যেভাবে শুরু
বর্তমানে সবাই চায় উপরে উঠতে। প্রতিষ্ঠানগত বাস্তবতায় ওপরে ওঠা বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক ও মেধায় সামনে এগিয়ে যাওয়া। মেধার পরিচয় হয় ভালো রেজাল্টে।
ভালো ছাত্র হতে গেলে কী লাগে? লাগে মেধা। আর মেধা বিকাশে দরকার বুদ্ধি।
এখন মানুষের মস্তিষেকর সবচেয়ে বেশি অর্জনকে অনেকেই মনে করেন বুদ্ধি বিকাশ। এ
নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। পৃথিবীতে যখন প্রতিযোগিতা বাড়ছে তখন মেধাবী
হওয়ার জন্য কেউ যদি বাড়তি কোনো উপাদানের সহায়তা নেন তাহলে তাকে কি সৎ বলা
যাবে? এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।বর্তমানে সবাই চায় উপরে উঠতে। প্রতিষ্ঠানগত বাস্তবতায় ওপরে ওঠা বলতে বোঝায় অর্থনৈতিক ও মেধায় সামনে এগিয়ে যাওয়া। মেধার পরিচয় হয় ভালো রেজাল্টে।
বুদ্ধি বাড়াতে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। এখন বিজ্ঞানী ও ডাক্তাররা উঠে-পড়ে লেগেছে কীভাবে মস্তিষেকর ক্ষমতাকে আরো বাড়ানো যায়। যার ফলে সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে এক বিতর্ক, আর তা হলো বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য বিশেষ ড্রাগসের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, কেমব্রিজের দুই গবেষক নিয়মিত এক বিশেষ ওষুধ নেন। তারা এটি নেন তাদের বুদ্ধি বাড়ানোর জন্য। তাদের এই স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে এক বিতর্ক চাঙ্গা হয়েছে তা হলো বুদ্ধি বিকাশে এ ধরনের ড্রাগসের সাহায্য নেয়া কতটা জরুরি, পরবর্তী প্রজন্ম যদি নিজেদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে কীভাবে তা সমস্যা তৈরি করবে।
যখন দুজন মেধাবী লোক বিশেষ ড্রাগসের মাধ্যমে নিজেদের মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করে তখন স্বাভাবিকভাবেই তরুণ প্রজন্মের অনেকে এ ধরনের চেষ্টা করতে পারে।
যখন এ বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালানো হয় তখন জানা যায়, এ ধরনের আরো ২০ জন মেধাবী নিজেদের মেধা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ড্রাগসের সাহায্য নেয়।
বিতর্কটা আরো বেশি জটিল আকার ধারণ করেছে এ কারণে যে বর্তমানে খেলায় পারফরমেন্স বাড়ানোর জন্য অনেকেই বিভিন্ন ড্রাগসের সাহায্য নেয়, কিন্তু তা অবৈধ।
কিন্তু খেলার মতো সেটা কি শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকর? কিছু বিজ্ঞানী এ ব্যাপারে বেশ সতর্ক। তাদের মতে, ওষুধের মূল কাজ হচ্ছে অসুখকে ভালো করা। কোনো মানুষকে অসীম ক্ষমতাবান বানানো ওষুধের কাজ নয়। অনেকেই এ ব্যাপারে একমত যে ওষুধ মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে জটিল করে তোলে। আবার এভাবে মেডিসিনের মাধ্যমে মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে মানুষের মধ্যে একটা বৈষম্য তৈরি হতে পারে, যারা মেডিসিন নেয় আর যারা নেয় না।
আবার অনেক বিজ্ঞানী এও বলেছেন, কোনো কোনো মেডিসিনের মানুষের মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য থাকতে পারে, কিন্তু তা অনেক সময় ভুলভাবে এবং বিপজ্জনক কাজে পরিচালিত হতে পারে।
কেউ কেউ বলেছেন খেলা আর শিক্ষা এক নয়। অনেকে নিছকই নিজেদের কাজের অবসাদ কাটানোর জন্য এক ধরনের উদ্দীপক মেডিসিন ব্যবহার করে। মেডিসিন দিয়ে মানুষের মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়ানো ব্যাপারটি বাড়াবাড়ি।
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শেখা, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং লেখা। এখন কেউ যদি কারো ভালো ফল পাওয়ার জন্য কোনো মেডিসিন ব্যবহার করে তাহলে সেটা নেতিবাচক কিছু নয়।
কিন্তু এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব আছে কি না তা পরীক্ষা করা দরকার। তবে অনেক বিজ্ঞানী এ ধরনের মেডিসিন ব্যবহারের পক্ষে নয়। কারণ এটি মানুষের মস্তিষেকর ক্ষমতা সাময়িকভাবে বাড়ায় বটে কিন্তু তা আবার মস্তিষককে জটিল করে তুলতে পারে। কারণ এর পরে দেখা যায় অনেকে মেডিসিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এর সুফল ও কুফল জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
অতীতকাল থেকে মানুষ শিক্ষালাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তার জন্য সে তৈরি করেছে খাদ্য তালিকা থেকে শুরু করে নানা ভেষজ। তবে অতীতকালে জ্ঞান লাভ ছিল নিছকই চর্চা এবং নিজেকে বোঝার জন্য, বর্তমানে শিক্ষা শুধু জ্ঞানের বিষয় নয়। এ শিক্ষা লাভের মধ্য দিয়ে সমাজে নানাবিধ অর্জন তৈরি হয়। যার ফলে ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে।
অনেকে রাত জেগে কাজ করার জন্য এক ধরনের মেডিসিন নেয়, কারণ তাকে এ বাজারে টিকে থাকতে হবে, আরো ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
এ পক্ষের লোকেরা বলেছেন সমাজ তাদের সমমান করে যারা সমানে এগিয়ে যায়। এখন প্রত্যেকটি সংস্কৃতি চায় সেরা মানুষটিকে যে কি না তার সবচেয়ে বেশিটা দিতে পারবে। এখন কোনো মানুষ যদি মেডিসিন গ্রহণ করে তার সেরাটা দিতে পারে তাহলে ক্ষতি কি? সে তো আর অন্যের ক্ষতি করছে না।
তারপরেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মত কৃত্রিমভাবে মেডিসিন নিয়ে মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে। কারণ কৃত্রিমতার শেষ পরিণতি কী হতে পারে তা এখনো বিজ্ঞান জানে না।
আমাদের দেশে মেধা বিকাশে বা স্মৃতিশক্তি ধরে রাখার জন্য নানা ধরনের সালসা এবং চ্যাবনপ্রাশ খাওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক উপায়েও মস্তিষেকর ব্যায়াম করার মধ্য দিয়ে মাথার ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
মস্তিষক চর্চা বা স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য কয়েকটি সহজ পদ্ধতি, যা প্রাকৃতিক।
১. মস্তিষেকর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ধাঁধা, ক্রসওয়ার্ড ও সুডোকে খেলুন। তবে খেলার সময় নিজেকে যথেষ্ট সময় দিন।
২. সকালে উঠে চোখ বন্ধ করে গোসল করুন এবং দাঁত মাজুন সেই হাত দিয়ে যে হাতটি আপনি সচরাচর কম ব্যবহার করেন। যেমন
৩. আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকই ডানহাতি কাজেই বাঁ হাতে ব্রাশ করতে পারেন।
৪. যারা পড়তে ভালোবাসে পড়ুন।
৫. কাজের সময় নন ডমিনেটিং হ্যান্ড বা সচরাচর যে হাতটি ব্যবহার করেন না সেই হাতটি ব্যবহার করুন।
৬. খাবারের সময় চোখ বন্ধ করে খাবারের স্বাদ গন্ধ অনুভব করে খান।
৭. শঙ্কা নিয়ে জীবন কাটাবেন না, মনে রাখবেন ভয় শুধু ভয় ছাড়া আর কিছুই দেয় না।
৮. যে জিনিসটি মনে রাখতে চান তাকে সহজ করে ভাবুন।
৯. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পরিমিত ও নিয়মিত আহার করুন।
ইংরেজ শিশুদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধির
কৌশল শেখা
সোহরাব সুমন
ইংল্যান্ডের ব্রাইটনের এক প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক জোনাথন হ্যানকক। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্মৃতিশক্তির অধিকারী তিনি। একবার যা দেখেন তা কখনো ভোলেন না। এই অসাধারণ গুণটির জন্য দুবার তার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।
তিনি পরিকল্পনা এঁটেছেন স্বদেশের স্কুলপড়ুয়াদের তার নিজের স্মরণ রাখার কৌশল শেখাবেন। ফরাসি ব্যাকরণ থেকে শুরু করে তারিখের তালিকা মনে রাখাসহ সব কিছুই তাদের শেখাবেন। জোনাথন হ্যানকক আশা করছেন, একটি জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করার মাধ্যমে একজন খুদে স্মরণশক্তির চ্যাম্পিয়ন খুঁজে বের করতে সমর্থ হবেন তিনি।
একটি প্যাকেটের মধ্যে এলোমেলো করে রাখা তাস কোন ক্রমানুসারে সাজানো আছে, তা একবার দেখে পরে নির্ভুলভাবে বলতে পারার জন্য পরপর দুবার গিনেস রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে তার নাম। ১৯৯৪ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড মেমোরি চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কারও জিতেছেন।
হ্যানকক বলেন, ‘আমি জীবনে এযাবৎ যা কিছু করেছি, তার কোনোকিছুই ভুলিনি। সবই মনে আছে আমার। এসব আমি মনে রাখতে পেরেছি আমার অসাধারণ স্মরণশক্তির কারণে।’
লার্নিং স্কিলস ফাউন্ডেশন হ্যানককের এ দাবি সমর্থন করেছে। হ্যানকক আশা করেন, দশ থেকে এগারো বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা ভবিষ্যতে নিজেদের ভাগ্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
তিনি বলেন, শিশুদের স্মৃতিশক্তি আজকাল আগের চেয়েও অনেক বেশি তথ্যে সমৃদ্ধ থাকে। তার মতে, ‘শিশুরা কৌশলটা যদি আগে থেকেই শেখা শুরু করে, তাহলে এর মাধ্যমে স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন ঘটানোর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চাই না অনুন্নত স্মৃতিশক্তির অধিকারী বয়স্কদের মতো বেড়ে উঠুক আধুনিক শিশুরা, যে মানুষগুলোর আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে।’
লার্নিং স্কিলস ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞানবিষয়ক পরামর্শক দলে রয়েছেন অটিজম বিশেষজ্ঞ, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সিমন ব্যারন কোহেন এবং মনোবিজ্ঞান ও স্মৃতিবিষয়ক দায়িত্বে নিয়োজিত অধ্যাপক অ্যালান বাডেলিয়ে। অন্যান্যের মধ্যে আছেন সরকারি আড়িপাতা কেন্দ্র জিসিএইচকিউর সাবেক পরিচালক, স্যার ব্রায়ান টোভি এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্র পরিচালক রবিন লাফ। স্মরণশক্তি প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার আগে, পূর্ববর্তী বারো মাস স্কুল শিক্ষার মাধ্যমে স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কৌশলের সঙ্গে পরিচয় করে দেয়ার জন্য হ্যানকক প্রকল্প গ্রহণ করেছেন।
হ্যানককের কৌশলটি ছাত্রদের শেখানো হবে, এ লক্ষ্যে স্কুলগুলো এর মধ্যেই তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে শুরু করেছে। তিনি বলেন এর মাধ্যমে শিশুরা যে কোনো কিছু স্মরণ করতে পারবে। এমনকি সম্পর্কহীন যে কোনো নামের তালিকাও।
শিশুদের প্রত্যেকেই মনে মনে সুন্দর গল্প তৈরি করে তার মাঝে স্মরণ রাখার মতো উপাদানগুলো মনের মধ্যে গেঁথে নেবে। নিজেদের কল্পনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিশুরা রঙের ব্যবহার, খেলাধুলা, কৌতুক এবং নানা অভিযানে অংশ নেবে। এভাবে তারা সব তথ্য গ্রহণ করার জন্য নিজেদের মস্তিষককে প্রস্তুত করে তুলতে পারবে।
একইভাবে তাদের স্মৃতির দক্ষতা নিজেদের স্মরণীয় ঘটনা, কবিতা ও নাটক লেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রভাব রাখবে এবং নিজেদের ধারণা প্রকাশের পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাস অর্জনে তাদের সক্ষম করে তুলবে।
২,৫১৪টি ডিজিটের অঙ্ক নির্ভুলভাবে মনে রাখতে পারার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছেন ডেনিয়েল টামেট। তিনি নিজেও হ্যানককের পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্মরণশক্তি এমনই এক মৌলিক দক্ষতা যা কল্পনাশক্তি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে প্রভাবিত হয় ও বৃদ্ধি পায়।
No comments:
Post a Comment