবে খারাপ লাগার অনুভূতিও কেটে যাবে, এক সময় তার উপস্থিতিও সে রকম প্রত্যাশিত এবং ভালো লাগবে। পরীক্ষাকেও সে রকম ভালো লাগার বিষয় হিসেবে নিলে এর সঙ্গে জড়িত দুশ্চিন্তা, ভয় বা কষ্টের অনুভূতিগুলো সহজেই দূর করা যাবে।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...