মিশতে শিখুন, ভালো থাকুন
অন্যদের সঙ্গে তেমনভাবে মিশতে পারেন না
আপনি? কেউ বাড়িতে এলে তার মুখোমুখি হতে বা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে লজ্জা
বা অস্বস্তি হয় আপনার? এই প্রশ্ন দুটোর উত্তর ‘না’ হলে বুঝতে হবে আপনি
সামাজিক মেলামেশায় দক্ষ। সহজেই মিশতে পারেন মানুষের সঙ্গে।
আর উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হলে বুঝতে হবে মিশতে শেখেননি আপনি। অন্যকে এড়িয়ে
চলতে গিয়ে প্রায়শই আপনাকে শিকার হতে হয় টেনশনের। হ্যাঁ, মানুষের সঙ্গে
মিশতে শেখাটাও জীবনের প্রয়োজনীয় একটা শিক্ষা। মানুষ ছাড়া মানুষের চলে না।
মানুষকে এড়িয়ে চলতে চাওয়া আসলে নিজেকে আরও একা করে দেয়া।আপনি অন্যকে এড়িয়ে চললে আপনাকেও এড়িয়ে চলতে চাইবে আপনার আশপাশের মানুষজন। আরও একা হয়ে যাবেন আপনি। ভুগবেন নিঃসঙ্গতায়। নিঃসঙ্গতা দূর হওয়া বলুন অথবা সবাই মিলে ভালো থাকার আনন্দ, সামাজিক মানুষ মেলামেশা করতে পারেন অনেক। ফাঁকা জীবন সত্যিই বড় যন্ত্রণার, টেনশনের। আজকের এই দ্রুতগতির জীবনে টেনশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে আপনাকে শিখতেই হবে সামাজিক হতে। শিখতে হবে মানুষের সঙ্গে মিশতে, আদান-প্রদান করতে। যত বেশি করে মিশতে শিখবেন আপনার দিগন্ত তত বড় হতে থাকবে। কমবে দুঃখযন্ত্রণার ভার, জীবন যাপনের গ্লানি। কমবে টেনশন।
অন্যের সঙ্গে মিশতে না পারলে ভুলেও ভাববেন না, আপনি নিঃসঙ্গতা ভালোবাসেন। কিছু কিছু সময় হয়তো নিঃসঙ্গ থাকা দরকার একজন মানুষের, সব সময় নয়। না জানলে শিখে নিন সামাজিক হবার কায়দাকানুন।
একবার মিশতে শিখলেই আর মানুষকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন না আপনি। আপনি মিশলে অন্য মানুষও আপনার সঙ্গে মিশবে। কমবে টেনশন। কমবে জীবনযন্ত্রণা। অন্য মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখা এক ধরনের সামাজিক দক্ষতা (Social Skill)। এরকম দক্ষতা অর্জন করা যায় সহজেই। আপনার শরীরের ভাষা হলো এই দক্ষতার একটা দিক। আর অন্য দিক সামাজিক আচার আচরণ।
সামাজিক হোন, ভালো থাকুন
- আপনার চলাফেরা হোক আপনার প্রসন্নতার ভাষা। পরিচিত মানুষকে দেখে হাসতে শিখুন। বলতে শিখুন ‘সালাম’, ‘নমস্কার’, ‘গুড মর্নিং’, ‘সুপ্রভাত’, ‘ভালো থাকুন’। অন্যের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় বা সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলতে শেখা সামাজিক দক্ষতার বড় একটা দিক। ভেবে দেখুন, বাইরে বেরিয়ে কেউ হাসিমুখে ‘সুপ্রভাত’ বলছে শুনলে কতটা ভালো লাগে আপনার, কত তাড়াতাড়ি কেটে যায় সব জড়তা। সহজেই আপনিও অন্য মানুষের মনে পৌঁছে দিতে পারেন এরকম ভালো লাগার বোধ।
- পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী, চেহারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জামাকাপড় পরুন। ‘সামাজিক পোশাক’ আর ‘ক্যাসুয়াল পোশাক’কে মিলিয়ে ফেলবেন না। আপনার পোশাক পুরোপুরি না হলেও আপনার অনেকটা পরিচয়। পোশাক ব্যবহারে সতর্ক হোন, সতর্ক হোন পোশাকের রং নির্বাচনে।
- আপনার চলাফেরা, আপনার আচরণ ব্যবহার, আপনার পোশাক পরিচ্ছদ-এসবই আপনার ব্যক্তিত্বের একেকটা অংশ। দৃঢ় অথচ প্রসন্ন, শক্ত অথচ মোলায়েম ব্যক্তিত্বের মানুষকে সবাই পছন্দ করে।
- অন্যের কথা শুনতে শিখুন মন নিয়ে। নিজের কথা বলতে শিখুন সংক্ষেপে গুছিয়ে। ভালো কথা বলতে পারা একটা শিল্প। এরকম শিল্পে দক্ষ হলে অন্যরা আপনাকে শুধু ভালোবাসবে না, সম্মানও করবে।
- শুধু নিজের কথা বলতে থাকা মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। অন্যের কথা গভীরভাবে শোনাও একটা শিল্প। এই শিল্পে রপ্ত হোন।
- অন্যের কথা শোনা আর নিজের কথা বলার মধ্যে কোনো মারামারি নেই। কথা বলা আর কথা শোনার সঠিক ছন্দ অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায়, কমায় মনের চাপ। কমায় টেনশন। এই ছন্দে অভ্যস্ত হতে শিখুন। একদিনে নয় ধীরে ধীরে।
- অন্যের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে শিখুন। সাহায্য করতে শিখুন প্রতিবেশীর বিপদে আপদে। সামাজিক হতে শেখা মানে শুধু অন্যের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে শেখা নয়, কঠিন সময়ে অন্যের পাশে দাঁড়াতে শেখা।
- প্রতিবেশীকে এড়িয়ে চলবেন না, প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখুন। যত এড়িয়ে চলবেন একা হয়ে যাবেন তত। একা হয়ে যাওয়া মানেই উদ্বেগ বাড়তে থাকা।
- সামাজিক অনুষ্ঠানে যান, সামাজিকতা রক্ষা করে চলতে শিখুন। যত সামাজিক হতে পারবেন তত কমবে টেনশন।
- বন্ধু বানাতে শিখুন। ভাবনাচিন্তা আর দৃষ্টিভঙ্গির মিল হলে শুধু সমবয়সীরা নন, আপনার চেয়ে ছোট আর বড়রাও আপনার খুব ভালো বন্ধু হতে পারে। বন্ধুদের সময় দিন, খোঁজখবর রাখুন। চাপের মুখে বন্ধুত্বের আশ্রয় সাহায্য করে অনেক।
- স্বার্থপর হবেন না। শুধু নিজের কথা ভাববেন না। সবার কথা ভাবুন। সবাই মিলে আনন্দে বাঁচতে শিখুন। যত কমবে আপনার স্বার্থপরতা আর আত্মকেন্দ্রিকতা, তত বেশি আনন্দে থাকবেন। বেশির ভাগ স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষ খুব বেশিমাত্রায় টেনশনে ভোগেন।
দৃঢ় হোন নিজেকে প্রমাণ করতে শিখুন
সামাজিক মেলামেশায় দক্ষ হতে আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে। দৃঢ় হোন, একজন মানুষ হিসেবে আপনার অধিকারগুলো রক্ষা করতে আপনাকেই হতে হবে দৃঢ়চেতা। অন্যের অধিকারে আঘাত না করেও ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে রক্ষা করা যায়। সামাজিক দক্ষতার মতো নিজের অধিকারের সুরক্ষার দক্ষতাও জরুরি। একদিক থেকে দেখলে এরকম দক্ষতা হলো নিজেকে প্রমাণ করতে শেখার দক্ষতা।
যা করবেনসামাজিক মেলামেশায় দক্ষ হতে আপনাকে অবশ্যই শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে। দৃঢ় হোন, একজন মানুষ হিসেবে আপনার অধিকারগুলো রক্ষা করতে আপনাকেই হতে হবে দৃঢ়চেতা। অন্যের অধিকারে আঘাত না করেও ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে রক্ষা করা যায়। সামাজিক দক্ষতার মতো নিজের অধিকারের সুরক্ষার দক্ষতাও জরুরি। একদিক থেকে দেখলে এরকম দক্ষতা হলো নিজেকে প্রমাণ করতে শেখার দক্ষতা।
(১) যখন দরকার তখন সাহায্য চাইতে শিখুন
(২) কেউ অন্যায় বা অন্যায় দাবি করলে ‘না’ বলতে শিখুন
(৩) কোনো বিষয়ে বুঝতে অসুবিধা হলে সরাসরি বলুন, আরও তথ্য চান
(৪) এতটুকু লজ্জা বা অস্বস্তিতে না পড়ে সৌজন্য দেখানোর মতো সৌজন্য পেতেও শিখুন
(৫) কোনো বিষয়ে আপনি বিরক্ত হলে বলতে শিখুন সরাসরি
(৬) কোনো বিষয় সহ্য করতে না পারলে সরাসরি বলুন
(৭) নিজের উদ্যোগে কথা বলতে শুরু করুন, কথা শেষ করুন নিজের ইচ্ছায়
(৮) আপনার সম্পর্কে অন্যের বিরূপ মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া মাথা ঠান্ডা রেখে শুনতে শিখুন, বিচার করতে শিখুন আপনার সম্পর্কে অন্যের প্রতিক্রিয়াকে।
যা করবেন না
(১) প্রয়োজনের সময় সাহায্য না চেয়ে চুপ করে থাকবেন না
(২) অন্যায় বা অন্যায় দাবির কাছে মাথা নোয়াবেন না
(৩) কোনো বিষয় বুঝতে না পারলেও চুপ করে থাকবেন না
(৪) সৌজন্য না পাওয়াকে মেনে নেবেন না
(৫) কোনো বিষয়ে বিরক্ত হলে তা না বলে চুপ করে থাকবেন না
(৬) কোনো ব্যাপার অসহ্য মনে হলে নীরব থাকবেন না
(৭) অন্যের ইচ্ছায় কথা বলবেন না, অন্যে চাইলেই বলতে থাকবেন না
(৮) আপনাকে নিয়ে অন্যের বিরূপ মন্তব্য শুনতে গিয়ে রেগে যাবেন না।
- নিজেকে তুলে ধরা বা প্রমাণ করার
- (Assertion) অর্থ আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলা নয়। শুধু দিতে নয় পেতে শিখুন। শুধু ‘হ্যাঁ’ নয় ‘নাও’ বলতে শিখুন।
- অন্যে যা চাইবে তাই দেবার আগে ভাবুন। আপনার পছন্দের মতো অপছন্দের বিষয়টাও অন্যকে সরাসরি জানিয়ে দিন। অন্যের জন্য ভাববেন, অন্যের ইচ্ছায় চালিত হবেন না। গঠনমূলক সমালোচনাকে এড়িয়ে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় শুনুন। নিজের ভুলগুলো শুধরে নিন।
- শুধু শুনে যাবেন না, বলতে শিখুন। শুধু সহ্য করে যাবেন না, কোনো ব্যাপারকে অসহনীয় মনে হলে সরাসরি বলুন। এ বিষয়ে বলতে দ্বিধা করা মানেই নিজের ওপর চাপ বাড়ানো।
- সামাজিক দক্ষতার নিয়মগুলোকে কাজে লাগান। কোনো মানুষকে নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে সরাসরি বলুন তাকে। ঠান্ডা মাথায় আস্তে আস্তে তাকে বুঝিয়ে দিন তার সম্পর্কে আপনার মতামত, সরাসরি। চিৎকার-চেঁচামেচি না করে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলুন। দোষারোপ করবেন না, বাড়িয়ে বলবেন না এতটুকু। যা মনে হচ্ছে আপনার, যা ভাবছেন আপনি ঠিক তাই বলুন। সবার সামনে নয়, আলাদা করে কথা বলুন। যখন তখন নয়, ভাবনাচিন্তা করে অবসর সময়ে পরিকল্পনা করে বসুন।
- বলা শেষ হলে ঠান্ডা মাথায় অন্য পক্ষের বক্তব্য শুনুন। বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন।
- কেউ আপনার সাহায্য চাইলে প্রয়োজনে অবশ্যই সাহায্য করবেন। তার মানে এই নয় যে কেউ আপনাকে ‘বোকা’ বা ‘দুর্বল’ ভেবে ঠকাতে চাইবে আর আপনি সব জেনে বুঝেও ঠকবেন।
- মানুষের উপকার করা বা মানুষকে সাহায্য করা মানে নিজেকে ঠকানো নয়।
- সিরিয়াস কথা সিরিয়াসভাবে বলুন। সিরিয়াস কথা বলতে বলতে ভুলেও হাসবেন না। হাসির কথায় হাসবেন, সিরিয়াস কথা বলবেন সিরিয়াস মুখে।
- নিজেকে প্রমাণ করতে শেখা আধুনিক মানুষের জরুরি একটা শিক্ষা। নিজেকে জাহির করতে যাবেন না। আপনি ঠিক যা তা অন্যকে বুঝিয়ে দিন সরাসরি। লজ্জায়, সংকোচে, অনুরোধে, উপরোধে ভুলেও এমন কাজ করবেন না যা করতে চাইছেন না আপনি। নিজেকে প্রকাশ করতে শিখুন।
সমস্যা : ফলওয়ালাকে বিশ্বাস করে আপেল কিনেছেন। বাড়িতে এসে দেখলেন আপেলগুলো খারাপ, খাওয়া যাবে না।
সমাধান : দ্বিধা নিয়ে বসে থাকবেন না। সোজা চলে যান ফলওয়ালার কাছে। উত্তেজিত হবেন না। আপেল ফেরত দিন। দাম ফেরত নিন।
সমস্যা : কাজের মধ্যে কেউ একজন বারবার বিরক্ত করছে আপনাকে। বিরক্ত হচ্ছেন আপনি, ক্ষতি হচ্ছে কাজটার। অথচ বলতে পারছেন না।
সমাধান : চুপ করে বসে থাকবেন না। সরাসরি বলুন ‘আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি। আপনি বরং পরে অন্য একদিন আসুন’।
সমস্যা : একবার ধার করে শোধ দেয়নি এক প্রতিবেশী। অনেক দিন বাদে সেই আবার ধার চাইতে এসেছে।
সমাধান : সরাসরি বলুন, ‘আমি আপনাকে এবার আর টাকা ধার দিতে পারছি না বলে দুঃখিত’।
সমস্যা : বাড়ির রান্নার লোক খাবারদাবার চুরি করছে বুঝতে পারছেন। হাতেনাতে ধরতে পারছেন না বলে বলতেও পারছেন না।
সমাধান : আগে ব্যাপারটায় নিশ্চিত হোন। এবার রান্নার লোককে বলুন, ‘জিনিসপত্র বড্ড বেশি খরচ হচ্ছে। একটু সাবধান হও। তা না হলে তোমাকে আর কাজে রাখা যাবে না’।
সমস্যা : কেউ আপনার সামনে পরনিন্দা পরচর্চা করছে। এরকম চর্চা ভালো লাগে না আপনার।
সমাধান : সরাসরি বলুন, ‘অন্যকে নিয়ে চর্চা করতে ভালোবাসি না আমি। আমরা বরং অন্য আলোচনা করি। আচ্ছা, স্কুলস্তর থেকে যৌনশিক্ষা চালু করার বিষয়ে আপনার কি মত?
সমস্যা : কোনো অপরিচিত বা স্বল্পপরিচিত মানুষ আপনাকে হঠাৎ করে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করছে। ব্যাপারটা পছন্দ নয় আপনার।
সমাধান : বলুন, আপনি অনুগ্রহ করে আমাকে ‘আপনি’ বলে ডাকলে আমি খুশি হব।
সমস্যা : হুটহাট আপনার বেডরুমে চলে আসছেন কোনো এক পড়শি।
সমাধান : সামনাসামনি নরম গলায় অথচ বলিষ্ঠ ভঙ্গিতে বলুন, ‘আমার বেডরুমে অন্য কারও আসা পছন্দ করি না আমি। আপনি কথাটা মনে রাখলে খুশি হব’।
সমস্যা : সময়ে-অসময়ে কেউ আপনার বাড়িতে চলে আসছে। বিরক্ত হচ্ছেন আপনি।
সমাধান : যিনি আসছেন তাকে বলুন ‘প্রয়োজন হলে আপনি বিকেলের দিকে আসবেন। আশা করি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা : পাড়ার ক্লাবের ছেলেরা এমন চাঁদা চাইছে যা দিতে গেলে আপনার ওপর চাপ পড়বে।
সমাধান : ছেলেদের ডেকে কথা বলুন। মাথা গরম করবেন না। বলুন ‘এত টাকা চাঁদা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনারা আমার কাছ থেকে কিছু টাকা চাঁদা পেতে পারেন’।
সমস্যা : আপনার খুব টাকার টানাটানি। আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠ কেউ কারও বিয়ের জন্য সাহায্য চাইতে এসেছে।
সমাধান : সহজভাবে বলুন ‘এই সময় টাকাটা দিতে পারলে আমার ভালো লাগত। কিন্তু আমার অসুবিধার জন্য এখন কিছু দিতে পারছি না। আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা : একজন পরিচিত মানুষ আগে আপনার কাছ থেকে একটা বই পড়তে নিয়ে ফেরত দেয়নি। ঐ মানুষটা আবার অন্য একটা বই চাইতে এসেছে।
সমাধান : সরাসরি বলুন, ‘বইটা দিতে পারছি না বলে আমি দুঃখিত। আপনি আমার ...বইটি ফেরত দিয়ে গেলে খুশি হব’।
সমস্যা : কেউ এমন একটা প্রশ্ন করছে যা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। বিব্রত হচ্ছেন আপনি।
সমাধান : চুপ করে থাকবেন না। বলুন ‘আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। এরকম প্রশ্ন করা আমি পছন্দ করি না’।
সমস্যা : কারও ব্যবহার আপনাকে বিরক্ত করছে?
সমাধান : সরাসরি বলুন, ‘তোমার এরকম ব্যবহারে আমি বিরক্তবোধ করছি। আশা করি এবার থেকে ব্যাপারটা তুমি মাথায় রাখবে’।
সমস্যা : পাশে বসা সহযাত্রীর ধূমপানে আপনার কষ্ট হচ্ছে। অথচ বলতে পারছেন না।
সমাধান : সংকোচ ঝেড়ে ফেলুন। পরিষ্কারভাবে বলুন ‘আপনার ধূমপানে আমার কষ্ট হচ্ছে। আপনি অনুগ্রহ করে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে ধূমপান সেরে আসুন’।
সমস্যা : একজন মানুষ একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছেন। শুনতে চাইছেন না আপনি, অথচ পারছেন না উঠতে।
সমাধান : উঠে দাঁড়ান। বলুন ‘আমাকে একটু যেতে হবে। আশা করি আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না’।
সমস্যা : কোনো একটা বিষয়ে আপনি অসহায়বোধ করছেন। অথচ পারছেন না লজ্জায় অন্যের সাহায্য চাইতে। কষ্ট হচ্ছে আপনার।
সমাধান : ভাবুন, কে সবচেয়ে ভালো সাহায্য করতে পারেন আপনার সমস্যায়। তার কাছে যান বা টেলিফোন করুন। বলুন, ‘আপনার সাহায্য আমার দরকার। আপনি আমাকে সাহায্য করলে কৃতজ্ঞ থাকব’।
সমস্যা : বন্ধুর সঙ্গে মনোমালিন্য দিন দিন বাড়ছে। একে অন্যকে এড়িয়ে চলছেন।
সমাধান : নিজে উদ্যোগ নিন, দুজন একসঙ্গে বসুন। ঠান্ডা মাথায় আগে বন্ধুর বক্তব্য শুনুন মন দিয়ে। এবার নিজের বক্তব্য গুছিয়ে বলুন। রাগারাগি বা উত্তেজনা এড়িয়ে চলুন। আলোচনার পর বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিন। অনেক ভুল বোঝাবুঝি এভাবে মিটে যায় সহজেই। অনেক সময় অবশ্য বাস্তবতার প্রয়োজনে সম্পর্ক শেষ করে দেয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ভাবনাচিন্তা করে, কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নিন। আবেগচালিত হয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না।
মিশতে শিখুন ভালো থাকুন
- সোজা হয়ে হাঁটুন, সামনে তাকিয়ে চলুন। আপনার হাঁটাচলার মধ্যে ধরা পড়ে আপনার ব্যক্তিত্ব, আত্মবিশ্বাস আর মানসিক অবস্থা।
- চোখমুখ কুঁচকে, মাটির দিকে তাকিয়ে চলবেন না। চলাফেরা করুন প্রসন্ন মুখে, মনটাকে খোলা রেখে। আপনার মুখচোখে উদ্বেগের চিহ্ন থাকলে মুছে ফেলুন।
- সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে শিখুন।
- সহজসরলভাবে আস্তে আস্তে পরিষ্কারভাবে কথা বলুন। যেখানে জোর দেয়া দরকার সেখানে জোর দিতে শিখুন। অকারণে চিৎকার করে কথা বলবেন না।
- যখন তখন কথা বলতে বলতে অন্যদের গায়ে হাত দিতে যাবেন না। এরকম অভ্যাস থাকলে বেরিয়ে আসুন এই বদভ্যাস থেকে। অন্যের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিতে শিখুন। স্পর্শ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ একটা মাধ্যম। সঠিক পরিস্থিতিতে আপনার স্পর্শ অন্যকে পৌঁছে দেবে সহমর্মিতা, উত্তাপ আর বন্ধুত্বের বার্তা।
- অন্যের সঙ্গে মিশতে গিয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়তে চাইবেন না। এরকম গায়ে পড়া স্বভাব মানুষকে সংগত কারণে অন্যরা এড়িয়ে চলতে চায়।
- টেনশনে ভুগতে থাকা মানুষ অন্যের কাছাকাছি পৌঁছতে চান না। উল্টোদিকে গায়ে পড়া স্বভাবের মানুষ দুম করে হাত দিয়ে ফেলে অন্যের ব্যক্তিগত জায়গাটায়।
- এই দুয়ের মাঝামাঝি, সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রাখতে শিখুন। এরকম দূরত্ব বজায় রাখতে জানলে অন্যরা সহজেই আপনার কাছাকছি চলে আসবে।
সম্পর্ক সুস্থ আর স্বচ্ছ রাখুন
- সমস্যা দেখা দিলে এড়িয়ে যাবেন না। সরাসরি কথা বলুন।
- যা পারবেন না বা করবেন না সরাসরি বলুন, ঝুলিয়ে রাখবেন না।
- কোনো ব্যবহারে আহত হলে সরাসরি জানিয়ে দিন।
- রাগ বা বিরক্তি বেশি চেপে রাখতে যাবেন না। জমতে জমতে একটা সময় আপনি ফেটে পড়বেন। সম্পর্কটা নষ্ট হবে।
- রাগ গোপন করে হাসতে যাবেন না।
- যা মানতে পারছেন না বলুন সরাসরি। মনের ওপর চাপ বাড়িয়ে একটানা কোনো কিছুকে মেনে নিতে যাবেন না।
- নিজে শক্ত হোন। অন্যের অন্যায় আবদারের কাছে মাথা নোয়াতে গিয়ে খুইয়ে ফেলবেন না আত্মমর্যাদাবোধ। সামাজিক হোন। সামাজিকতার নামে অন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে নিজের ওপর
চাপ বাড়াবেন না।
- অতিরিক্ত ভদ্রতা ক্ষতিকর। ‘ বেশি ভদ্র’ হতে গিয়ে নিজের টেনশন বাড়াবেন না।
- নিজেকে সামাজিক বানাতে গিয়ে ভুলেও নিজেকে অপমান করতে যাবেন না। নিজের অধিকার বুঝে নিন। অন্যের অধিকারকে মর্যাদা দিন।
- অন্যকে বুঝিয়ে দিন কোনটা আপনি পছন্দ করেন, কোনটা করেন না। সব সময় লজ্জায় বা দ্বিধায় চুপ করে থাকা আসলে নিজেকে অপমান করা।
- আপনার ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে সুরক্ষিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে আপনাকেই। শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে, নিজেকে প্রমাণ করতে। এটা না পারলে অন্যের অন্যায় দাবি বা আবদার মেটাতে বাধ্য হবেন আপনি। ‘না’ বলতে পারবেন না কিছুতেই। এতে আপনার মনের ওপর চাপ বাড়বেই। বাড়বে টেনশন।
- রাগ বা বিরক্তির মতো অনুভূতি বেশি চেপে রাখতে যাবেন না। সরাসরি বলুন, ‘এটা আমার ভালো লাগছে না’ বা ‘আমার এতে বিরক্ত লাগছে’। মনের ওপর চাপ কমবে, কমবে টেনশন।
- জীবনে ঝামেলা থাকবেই। ঝামেলা এড়িয়ে যেতে গিয়ে নিজেকে অন্যের চোখে হাস্যাস্পদ করে তুলবেন না। সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলে অন্যদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ বাড়বে না, কমবে। যোগাযোগ কমতে থাকলে মনের ওপর চাপ তো বাড়বেই। প্রয়োজন হলেই ঝামেলার মুখোমুখি হতে শিখুন সরাসরি। ভাবনাচিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিন। মনের ওপর চাপ কমান।
No comments:
Post a Comment