Monday, July 23, 2012

সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে ভালো করার নিয়ম

 এসএসসি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী দিনে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক অভিভাবকদের করণীয় কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করব।
 
শ্রেণীর পাঠে মনোযোগী হওয়াn
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সঠিক প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন শ্রেণীর পাঠে মনোযোগী হওয়া খুবই জরুরি। কারণ, শিক্ষকেরা বোর্ডের নির্ধারিত মূল পাঠ্যবই অবলম্বনেই শ্রেণীতে প্রতিদিন পাঠ দিয়ে থাকেন। আর ওই পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু অবলম্বনেই সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণীত হয়ে থাকে। একজন শিক্ষার্থী কখনো অমনোযোগী হয়ে পড়লে বা শ্রেণীতে অনুপস্থিত থাকলে পাঠ্যবইয়ের সেই অংশ তার অজানা থেকে যেতে পারে কিংবা পরে নিজে পড়তে গিয়ে তা কঠিন কিংবা দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। সেজন্য শ্রেণী পাঠে (ছবি-) উপস্থিত থেকে মনোযোগী হতে হবে।
 
মেধা কাজে লাগানোn
শ্রেণীর পাঠে মনোযোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রেণীতে আলোচিত বা উপস্থাপিত পাঠ্যবইয়ের তথ্য, তত্ত্ব, বিধি, সূত্র, নীতি বা পদ্ধতি মুখস্থ করার পরিবর্তে অবশ্যই তা বুঝে নিতে হবে এবং নিজে নিজে করার বা ব্যবহার নিজের আয়ত্তে নিতে হবে। এর জন্য দরকার পঠিতব্য বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা। একটি সমগ্রকের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কার্যকরণ সম্পর্ক জানতে শিক্ষার্থীকে অগ্রসর হতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে অন্য কারও প্রস্তুত করা বা রেডিমেট উত্তর গ্রহণ না করে নিজের সৃজনশীলতার প্রতি আস্থা গড়ে তুলতে হবে।
 
শ্রেণীর পাঠ চলাকালে বা পাঠ শেষে শিক্ষককে প্রশ্ন করাn
যখনই শিক্ষার্থী শ্রেণীর পাঠে মনোযোগী হবে এবং শ্রেণীতে উপস্থাপিত বা আলেচিত তত্ত্ব, বিধি, পদ্ধতি কিংবা সূত্র নিয়ে শিক্ষার্থী চিন্তা করবে কিংবা নিজে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে চাইবে তখনই তার মনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় হবে। এরূপ প্রশ্নের কোনো কোনোটির উত্তর শিক্ষক বা সহপাঠীদের প্রশ্নোত্তর থেকে পাওয়া যাবে। যে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না, তা নিজে নিজে উদ্যোগী হয়ে যখনই প্রশ্ন করার অবকাশ মিলবে, তখনই আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি সৃজনশীল প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তরদানে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য কী, কোথায় কাকে বলে; এমন প্রশ্ন করার চেয়ে কেন, কীভাবে ঘটে, তা জানার প্রতি অবশ্যই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর বাইরেও কোনো প্রস্তাব গ্রহণ কিংবা বর্জনের পক্ষে বা বিপক্ষে যৌক্তিক মতামত দানে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
 
পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশের প্রশ্ন শিক্ষা বোর্ডের বিগত বছরগুলোর প্রশ্নের প্রতি গুরুত্ব প্রদানn
এর অর্থ এই নয় যে ওই সব প্রশ্ন থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পাওয়া যাবে। কোনো সৃজনশীল প্রশ্ন একবারের বেশি পরীক্ষায় ব্যবহার করা হবে না বা পরীক্ষায় আসবে না। তবে বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিংবা পাঠ্যবইয়ের অনুশীলনী অংশের প্রশ্নের আঙ্গিকে বা কাঠামোতে নতুন নতুন প্রশ্ন রচিত হবে।
সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা বা অভিজ্ঞতা লাভের জন্য এটা করা যেতে পারে।
 
বইয়ের কোনো অধ্যায় বা অনুচ্ছেদকে গুরুত্বহীন মনে না করাn
সৃজনশীল প্রশ্ন সাধারণভাবে পাঠ্যবইয়ের সব অংশজুড়ে করা হয়। তাতে একই অধ্যায় বা অনুচ্ছেদ বা পাঠ্যবস্তু থেকে বছর প্রশ্ন করা হলে পরের বছর প্রশ্ন হবে না, এমন ভাবা যাবে না কিংবা মোটেও সঠিক হবে না।
 
পাঠ্যবইয়ের বাইরেও সহায়ক বই পড়ার অভ্যাস গঠনn
পাঠ্য বইয়ের (ছবি-) বাইরেও সহায়ক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই জরুরি। কেননা সৃজনশীল প্রশ্নের অংশে কোনো বাস্তব ঘটনা বা নতুন পরিস্থিতিতে পাঠ্যবইয়ের কোন নিয়ম, বিধি, সূত্র, পদ্ধতি কিংবা ভাবাদর্শের মিল, গরমিল, প্রয়োগ বা অভিযোজন ইত্যাদি দেখানো হয়।
সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক অভিভাবকদের করণীয় কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করব। আজ থাকছে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নমুনা উত্তর।
নিচে দুটি কবিতাংশ দিয়ে রচিত সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক এবং প্রশ্ন দৃষ্টান্ত হিসেবে ব্যবহার করে সহায়ক বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা যায়: সৃজনশীল প্রশ্নের উদ্দীপক বা দৃশ্যকল্প
অদূরে বিল থেকে পানকৌড়ি, মাছরাঙা, বক,
পাখায় জলের ফোঁটা ফেলে দিয়ে উড়ে যায় দূরে,
জনপদে কি অধীর কোলাহল মায়াবী নদী
এনেছে স্রোতের মত, আমি তার খুঁজি নি কিছুই।

কাননের পথে লহর খেলিছে অবিরাম জলধারা
তারি স্রোতে আজি শুকনো পাতারা ছুটিয়াছে ঘরছাড়া।
হিজলের বন ফুলের আখরে লিখিয়া রঙিন চিঠি
নিরালা বাদলে ভাসায়ে দিয়েছে না জানি সে কোন দিঠি।
ওপরের দৃশ্যকল্প অবলম্বনে দুটি প্রশ্ন দেখে নাও
. প্রশ্নটি হতে পারে: উদ্দীপকের কবিতাংশ দুটির কবিদ্বয়ের ভাবনার মধ্যে কীরূপ মিল খুঁজে পাও তা ব্যাখ্যা করো।
. প্রশ্নটি হতে পারে: কবি হূদয়ের অনুভূতি প্রকাশের দিক থেকে দ্বিতীয় কবিতাংশের সঙ্গে প্রথম কবিতাংশের স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করো।
উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশ নবম-দশম শ্রেণীর মাধ্যমিকবাংলা সংকলন কবিতানামের পাঠ্যবইয়ের অন্তর্গত আল মাহমুদেরতিতাসকবিতার অংশ। আর দ্বিতীয় কবিতাংশ জসীমউদ্দীনের রচিতপল্লীবর্ষাকবিতা থেকে উদ্ধৃত। প্রথম কবিতাংশ শিক্ষার্থীদের পরিচিত কিন্তু দ্বিতীয় কবিতাংশ অনেক শিক্ষার্থীর অপরিচিত। অবস্থায় যে শিক্ষার্থী উভয় কবিতাংশের সঙ্গে পরিচিত, সে অন্য অপরিচিতদের তুলনায় সহজে দুটি কবিতাংশের কবিদ্বয়ের ভাবনা কিংবা অনুভূতির মিল গরমিল শনাক্ত করতে পারবে। বাংলা বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেওয়ার জন্য পাঠ্যবই ছাড়াও দেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলি শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে পাঠের অভ্যাস গড়ে নিতে পারে। অন্যান্য বিষয়ের জন্য এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট পত্রপত্রিকা, সাময়িকী, বিশেষ ক্রোড়পত্র, রেফারেন্স বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।
উদ্দীপকের সঙ্গে প্রশ্নের যোগসূত্র খুঁজে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দান: সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে উদ্দীপক একটা প্রধান চালিকা শক্তি। বিশেষ করে প্রশ্নের উত্তর উদ্দীপকের সাহায্য ছাড়া লেখা যায় না। নিচের উদ্দীপক সৃজনশীল প্রশ্নের অংশ লক্ষ করলে এর বাস্তবতা সঠিকভাবে বোঝা যাবে।

সৃজনশীল প্রশ্নসামাজিকবিজ্ঞান (নবম-দশম শ্রেণীর পৌরনীতি অংশ): শাফিউল তার প্রতিবেশী রাফিউল একটি হাউজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাশাপাশি দুটি প্লট ক্রয় করে। কোম্পানির প্রতিনিধি তাদের দুজনের উপস্থিতিতে দুটি প্লটের মাঝখানের সীমানা চিহ্নিত করে খুঁটি স্থাপন করে। কিছুদিন পর রাফিউল শাফিউলকে না জানিয়ে ওই খুঁটি সরিয়ে নিজের প্লটের আয়তন বৃদ্ধি করে। খবর শুনে শাফিউল প্রথমে সরেজমিনে গিয়ে যাচাই করে এবং সত্যতা খুঁজে পায়। এরপর সে রাফিউলের কাছে বিনয়ের সঙ্গে এর কারণ জানতে চায়। তাতে রাফিউল কর্ণপাত না করে বিরক্তি প্রকাশ করে। অবস্থায় আর কোনো কথা না বাড়িয়ে শাফিউল ধৈর্যধারণ করে এবং পরে আইনের আশ্রয় নিয়ে সুবিচার পায়।
. অধ্যাপক লাস্কির নাগরিকের সংজ্ঞা কী?
. নাগরিকতা লাভের জন্মস্থান নীতি বর্ণনা করো।
. রাফিউলের আচরণে নাগরিকের কোন অধিকার খর্ব হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
. নাগরিক হিসেবে শাফিউলের আচরণ মূল্যায়ন করো।
ওপরের সৃজনশীল প্রশ্নের অংশের উত্তর লিখতে উদ্দীপকের সাহায্য নিতে হবে না সত্য কিন্তু অংশের উত্তর খুঁজে পেতে হলে অবশ্যই উদ্দীপক অংশে যেতে হবে।
অংশের উত্তরের জন্য উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে রাফিউল নিজের প্লটের সীমানার খুঁটি সরিয়ে প্রতিবেশীর কিছু সম্পত্তি নিজের দখলে নেয়। কাজটি অন্যের সম্পত্তি জবরদখলের শামিল। পাঠ্যবইয়ে বর্ণিত আছে সম্পত্তির অধিকার নাগরিকের সামাজিক অধিকারের অংশ। অর্থে রাফিউলের আচরণ নাগরিকের সামাজিক অধিকার খর্ব করেছে। সামাজিক অধিকার খর্ব করা অমানবিক কাজও বটে। কেউ কারও সামাজিক অধিকার বিনষ্ট বা খর্ব করলে মানবিক গুণ বাধাগ্রস্ত হয়ে সমাজে ঝগড়া বিবাদ লেগে যেতে পারে। তাতে সামাজিক শান্তি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
. অংশের উত্তর:
শাফিউলের আচরণে আমরা কয়েকটি দিক খুঁজে পাই। যেমন:
. তার সম্পত্তি রাফিউল জবরদখল করেছে, এমন খবরে সে উত্তেজিত না হয়ে প্রথমে এর সত্যতা যাচাই করে। তার এরূপ আচরণের মধ্যে আমরা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় খুঁজে পাই।
. তার সম্পত্তি অন্যে জবরদখল করেছে এটা নিশ্চিত হওয়ার পরও শান্তভাবে অভিযুক্তের কাছে ঘটনার কারণ জানতে চায়। তাতে অভিযুক্ত বিরক্তি প্রকাশ করলে সে শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত হতে পারে এমন ভাবনা থেকে আপাতত ধৈর্য ধারণ করে। এখানে আমরা শাফিউলের মধ্যে আত্মসংযমের পরিচয় পাই।
. প্রতিবেশীর অসহিষ্ণু আচরণ, জমি জবরদখল থেকে উদ্ধারের জন্য শাফিউল সংঘাতের পথে না গিয়ে কল্যাণের পথ অর্থাৎ আইনের আশ্রয় নিয়েছে। এটা তার বিবেকবোধ থেকে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলা যায়।
ওপরের আলোচনা থেকে আমরা শাফিউলের আচরণে তিনটি প্রধান গুণ খুঁজে পেলাম। গুণগুলো হচ্ছে যথাক্রমে বুদ্ধিমত্তা, আত্মসংযম বিবেক। লর্ড ব্রাউসের মতে, এই তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে সুনাগরিক বলা হয়। সুতরাং আমরা শাফিউলের আচরণিক দিকগুলো বিবেচনা করে তাকে সুনাগরিক বলতে পারি।
সৃজনশীল প্রশ্নের প্রতিটি অংশের জন্য পৃথক পৃথক উত্তর দান:
#
সৃজনশীল প্রশ্নের ৪টি অংশের (হিসাববিজ্ঞান, গণিত ব্যতীত) উত্তর , , এবং দিয়ে আলাদাভাবে লিখতে হবে।
#
সৃজনশীল প্রশ্নের প্রতিটি অংশের জন্য বরাদ্দকৃত নম্বর বিবেচনায় রেখে প্রশ্নের উত্তরের আঙ্গিক কলেবর নির্ধারণ করা:
সৃজনশীল প্রশ্নের অংশের জন্য নম্বর হচ্ছে ১। এর জন্য একটি বাক্যে প্রশ্নের উত্তর লেখা যায়। অংশের জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকায় উত্তরের ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের তত্ত্ব, তথ্য কিংবা কোনো বৈশিষ্ট্য বিশদভাবে লিখতে হয়। অংশে কোনো বিধি, নিয়ম, সূত্র, পদ্ধতি প্রবণতা চিহ্নিত করতে বলা হয়। যেহেতু প্রশ্নের উত্তরের জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকে সেহেতু প্রশ্নের উত্তরেও তিনটি আঙ্গিক স্থান পেতে হবে। যেমনরাফিউলের আচরণে নাগরিকের কোন অধিকার খর্ব হয়েছে?
প্রশ্নের উত্তরে যা লেখা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:
#
খর্ব হওয়া অধিকারটি চিহ্নিত করা।
#
সামাজিক অধিকার ধারণাটি ব্যাখ্যা করা।
#
পাঠ্যবইয়ের তথ্যের সঙ্গে দৃশ্যকল্পের যোগসূত্র স্থাপন করা।
তিনটির সমাহার ঘটলে প্রশ্নে একজন শিক্ষার্থী অবশ্যই পূর্ণ নম্বর পাবে। অংশের জন্য নম্বর হচ্ছে ৪। এই চার নম্বরের জন্য ৪টি আঙ্গিক বিবেচনায় রেখে উত্তর লিখতে হয়। যেমননাগরিক হিসেবে শাফিউলের আচরণ মূল্যায়ন করো প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে যে দিকগুলো স্থান পেয়েছে তা হচ্ছে
i)
বুদ্ধিমত্তা, আত্মসংযম বিবেক এই তিনটি গুণ চিহ্নিত করা।
ii)
কীভাবে শাফিউল এই তিনটি গুণের অধিকারী তা দেখানো।
iii)
তিনটি গুণের বর্ণনা।
iv)
তিনটি গুণের সমাহারে একটা সমগ্রকে রূপ দেওয়া তথা সুনাগরিকে পর্যবসিত করা।
কোনো শিক্ষার্থী যদি শাফিউলের মধ্যে তিনটি গুণ সঠিকভাবে খুঁজে দিতে পারে এবং প্রতিটি গুণের বর্ণনা এবং শাফিউল কীভাবে ওই সব গুণের অধিকারী তা বলে থেমে যায়, কোনোভাবেই শাফিউলকে সুনাগরিক আখ্যায়িত না করে, তাহলে পূর্ণ নম্বর মানে না পেয়ে নম্বর পাবে।
#
প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ধারাবাহিকভাবে লিখতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের , এবং প্রশ্নের নম্বরই বলে দেয় যে, ওই সব অংশের উত্তরের মধ্যে একাধিক আঙ্গিক আছে। এসব আঙ্গিক বিবেচনায় এনে ঘটনা পরম্পরায় উত্তর লিখে যেতে হবে, যেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রশ্নের উত্তর কতগুলো ধাপে সজ্জিত হয়ে সম্পন্ন হয়েছে, এমনটি বোঝা যায়। এর উদাহরণ হিসেবে ওপরে লিখিত সৃজনশীল প্রশ্নের এবং অংশের উত্তর দেখা যেতে পারে

শিক্ষকদের যা করতে হবে
অংশগ্রহণমূলক পাঠদান:
একটি শ্রেণীতে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক পাঠদান (ছবি-) করবেন। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক পাঠদানের ওপর। এর অংশ হিসেবে শিক্ষক নানা কৌশল ব্যবহার (ছবি-)করতে পারেন। যেমনশিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠদান, উন্মুক্ত আলোচনা, উপস্থাপন, বিতর্ক অনুষ্ঠান, মাথা খাটানো, প্রশ্নোত্তর পর্ব ইত্যাদি।
শিক্ষক না হয়ে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন:
একজন শিক্ষকের কাজ হবে শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা কোনো নির্দিষ্ট পাঠ কীভাবে শিখবে এবং কীভাবে পড়বে তার পদ্ধতি ঠিক করে দেওয়া। যেমনআজ শ্রেণীতে নির্দিষ্ট পাঠ শেখার জন্য কোন কাজটি শিক্ষার্থীরা করবে তা শিক্ষক নির্ধারণ করে দেবেন এবং ওই কাজ সম্পাদনে সহায়ক উপায়-উপকরণ প্রদর্শন জোগান দেবেন। শিক্ষার্থীদের কাজের মাধ্যমে শিক্ষণকে (ছবি-) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন। আর তা সম্ভব হলে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পূর্ণাঙ্গভাবে লেখার যোগ্যতা অর্জন করবে।
শ্রেণীর পঠন-পাঠন কাজে বৈচিত্র্য আনয়ন:
শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের (ছবি-) কখনো একক কাজ, কখনো দলীয় কাজ, কখনো উপস্থাপন, কখনো ছবি, চার্ট মানচিত্র ইত্যাদি প্রদর্শন করে পঠন-পাঠনের (ছবি-) কাজে অবশ্যই বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে হবে। এরূপ বৈচিত্র্য সৃষ্টিই কিন্তু সৃজনশীলতার অংশ।
প্রশ্ন প্রণয়ন:
সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে দক্ষতা রাতারাতি অর্জিত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন একটা বড় ইচ্ছাশক্তি, পাঠ্যপুস্তকের সব বিষয়বস্তু আয়ত্ত করা, পাঠদানের বিষয় বা বিষয়সমূহে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান, বিষয়সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স বই, পত্রপত্রিকা বা জার্নাল ইত্যাদি অধ্যয়ন করার আবশ্যকতা আছে। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে শিক্ষক যদি সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে দক্ষ না হন, তবে শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরদানে প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হবেন। শিক্ষককে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নের দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরপত্র মূল্যায়নে সমর্থ হতে হবে। ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ না পেলে প্রশিক্ষিত সহকর্মীদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
শিক্ষার্থীদের দিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নের অনুশীলন:
শিক্ষক শ্রেণীর কাজের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের দিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির কাজ করাতে পারেন। শিক্ষার্থীদের তৈরি করা প্রশ্ন নিয়ে শ্রেণীতে আলোচনা হতে পারে। আলোচনার ভিত্তিতে ভুলগুলো চিহ্নিত করে তা সংশোধন করা যেতে পারে। তাতে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
বাস্তব ঘটনাকে শ্রেণীর কাজে সম্পর্কিত করা:
পাঠ্যবইয়ের তত্ত্ব, তথ্য, সূত্র, বিধি, পদ্ধতি ইত্যাদি আলোচনায় বাস্তব ঘটনাকে টেনে আনতে হবে। আর তাহলে শিক্ষার্থী নতুন পরিস্থিতিতে তাদের লব্ধজ্ঞান প্রয়োগ করতে সমর্থ হবে।
মনে রাখা দরকার, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি সাফল্যমণ্ডিত করা শিক্ষকদের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, পদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তর লেখা অপেক্ষা প্রশ্নের উত্তরদানে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা অনেক কঠিন অঙ্গীকার পূরণের কাজ। কাজটি করতে গিয়ে বাণিজ্যিক লাভ মাথায় রাখলে বিপত্তি ঘটবে।
 
অভিভাকদের যা করতে হবেn
সন্তানকে গাইড-নোট মুখস্থ করা থেকে বিরত রাখবেন:
বিগত দুটি এসএসসি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বলছি আপনারা নিজ নিজ সন্তানদের গাইড-নোট মুখস্থ করা থেকে বিরত রাখবেন।
নিয়মিত উপস্থিতি:
বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি শ্রেণীর পাঠগ্রহণে উৎসাহ দান করা। সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরদানে নিজেকে প্রস্তুত করার জায়গা শ্রেণীকক্ষ, কোনোভাবে কোচিং সেন্টার নয়। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারে যাঁরা পাঠদান করেন, তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির ওপর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নেই। কেবল মাত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ উপযুক্ত প্রস্তুতি আছে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী সঠিক শুদ্ধভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন এর উত্তর সম্পর্কে বুঝতে পারবে।
পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রীয় জীবনের সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সন্তানদের সঙ্গে আলোচনা:
এর জন্য প্রথমে দরকার সন্তানদের সময় দেওয়া। সময় দেওয়াটা আবার এমন নয় যে অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থেকে সন্তানকে স্কুলের সব পাঠ মুখস্থ করানো। অবশ্যই কোনো কোনো তথ্য বা তত্ত্ব মনে রাখতে হবে। তবে মনে রাখাটা তখনই দীর্ঘস্থায়ী হবে, যখন তা শিক্ষার্থী বুঝে শিখবে। সম্ভব হলে শিক্ষার্থীর পাঠের কোনো বিষয়ের সঙ্গে বাস্তবের কোনো ঘটনার মিল বা সম্পর্ক থাকলে তা গল্পাকারে সন্তানদের বলা যেতে পারে। এতে করে সে খুব সহজেই আয়ত্ব করতে পারবে।
সন্তানদের শিখন অগ্রগতির খোঁজখবর রাখা:
একজন দায়িত্বশীল অভিভাবককে প্রতিদিন সম্ভব না হলে বিদ্যালয়ের অনুশীলনীমূলক পরীক্ষা শ্রেণীর কাজে অগ্রগতির খোঁজ রাখতে হবে। তার ফলে শিক্ষার্থী তার প্রতিটি কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হবে

No comments:

Post a Comment

Composition on Female Education in Bangladesh for Examination

  Female Education in Bangladesh Education is a light to which everybody has the equal right. Education is the backbone of a nation. The ...