পড়াশোনার কার্যকর পদ্ধতি SQ3R
S = Survey বা জরিপQ = Question বা প্রশ্ন
R = Read বা পড়া
R = Recite আবৃত্তি করা
R = Review পুনরায় পড়া
SQ3R পদ্ধতিটি একজন ছাত্রকে ১. সে কী শিখবে, ২. কীভাবে পড়ার বিষয়বস্তু দ্রুত ও সহজে বুঝবে, ৩. কোনটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে তা মুখস্থ করবে, ৪. পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কীভাবে বারবার রিভিশন করবে তা শেখাবে
Survey বা জরিপ
যে কোনো বিষয় ভালোভাবে বুঝতে বা মুখস্থ করতে হলে প্রথমে বিষয়টি সম্পর্কে একটি সামগ্রিক বা প্রাথমিক মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার। এ জন্য বিস্তারিত পড়ার আগেই শিরোনাম, উপশিরোনামগুলো দেখে নিতে হবে। এ পর্যায়ে যদি কোনো ছবি বা কার্টুন চোখে পড়ে তবে তার ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা করতে হবে। পাঠ্য বিষয়টির সাথে যদি কোনো সারমর্ম বা মূল বক্তব্য থাকে তবে তা বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করার আগেই জেনে নিতে হবে। কোনো অধ্যায়ের শেষে অধ্যায়টির সারসংক্ষেপ দেয়া থাকলে তাও পড়ে ফেলুন। একইভাবে কোনো বইয়ের একটি বিশেষ অধ্যায় পড়তে শুরু হলে এর শুরুর এবং শেষের প্যারাটি পড়ুন। কোনো ডায়াগ্রাম, সারণি থাকলে তাতে খুব ভালো করে চোখ রাখুন। এ পর্যায়টি খুব দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত হওয়া আবশ্যক। এর সময় বড়জোর দু’তিন মিনিট হতে পারে।
Question বা প্রশ্ন
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ যে কোনো একটি বিষয়ের প্রতি একটানা মনোনিবেশ করতে পারে মাত্র ২০ সেকেন্ড হতে ৩০ সেকেন্ড। যদি সে বিষয়টিতে আগ্রহোদ্দীপক কিছু খুঁজে না পায় বা বিষয়টি বুঝতে দুরূহ হয়। এ সমস্যার সমাধান করা যায় প্রশ্ন তৈরির মাধ্যমে। মনোযোগ বাড়ানোর জন্য এই ধাপে পাঠ্য বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক প্রশ্ন গঠন করা হয়। এটা ব্যক্তির মধ্যে বিষয়বস্তুটির বোঝা ও এর সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ায়। ফলে শিক্ষার্থীরা বিষয়টিতে আরো বেশি করে মনোযোগ সন্নিবিষ্ট করতে পারে।
Read বা পড়া
যে কোনো একটি বিষয় শুধু একবার পড়তে হবে। পরবর্তী বিষয়ে পড়তে যাওয়ার আগেই নিচের ধাপে যেতে হবে। একবার মাত্র পড়ার সময় পূর্ববর্তী ধাপে যে প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছিল পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে তার উত্তর খজে বের করতে হবে।
Recite বা আবৃত্তি করা
পূর্ববর্তী ধাপে একবার মাত্র বিষয়টি পড়ার পর দ্বিতীয় ধাপে প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছিলো তার উত্তর বা নোট বন্ধ করে মনে মনে স্মরণ করার চেষ্টা করতে হবে। এটা মনে করা যেতে পারে অথবা কাগজে লিখে ফেলা যেতে পারে। যদি দেখা যায় মনে করা যাচ্ছে না তবে আবার বই বা নোট খুলে দ্রুত পড়ে নিয়ে উত্তরটা খুঁজতে হবে। ছোট ছোট প্রশ্নোত্তর লিখে লিখে এভাবে পড়ার এই পদ্ধতিটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একবার বিষয়বস্তুটি সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ব হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তী বিষয়ে প্রশ্ন গঠন করে সামনের দিকে এগুতে হবে। পরবর্তী বিষয় পড়ার সময় আগের ধাপগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে হবে এবং এভাবে পুরো অধ্যায়টি পড়তে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা রপ্ত করা সম্ভব না হচ্ছে।
Review বা পুনরায় পড়া
পুরো অধ্যায়টি ভালোভাবে রপ্ত হওয়ার পর নিয়মিতভাবে বিষয়বস্তুটির চর্চা রাখতে হবে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত, যাতে তা স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে না যায়। এই রিভিউর চর্চাটি আবার করা যেতে পারে প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে।
প্রথম দিন:
পুরো অধ্যায়টি পড়া এবং রিসাইটের পর যেসব পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সে বিষয়গুলো আন্ডার লাইন বা চিহ্নিত করে মার্জিনে সে প্রসঙ্গে প্রশ্নসমূহ তৈরি করে লিখতে হবে।
দ্বিতীয় দিন:
আগে পঠিত এবং টেক্সট বই ও নোট বইয়ের সহায়তায় চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহ পুনরায় দেখতে হবে এবং মনে করার চেষ্টা করতে হবে। টেক্সট বই, নোট বই বা নিজে থেকে লিখিত বিষয়ের ডান পাশের কলামগুলো আড়াল করে বাম পাশের মার্জিনে লেখা প্রশ্নগুলো থেকে নিজেকে প্রশ্ন করুন। তারপর উত্তরগুলো মৌখিকভাবে উচ্চারণ করুন বা লিখুন।
তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম দিন:
যেসব প্রশ্ন ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে মৌখিক এবং লিখিতভাবে নিজেকে প্রশ্ন করুন এবং পরীক্ষা করুন।
সপ্তাহ শেষে:
সপ্তাহ শেষে টেক্সট এবং নোট ব্যবহার করে একটি নির্ধারিত অধ্যায় পড়ে আপনি যা জেনেছেন তার টপিক এবং সাব টপিকসমূহের একটি টেবিল বা লিস্ট তৈরি করুন এবং এ লিস্ট থেকে একটি স্টাডি শীট তৈরি করুন। অতঃপর স্টাডি শীটে আপনার নিজের ভাষায় যেভাবে বিষয়গুলো লিখেছেন সেভাবেই তা মৌখিকভাবে পাঠ করুন বা আবৃত্তি করুন। SQ3R পদ্ধতির ধাপগুলো মোটামুটি এই। আপনি যদি এর আগে কখনো এ পদ্ধতিতে পড়াশোনা করার চেষ্টা না করে থাকেন তবে এখন তা একবার করে দেখুন। কোনো কিছু পড়ার সময় আপনার বাস্তব জীবন বা অভিজ্ঞতার সাথে ঘটনাকে মিলানোর চেষ্টা করুন। প্রশ্নোত্তর হুবহু পাঠ্য বইয়ের ভাষায় বা গাইডের ভাষায় না লিখে নিজের ভাষায় বুঝে লেখার চেষ্টা করুন। না বুঝে মুখস্থ না করে বুঝে মনে রেখে পড়ুন। দেখবেন আপনার চিন্তাশক্তি ও ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
1 comment:
very scientific method.
Post a Comment