Wednesday, December 26, 2012

শীতে বাড়ে নিউমোনিয়া

শীতে বাড়ে নিউমোনিয়াবাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ যথাসময়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। নিউমোনিয়া শুধু শিশুদের নয়, বড়দেরও হয়। প্রাণঘাতী এই রোগটি শুরু হয় সর্দি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি সামান্য অসুখ থেকেই। পরামর্শ দিয়েছেন আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ও কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতি, লিখেছেন ডা. ফারহানা পারভীন ফ্লোরা
নিউমোনিয়া শ্বাসনালি ও ফুসফুসের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশনজনিত অসুখ। সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো অসুখবিসুখ থেকে ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়া হয়। শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বড়দেরও নিউমোনিয়া হতে পারে।

কিভাবে নিউমোনিয়া হয়?
শ্বাসনালি ও ফুসফুসে প্রদাহ হলেই কিন্তু নিউমোনিয়া হয় না। যখন এই প্রদাহ হয় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, পরজীবী ইত্যাদি দিয়ে, তখন নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় শুধু এক ধরনের জীবাণু থেকেই যে অসুখটি হয় তা নয়। যেমন_প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত হওয়ার পর রোগী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আবার সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
অনেক সময় শ্বাসনালিতে খাদ্য বা খাদ্যকণা ঢুকে গিয়ে সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়া হতে পারে। এ জন্য সব সময় লক্ষ রাখা দরকার, খাদ্য যেন শ্বাসনালিতে না যায়। কোনো কিছু খাওয়ার সময় কথা বলতে থাকলে সাধারণত এ ধরনের সমস্যা হয়। শিশুদের শুইয়ে খাওয়ানোর ফলে খাদ্য শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়ে নিউমোনিয়া হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিচের কারণগুলোর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
* অপরিণত বয়সে জন্মগ্রহণ করা শিশু। সাধারণত এরা প্রিম্যাচিওর বেবি নামে পরিচিত। মাতৃগর্ভে পূর্ণকাল থাকার আগেই যেসব শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, সেটিই এ ধরনের শিশু।
* অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু।
* যেসব পরিবারে বড়রা ধূমপান করে সেসব পরিবারের শিশুরাও ধূমপায়ীদের মতো সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
* যারা নোংরা পরিবেশে বসবাস করে। যেমন_ধুলাবালিযুক্ত বা স্যাঁতসেঁতে
স্থান এবং যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নেই।

* যাদের অ্যাজমা আছে। অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুর নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
* যেসব শিশুর জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে ত্রুটি আছে।
* যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
* খুব ঘনবসতি_এমন স্থানে যারা বসবাস করে।

নিউমোনিয়ার লক্ষণ
কাশি : শুকনো কাশি হতে পারে আবার কাশির সঙ্গে প্রচুর কফও যেতে পারে। যদি কফ থাকে, তবে তা সাধারণত হলদেটে হয়।
জ্বর : শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়ে তীব্র জ্বর হতে পারে। অনেক সময় তাপমাত্রা আবার বেশি হয় না। সাধারণ জ্বরের মতোই হয়।
* আক্রান্ত ব্যক্তি বা শিশুর খাবারে তীব্র অরুচি হয়।
* শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
* শিশুদের ক্ষেত্রে ঠোঁট নীলাভ হয়ে যায়।অনেক সময় হাত-পায়ের নখও নীলচে হয়ে যায়।
* অনেক সময় বুকে ব্যথা হয়।

শিশুর শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায়
বড়দের শ্বাসকষ্ট হলে তা সহজেই বোঝাতে পারে; কিন্তু শিশুর ক্ষেত্রে অভিভাবককেই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়। নিচের লক্ষণগুলো শিশুর মধ্যে থাকলে ধরে নেওয়া যায়, শিশুটি শ্বাসকষ্টে ভুগছে।
* নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাকের পাটা ফুলে উঠলে।
* প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের চামড়া পাঁজরের হাড়ের ভেতর ঢুকে যায়।
* শ্বাসের সময় বাঁশির মতো শব্দ হয়।
* শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া। যেমন_দুই মাসের কম বয়সী বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৬০ বা তার বেশি বার শ্বাস নেওয়া। দুই থেকে ছয় মাস বয়সী বাচ্চার ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার মিনিটে ৫০ বা তার বেশি হওয়া। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ৪০ বা তার বেশি বার হওয়া।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
নিউমোনিয়া সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য অনেক ধরনের পরীক্ষা লাগতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে বুকের এঙ্-রে এবং কফের কালচার করা হয়।

যখন হাসপাতালে যেতে হবে
* শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অত্যধিক বেড়ে গেলে।
* শিশু খেতে না পারলে। এমনকি বুকের দুধও টেনে না খেতে পারলে।
* ঠোঁট বা নখ নীলচে হয়ে গেলে।
* শরীরের চামড়া কুঁচকে গেলে অর্থাৎ পানিশূন্যতা দেখা দিলে।
* নিঃশ্বাসের সময় পাঁজর অত্যধিক দেবে গেলে।
* তিন মাস বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের শ্বাসকষ্টের সঙ্গে জ্বর থাকলে।
* শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো শব্দ হলে।
* কাশির সঙ্গে জ্বর থাকলে।
* কানে ব্যথা বা কানে ইনফেকশন দেখা দিলে।
* শিশুর ডায়রিয়া বা বমি হলে।

নিউমোনিয়ার প্রতিকার
* নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক নেওয়াই নিউমোনিয়া প্রতিকারের উপায়। আগামী জানুয়ারি থেকে সরকারি পর্যায়েই নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। সব শিশুকে টিকা দিতে হবে।
* শীতকালে শিশুকে সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখা।
* অপরিষ্কার থাকলে ফুসফুসের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বিশেষ করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* একই পাত্রে ভাগাভাগি করে শিশুদের খাবার, একই গ্লাসে পানীয় দেওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

চিকিৎসা
* প্রাথমিক পর্যায়ে সর্দি-কাশি হলে তা যাতে আর না বাড়ে সে জন্য গরম চা, আদার রস, তুলসীর রস সেবন করা যেতে পারে।
* শিশুর নাক বন্ধ হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করতে হবে। এ জন্য নেবুলাইজেশন করার প্রয়োজন হতে পারে।
* ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। তবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া হলে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...